ঘটনাটি আমার কলেজের এক ছোট ভাইয়ের (খালিদ), আমি শুধু শেয়ার করলাম।
কাল সন্ধ্যায় ৩৬ নাম্বার বাসে করে আজিমপুর যাচ্ছিলাম। ঢাকা কলেজের সামনে জ্যামে থাকা অবস্থায় হঠাত করে ২টি ছেলে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারের পেছনের ছোট সিটে বসা দুটি মেয়েকে হাত ধরে টেনে সরিয়ে ড্রাইভারকে মারা শুরু করে। কারণ, সেই ড্রাইভার নাকি গত মাসে ছেলেটার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে(!!) ভয়ে মেয়ে দুটি চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলে "শাহবাগের গণজাগরণে" উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের বাসের যাত্রীরা সব চিৎকার আর গালি দিয়ে ছেলে দুটিকে নেমে যেতে বলে। চিৎকার শুনে গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আরও ৩-৪জন ছেলে বাসের দরজায় এসে সবাইকে গালি দিয়ে নামতে বলে।
৪-৫জন ছেলের এই রূপ দেখে যাত্রীদের "গণজাগরণ" মূহুর্তেই উবে যায়। যে যেভাবে পারে, দরজা দিয়ে আর জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। শুধু আমিসহ আর ৫-৬জন গাড়িতে ছিলাম। একেকজনকে তারা এক এক করে কলার ধরে নামাচ্ছে আর জিজ্ঞেস করছে "ওই হারামী, তুই আমারে গালি দিছস??" প্রথম ৩জন "না" উত্তর দেয়ায় ছেড়ে দেয়। ঝামেলা দেখে ছুটে আসা ২জন পুলিশ সদস্য বাধা দিতে গেলে তাদেরকেও ওরা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
আমার সামনে ছিলো ৩০-৩২ বছরের একজন। তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বললো "আমি ত...োমাদের কলেজেরই বড় ভাই"। এটা শুনে ছেলেগুলো তাকে কষে চড় মারা শুরু করলো আর বলতে থাকলো, "তাইলে তুই গালি দিছস"। এরপরে আমার পালা। সামনের লোকটাকে চড় মারার সময়ই সাহস করে বললাম, "দেখেন, যারা গালি দিছে সবাই জানালা আর দরজা দিয়ে লাফ দিয়ে পালিয়ে গেছে।
আমরা গালি দিলে সাহস করে ভেতরে বসে থাকতাম না" (যদিও চিৎকার আমিও করেছিলাম)। এটা শুনে ছেলেগুলো সামনের লোকটাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। যার যার সিটে বসে পড়লাম।
মার খাওয়া লোকটা পাশে সিটে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, "ভাই, খুব লজ্জা লাগছে। এভাবে সবার সামনে চড় খেলাম দেখে নয়, লজ্জা লাগছে এটা ভেবে যে আমি এই কলেজেরই ছাত্র"।
লোকটাকে কিছু বলে স্বান্তনা দেবার মত ভাষা আমার ছিলো না। কোথায় গেলো আমাদের সেই গণজাগরণ?? ৩০-৪০জন লোক পারলো না ৪-৫টা ছেলেকে মোকাবেলা করতে!! নাকি বিপদ থেকে দূরে থেকে নিরাপদে আন্দলোন করার নামই গণজাগরণ?? দেখা যাবে বাসের এই লোকগুলোই হয়ত শাহবাগে বসে "রাজাকারের ফাঁসি চাই" বলে চিৎকার করছে, অথচ ৪-৫টা ছেলের ভয়ে সব লেজ গুটিয়ে পালালো!! আর আমি কিনা সাহস করে বসে থেকে আরেকটু হলেই তাদের কাছে মার খেতে যাচ্ছিলাম!!
যে ঢাকা কলেজ এককালে মুহম্মদ জাফর ইকবাল, হুমায়ূন আহমেদ, আবুল কালাম শামসুদ্দীনের মত নক্ষত্রের জন্ম দিয়েছে, সেই ঢাকা কলেজ এখন জন্ম দিচ্ছে কিছু "শুওরের বাচ্চাকে"। যারা ঢাকা কলেজে পড়েন বা পড়ছেন, তারা জানেন কথাটা কষ্টকর বা লজ্জাষ্কর হলেও কতখানি সত্যি।
শাহবাগের গণজাগরণ স্রষ্টাদের বলছি, "তারুণের এই শক্তি প্রদর্শন শুধু শাহবাগের পুলিশ পরিবেষ্টিত এলাকায় প্রদর্শন না করে তার বাইরেও প্রয়োগ করতে শিখুন"
যে পুলিশ সদস্য ২জন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখলো তাদের বলছি, "ঘরে গিয়ে বউয়ের শাড়ি ব্লাউজ পড়ে হাতে চুড়ি পড়ে বসে থাকুন"
আর সেই কতিপয় ছাত্রদের বলছি, "তোমাদের মা'তো দূরের কথা, রাস্তার কুকুরও তোমাদের মাতৃত্ব দাবী করতে আস্বীকার জানাবে"
বিঃদ্রঃ এই লেখা কোনোভাবেই শাহবাগের গণআন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের হেয় করার উদ্দেশ্য লেখা নয়, বরং ঢাকা কলেজের কতিপয় ছাত্রদের দৌরাত্মকে হেয় করে লেখা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।