আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডঃ ইউনুছ, ফজলে হাসান আবেদ, সাইখ সিরাজ ও একজন আলোকিত মানুষ।

http://www.facebook.com/Kobitar.Khata

নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুস এবার আমেরিকার সর্বোচ্চ বেসামরীক পুরস্কার লাভ করেছেন। শুনে মনটা আনন্দে ভরে গেল। আমাদের দেশের একজন সন্তান আজ সারা পৃথিবীর অনেক মানুষের কাছে আইকন, ভাবতেই মনে শিহরন জাগে। যদিও নিজের দেশের অনেক লোকের কাছেই তার এই পুরস্কারপ্রাপ্তি প্রশ্নবিদ্ধ। এই ব্লগ সাইটেই তাঁর বিরুদ্ধে অনেক লেখা হয়েছে।

অনেকেই মনে করেন তিনি দারিদ্রবিমোচনে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছেন, অনেকেই মনে করেন এটা শুধুই আই ওয়াশ, আবার অনেকে মনে করেন তিনি গরিবের রক্ত চুষে খান। আমি কারো কথাই বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করতে পারতাম না। কারণ আমার পরিচিত কেউ গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋন গ্রহীতা ছিল না যে তার থেকে প্র্যাকটিক্যালি ক্ষুদ্রঋন এর ব্যাপারটা ভালো করে বুঝবো। একদিন আমার বাড়ির দারোয়ানের সাথে কথা হচ্ছিল। সে তাঁর দুঃখ কষ্টের কথা শোনাচ্ছিল।

কথায় কথায় সে জানাল যে তার চল্লিশ হাজার টাকা গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে ঋণ আছে। সেই ঋণ শোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এই স্বল্প বেতনের চাকরি দিয়ে সংসার চালাবে না ঋণ শোধ করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। তখন আমি বললাম যে, তাহলে তো মানুষের কাছে যা শুনি তাইতো সত্যি। গ্রামীণ ব্যাংক গরিবের রক্ত চুষে খায়।

এই কথা বলতে দেরি সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতে দেরী নাই। সে বলল গ্রামীনের বিরুদ্ধে কথা বলবেন না। আমিতো অবাক! যে লোক একটু আগে গ্রামীনের ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে চিন্তিত ছিল সেই এখন গ্রামীনের পক্ষে সোচ্চার। সে তখন আমাকে বলল যে আপনি জানেন, গ্রামীণ ব্যাংক আছে বলেই আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, গ্রামীণ ব্যাংক যদি না থাকত শুধু আমি না, আমার পরিবারই দুনিয়ার বুক থেকে ভেনিস হয়ে যেতাম। গ্রামীনের ঋণ ছিল বলেই আমি আমার বোনটাকে বিয়ে দিতে পেরেছিলাম, আমি যখন অসুস্থ হয়েছি তখন চিকিৎসা করাতে পেরেছিলাম, বাবার চা দোকানটা ধরে রাখতে পেরেছিলাম।

তাহলে আমি কোন মুখে গ্রামীণের বিরুদ্ধে কথা বলবো? যে চল্লিশ হাজার টাকা আমি গ্রামীণ থেকে পেয়েছিলাম সেটা কি আপনি দিতেন বা আপনাদের কোন বড়লোকি ব্যাংক থেকে পেতাম? শুনে চিন্তা করে দেখলাম আসলেইতো ঠিক। এই অসহায় মানুষগুলোকে কে ঋণ দিত? কিন্তু ইদানীং নতুন করে আমার মনে আরেকটি প্রশ্নে জেগেছে। ডঃ ইউনুছ ও গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখার জন্য সারা পৃথিবীতে আজ আইকন। কিন্তু আসলেই কি দারিদ্র বিমোচন হচ্ছে? যদি হয় সেটা কতটুকু? এই যে আমার দারোয়ান, সে গ্রামীণ থেকে তার কষ্টের সময় ঋণ পেয়েছে। সেটাদিয়ে সে হয়তো সাময়িক ভাবে উপকৃত হয়েছে।

কিন্তু তার দারিদ্র বিমোচন হয়েছে? কিংবা আদো কি তার দারিদ্রবিমোচন হবে? আমি জানি গ্রামীনের ঋণ নিয়ে এই দেশের লক্ষ লক্ষ গরীব দুঃখী মানুষ উপকৃত হচ্ছে কিন্তু সেটাকে কোন ভাবেই দারিদ্রবিমোচন বলা যাবে না। এত ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে আসলেই দারিদ্র বিমোচন করা সম্ভব নয়। এই কারণেই যখন বারাক ওবামার মুখে ডঃ ইউনুস দারিদ্রবিমোচনে অবদানের জন্য প্রশংসা করে বক্তব্য দিতে দেখি তখন মনের মধ্যে খচ্ খচ্ করে উঠে। আমার ইচ্ছে করে তাদের বক্তব্যকে শুধ্রে দিতে, শব্দটি আসলে হবে দরিদ্রদের সহায়তা করার জন্য। দারিদ্রবিমোচনের জন্য নয়।

আর ইউনুস নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটনের লবিং এর কথাও অনেকেই বলে। ক্লিনটন ও হিলারি ইউনুস কলেজ জীবনের বন্ধু। সেটা করো অজানা নয়। তারা যে ইউনুস জন্য লবিং করেছে সেটাও কোন গোপন বিষয় নয়। তাই বলে আমি ইউনুসের প্রাপ্তিকে মোটেই ছোট করে দেখছিনা।

ইউনুসের যোগ্যতা ছিল বলেই নোবেল পেয়েছে। আমার কষ্টটা হলো ইউনুসের মতো আরো যোগ্য লোকও আছে, হয়তো তারা কখনো নোবেল পাবেনা কারণ তাদের জন্য লবিং করার মতো কেউ নাই। যে ক্ষুদ্রঋনের জন্য ইউনুস নোবেল পেল আমি যতদূর জানি (আমার জানায় ভুলও হতে পারে) সেই ক্ষুদ্রঋন কার্যক্রম তাঁরো আগে শুরু করেছিলেন ডঃ ফজলে হাসান আবেদ। ক্ষুদ্র ঋণের ব্যপারে তাঁর অবদান ইউনুসের থেকে কোন অংশে কম নয় বরং বেশী। কিন্তু তার কপালে বড় কোন বিদেশী স্বীকৃতি জোটেনি।

হয়তো জোবেও না। আরেক জন মানুষের কথা না বললেই নয়। তিনি হলেন আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, আলোর ফেরিওয়ালা অধ্যাপক আব্দুল্যাহ্ আবু সায়ীদ। আমি জানিনা তাঁর মতো কয়জন মানুষ এই পৃথিবীতে আছেন যারা আলোকিত মানুষ গড়ার জন্য সারাজীবন খেটেছেন বা খাটছেন, আমি জানিনা মানুষের দরোজায় জ্ঞানের বাহন নিয়ে আর কোন দেশে কেউ গিয়েছে কি না। তিনি এবং তার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র পাড়ায় পাড়ায় বই পৌঁছে দিচ্ছেন, বইপড়া কর্মসূচির মতো অভিনব কর্মসূচি ছাড়াও তাঁর আরো অনেক অবদান এই জাতীর জন্য।

কিন্তু এই অবদানের জন্য আবু সায়ীদ স্যার কি নোবেল পাবেন না? কেন পাবেন না? আন্তর্জাতীক পর্যায়ে তার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ লবিং করার মতো লোক নাই বলে? বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের জন্য সাইখ সিরাজের অবদান কতটুকু আজ দেশের সকল মানুষই তা জানেন। সাইখ সিরাজ কি নোবেল পুরুষ্কার পাবেন না? নোবেল কমিটি কি ডঃ ফজলে হাসান আবেদ, অধ্যাপক আব্দুল্যাহ্ আবু সায়ীদ,সাইখ সিরাজদের অবদানের কথা জানেন? যদি না জানে তাহলে কেন জানে না? তাদের জন্য লবিং করার লোক নাই বলে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।