সবাইকে সাথে নিয়ে এগুতে চাই।
প্রত্যেক মুসলমানের এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, ইসলামের মূল বিষয় সমূহ থেকে যাকাত একটি অন্যতম বিষয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর (বাকারা ৪৩)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, তাদের সম্পদ হতে যাকাত গ্রহণ করুন। যাতে আপনি তাদেরকে গুনাহমুক্ত ও পবিত্র করতে পারেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় এ ব্যাপারে আপনার দোয়া তাদের শান্তি ও স্বস্থি দান করবে।
আর আল্লাহ তো সর্বশ্রেতা ও সর্বজ্ঞ। (তওবা ১০৩)
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত- ১. এ কথা স্বাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসুল। ২. নামায কায়েম করা, ৩. যাকাত প্রদান করা, ৪. বাইতুল্লাহর হজ্জ্ব করা এবং ৫. রমযানের রোযা রাখা। (বুখারী ও মুসলিম)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) মুআয (রাঃ) কে ইয়ামনে পাঠান এবং বলেন, তুমি ইয়ামনবাসীদেরকে এ কথা সাক্ষ্য দেয়ার প্রতি দাওয়াত দাও যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ এবং আমি তাঁর রাসূল। যদি তারা এ ব্যাপারে তোমার আনুগত্য করে (অর্থাৎ দাওয়াত গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায়) তাহলে তাদের কে জানিয়ে দাও যে আল্লাহ রাত দিনে তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন।
এ ব্যাপারেও যদি তারা তোমার আনুগত্য করে তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন। যা তাদের ধনীদের থেকে নিয়ে দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহ তায়ালা কয়েকটি কারণে মূলত যাকাত ফরয করেছেন। যা হচ্ছে ১. নফসকে কৃপনতা ও স্বার্থপরতা হতে পবিত্র করা ২. বান্দাহকে গুনাহমুক্ত করা ৩. নিঃস্ব ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি সহানুভুতি ও সমবেদনা প্রকাশ করা ৪. সমাজের সাধারণ কল্যাণ সাধন করা ৫. সম্পদকে হালাল ও পবিত্র করা। কাজেই যে ব্যক্তি যাকাত দিতে অস্বীকার করবে, সে কুফুরীতেই লিপ্ত হয়ে যাবে এবং যে ব্যক্তি কৃপনতা করে যাকাত আদায় করা থেকে বিরত থাকে, তার কাছ থেকে জোর করে তা আদায় করতে হবে এবং যাকাত না দিয়ে আল্লাহর আইনের অবমাননা করার জন্য তাকে শাস্তি দিতে হবে।
যদি কেউ যাকাত অস্বীকার করে যুদ্ধ ঘোষণা করে তবে তার বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। যতক্ষণ না সে আল্লাহর আদেশের সামনে অবনত মস্তকে আত্মসমর্পন করে।
যাকাত না দেওয়ার পরিণাম : আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা স্বর্ণ রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না (অর্থাৎ ঠিক ভাবে যাকাত দেয় না) তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও। যে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং এর দ্বারা তাদের কপাল পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠ দেশে দাগ (ছ্যাকা) দেওয়া হবে সেদিন বলা হবে এটা ঐ জিনিস যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করে রাখতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করে ছিলে তার স্বাদ গ্রহণ কর।
(তওবা ৩৪-৩৫)
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা কোন ব্যক্তিকে সম্পদ দান করার পর যদি সে যাকাত প্রদান করা হতে বিরত থাকে তা হলে কেয়ামতের দিন তার ঐ সম্পদকে তার জন্য একটি লোমহীন বিষাক্ত সাপে পরিণত করা হবে। যার চক্ষুর উপর দুইটি কালো দাগ থাকবে, কেয়ামতের দিন সাপটি তাকে পেছিয়ে ধরে দর্শন করতে থাকবে এবং বলবে আমি তোমার সম্পদ আমি তোমার সংরক্ষিত অর্থ অতপর রাসূল (সাঃ) সূরা আলে ইমরানের ১৮০নং আয়াত পাঠ করেন অর্থাৎ যারা আল্লাহ তায়ালার দেয়া (ফজলে) সম্পদে কৃপনতা করে, তারা যেন মনে না করে যে ইহা তাদের জন্য উত্তম বরং ইহা তাদের জন্য মন্দ অতি শীঘ্রই কিয়ামতের দিন তাদের গলায় পেচিয়ে দেয়া হবে যা নিয়ে কৃপনতা করেছে (বুখারী)
আবু বকর (রাঃ) যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন আল্লাহর কসম, তারা যদি আমাকে ঐ উটের রশি দিতে ও অস্বীকার করে যার যাকাত তারা রাসূল (সাঃ) এর কাছে দিতো তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে যাকাত অস্বীকার করার কারণে যুদ্ধ ঘোষণা করবো। (বুখারী ও মুসলিম)
যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্ত :[/sb
যাকাত ওয়াজিব হওয়ার কতিপয় শর্ত রয়েছে আর তা- হলো;
১. ব্যক্তিকে মুসলমান ও স্বাধীন হতে হবে
২. নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে
৩. এক বছর অতিক্রান্ত হতে হবে।
স্বর্ণ রৌপ্য ও নগদ টাকা-পয়সার যাকাত :
১.স্বর্ণের নেসাব হচ্ছে ২০ মিছকাল বর্তমান হিসাবে সাড়ে সাত ভরি অর্থাৎ ৮৫ গ্রাম।
২.রৌপ্যের নেসাব হচ্ছে দুইশত দেরহাম বর্তমান হিসাবে ৫২ তোলা অতএব কারো নিকট যদি ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ বা ৫২ তোলা রৌপ্য অথবা দুটোর মধ্যে থেকে যে কোন একটার সমপরিমাণ নগদ অর্থ (টাকা-পয়সা) এক বৎসর পর্যন্ত জমা থাকে এবং সে ঋণগ্রস্তও না হয় তাহলে তার উপর শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে অর্থাৎ চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দেয়া ওয়াজিব, নিসাবের চেয়ে কম থাকলে যাকাত ওয়াজিব হবে না।
যাকাত বন্টনের খাত :
আল্লাহ তায়ালা কুরআন করীমে যাকাত বন্টনের খাত বর্ণনা করেছেন আর এর সংখ্যা ৮টি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয় সাদাকাত (যাকাত) শুধু ১-অভাবীদের জন্য ২- নিঃসম্বল ব্যক্তিদের জন্য ৩- যাকাত উসুলকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৪- কোন অমুসলিমকে ইসলামের প্রতি ভালবাসা পোষণ করে ইসলাম গ্রহণে অনুপ্রাণিত করার জন্য। ৫- দাসদের দাসত্ব মুক্ত করণে ৬- ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ করার জন্য। ৭. আল্লাহর রাস্তায় (যারা লড়াই সংগ্রাম করে জেহাদ করে) ৮- (সাময়িক অভাবে পতিত) মুসাফিরদের (তওবা ৬০) আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে যাকাত প্রদান করার তৌফিক দান করুন।
যাকাতুল ফিতর বা ফেতরা
ইবনু উমরের (রা) বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী ছোট, বড়, নারী, পুরুষ, স্বাধীন, দাস সকল মুসলমানের জন্য যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। তিনি বলেন: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বাধীন, দাস, পুরুষ, নারী, ছোট, বড় সকল মুসলমানের উপর এক ছা’ পরিমাণ খেজুর বা যব যাকাতুল ফিতর প্রদান করা ফরয করেছেন। ” (বুখারী: হাদীস নং- ১৫০৪, মুসলিম: হাদীস নং- ৯৮৪)
আবু সাইদ খুদুরী (রা) বলেন: “আমরা যাকাতুল ফিতর হিসেবে এক ছা’ পরিমাণ খাবার, বা এক ছা' পরিমাণ যব অথবা এক ছা’ পরিমাণ কিশমিশ প্রদান করতাম। ” (বুখারী: হাদীস নং- ১৫০৬, মুসলিম: হাদীস নং- ৯৮৫)
ছা’ বলতে মদীনাবাসীর ছা' বুঝতে হবে; ইবনু উমর (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “ওজন করার সময় মক্কার ওজন ব্যবহৃত হবে; পরিমাপ যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে মদীনাবাসীর পরিমাপ-যন্ত্র ব্যবহৃত হবে। ” (আবু দাউদ: হাদীস নং- ৩৩৪০) বর্তমান সময়ে এর পরিমাণ দাড়ায় ৩ কেজির মত।
এক ছা' সমান চার মুদ।
এটি যাকাত প্রদানের ৮টি খাতের মধ্য থেকে শুধুমাত্র মিসকিনদের জন্য ব্যয় করতে হবে। এ সম্পর্কে ইবনু আব্বাসের (রা) হাদীস, তিনি বলেন: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযাদারের থেকে ঘটে যাওয়া অশ্লীল ও বেহুদা কথা-কাজের পরিচ্ছন্নতা ও মিসকিনদের আহার স্বরূপ যাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের আগে এটা আদায় করবে সেটি মাকবুল যাকাতে ফিতর হিসেবে গৃহীত হবে। আর যে ব্যক্তি এটি নামাযের পরে আদায় করবে সেটি সাদকাহ হিসেবে গণ্য হবে।
” (আবু দাউদ: হাদীস নং- ১৬০৯)
কোন কোন আলিম বলেন: মিসকিনদের সাথে সাথে যাকাত ব্যয়ের বাকী খাতগুলোতেও এটি ব্যয় করা যাবে। যাকাত ব্যয়ের বাকী খাতগুলো হল: ফকির, যাদের মন জয় করা প্রয়োজন, ঋণগ্রস্ত, ক্রীতদাস মুক্তির জন্য, আল্লাহর পথে সংগ্রামের জন্য এবং মুসাফিরের জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।