আমি মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে ভালবাসি ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জিয়াউর রহমান এসেছিলেন আকস্মিকভাবে। কিন্তু তার আগমন ছিল অবশ্যম্ভাবী। নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করতে সময়ের চাহিদা এবং দেশের দাবিতে তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন। কোনো চোরাগোপ্তা পথে নয়, রাতের অন্ধকারে ষড়যন্ত্র করে নয়, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর নতুন ভোরের আলোয় সর্বস্তরের লাখো কোটি মানুষ এবং দেশপ্রেমিক সৈনিকদের মুহুর্মুহু শ্লোগান আর পুষ্পবর্ষণের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের অভিষেক হয়েছিল।
দেশের নেতৃত্ব চলে এসেছিল তার হাতে।
জিয়াউর রহমান যখন নেতৃত্বে এলেন তখন দেশে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাকশাল নামের একটি দল গঠন করে আর সব দল নিষিদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে দেশে একদলের শাসন কায়েম করা হয়েছিল। গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছিল। সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছিল।
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো খর্ব করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত করে তার হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল সর্বময় ক্ষমতা। ভোট ছাড়াই সরকারের মেয়াদ তিন বছরের জন্য বাড়িয়ে নেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘদিন সংগ্রাম করা সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমান আবির্ভূত হয়েছিলেন একদলীয় বাকশালী স্বৈরশাসন ব্যবস্থার জনক হিসেবে।
এসব তৎপরতা ছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণবিরোধী।
সদ্য স্বাধীন দেশের জনগণ এতে প্রবলভাবে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ হয়েছিল। এই সুযোগে শেখ মুজিবের প্রতিদ্বন্দ্বীরা তারই একজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী খোন্দকার মোশতাক আহমাদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি অনুগত অংশকে ব্যবহার করে রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেন। খোন্দকার মোশতাক বাকশালও নিষিদ্ধ করে দেন। কিন্তু বাংলাদেশের তখনকার বিরাজমান পরিস্থিতিতে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে সঙ্কট মোচন করা খোন্দকার মোশতাকের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তিনিও পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং আরেকটি গ্রুপ ক্ষমতা দখলে নিয়ে দেশজুড়ে মার্শাল ল' জারি করে।
এসব চক্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধেই ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক সংহতির মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সেই পরিবর্তন ছিল স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পক্ষে, মানুষের স্বাধীনতা ও অধিকারের পক্ষে, রাজনীতির পক্ষে, উন্নয়ন-উৎপাদনের পক্ষে। সেই পরিবর্তন ছিল সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পক্ষে। সেই পরিবর্তনের নেতৃত্বে ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান ঘোষক জিয়াউর রহমান। এই পরিবর্তনের জন্য তিনি রাজনীতি ফিরিয়ে আনেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন, রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ করে দেন।
মানুষের মৌলিক অধিকার, বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। এই পরিবর্তনের রাজনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি নিজে গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মুসলিম লীগ নেতৃত্ব দিয়েছিল, কিন্তু পরে তারা যুগের চাহিদা মেটাতে পারেনি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পুরোভাগে আওয়ামী লীগ ছিল। কিন্তু পরে তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।
সেই ব্যর্থতার পটভূমিতেই বিএনপি'র জন্ম, একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী রাজনীতি করার অঙ্গীকারে। সঙ্কটে, শান্তিতে, সংগ্রামে এ দল গত ৩১ বছরে নতুন রাজনীতির ধারা তৈরি করেছে। অনেক অভিজ্ঞতায় এ দল শীলিত। অনেক শহীদের রক্তে আমাদের প্রতিজ্ঞা অটল হয়েছে। দ্বন্দ্ব-বিভাজন-সঙ্ঘাতের বিপরীতে আমরা জাতীয় ঐক্যের পতাকা উড্ডীন রেখে চলেছিল।
আমরা ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী-পেশার মানুষ, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ, পাহাড় ও সমতলের মানুষ মিলে এক অখণ্ড জাতিসত্তা গড়ে তুলেছি। ধর্মীয় মূল্যবোধ আমাদের ধমনীতে সঞ্জীবিত রেখে আমরা সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দাঁড়াব। বিশ্ব পরিসরে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সবার দিকে বাড়িয়ে দেবো বন্ধুত্বের হাত, কিন্তু কোনো দেশের অধীনতামূলক মিত্রতাকে আমরা কবুল করব না। জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষায় যেকোনো মূল্যে আমরা থাকব অনড়, অটল। ডান কিংবা বামপন্থী আমরা নই।
আমাদের ডানে যাদের অবস্থান তারা ডানপন্থী, আমাদের বামে যাদের অবস্থান তারা বামপন্থী। আমাদের অবস্থান ডানপন্থীর বামে এবং বামপন্থীর ডানে। আমাদের অবস্থান কেন্দ্রে এবং এ দেশের রাজনীতির কেন্দ্র আমরাই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলই এ দেশের মূলধারা। বিএনপিই বাংলাদেশের জাতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।