আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শব্দরাজ্যে অভিযান (২৬): Narcissism !

শ্রদ্ধা আর মমতাই তোমাকে জয়ী করতে পারে; তুমি তোমার জ্ঞান প্রয়োগ কর।
সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। গ্রীসের বন পাহাড়ে ঘুরে বেড়াত ইকো (Echo) নামের এক পরী (Nymph)। একসময় সে ছিল দেবীরাণী জুনোর (Juno) সহচরী, বাস করত ওলিম্পাস পর্বতের দেবালয়ে (abode of gods)। তার চেহারা ছিল ধারালো সুন্দর, কিন্তু সেই সাথে ক্ষুরধার একটি কণ্ঠও ছিল তার।

কথা বলতে খুব ভালোবাসত সে, যেকোনো ব্যাপারে তার কথাটিই ছিল শেষ কথা। তার আচরণে বিরক্ত হয়ে জুনো একদিন তাকে দেবালয় থেকে বের করে দিল, সাথে অভিশাপ: "নিজ থেকে আর কোনো কথা বলতে পারবে না তুমি, কেউ কথা বললে শুধু শেষ কথাটি পুনরাবৃত্তি করতে পারবে। " বনবাদাড়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ায় ইকো। একদিন বনে শিকার করতে আসে আসে খুব সুন্দর চেহারার এক তরুণ, নাম নার্সিসাস (Narcissus)। প্রথম দেখায় ইকো ছেলেটি ভালোবেসে ফেলে আর তাকে অনুসরণ করতে থাকে।

তার খুব ইচ্ছে কোমল স্বরে নানা কথা বলে তরুণের সাথে, কিন্তু তার তো সে ক্ষমতা নেই! অস্থিরভাবে তাই সে অপেক্ষা করতে থাকে নার্সিসাস কোনো কথা বলে কি না, তাহলে সেও কিছু বলতে পারবে। শিকারী দল থেকে একদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তরুণ; চিৎকার করে উঠে সে, "কে, কে এখানে?" ইকো উত্তর দেয়, "এখানে। " নার্সিসাস কাউকে দেখতে না পেয়ে বলে, "সামনে আস। " "আস," ইকো প্রত্ত্যুত্তর করে। "কেন তুমি এড়িয়ে যাচ্ছ?" "এড়িয়ে যাচ্ছ।

" "সামনে আস, আমি তোমাকে দেখি। " "তোমাকে দেখি," বলে দু বাহু মেলে নার্সিসাসের দিকে ছুটে আসে ইকো। "না, না, আমাকে ছুঁয়ো না, তার চেয়ে মরে যাব," যুবক পিছু হটে। "মরে যাব। " "না, না, সরে যাও এক্ষুণি।

" বিষাদমাখা হৃদয়ে লজ্জারাঙা মুখ আর জলভরা চোখ ঢাকতে ইকো চলে যায় বৃক্ষের আড়ালে। তারপর থেকে তাকে আর কখনো খোলা জায়গায় দেখা যায়নি। সে বাস করতে থাকে গুহা আর পাহাড়ের ঢালে। কষ্টে তার দেহ ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়, হাড়গুলি পরিণত হয় রূক্ষ পাথরে। শুধু থেকে যায় তার স্বর, আর কথা বলার সেই অভ্যাসটা।

তোমরা যদি কখনো পাহাড় দেখতে যাও, চিৎকার করে দেখো, উত্তরে ইকোর গলা শুনতে পাবে। আর নার্সিসাস কেন এরকম আচরণ করল? আরো অনেকদিন আগে কিশোরী আরেক মেয়ে ভালোবেসেছিল নার্সিসাসকে। কিন্তু নার্সিসাস ছিল অসম্ভব সুন্দর, কাউকেই পাত্তা দিত না সে। তার সব চিন্তা ছিল শুধু নিজেকে নিয়ে। কিশোরী তাই অভিশাপ দেয়, কখনো যেন নার্সিসাসের জীবনে ভালোবাসা আসে, কিন্তু সেই ভালোবাসার প্রতিদান যেন না পায় সে।

প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের দেবী নেমেসিস (Nemesis) সে কথা শুনতে পায়। সেই বিজন বনে ছিল এক ঝর্ণা, রূপার মত ঝকঝকে স্বচ্ছ তার পানি। মেষপালকরা কখনো তাদের ভেড়ার পালগুলি তার উপর দিয়ে তাড়িয়ে নিত না, তার পাশে বিশ্রাম নিত না কোনো পাহাড়ী জন্তু, বৃক্ষরাও তার উপর কখনো ফেলত না কোনো শাখা বা পত্র। শুধু সবুজ সতেজ ঘাস জন্মাত তার ধারে, আর শিলা পাথর তাকে রক্ষা করত সূর্যের উত্তাপ থেকে। একদিন সেখানে আসে শিকারী এক তরুণ, ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত।

আঁজলা ভরে পানি পান করার সময় পানিতে সে দেখে নিজের ছায়া। কী সুন্দর জলের আত্মা, ভাবে সে। মুগ্ধ হয়ে দেখে ছায়া, প্রেমে পড়ে যায় নিজের। ছুঁতে যায় সে, কিন্তু হারিয়ে যায় জলের আত্মা। আবার ফিরে আসে একটু পরে, নতুন মুগ্ধতা নিয়ে।

তরুণ নার্সিসাস উঠতে পারে না সেখান থেকে। ভুলে যায় সে ক্ষুধা তৃষ্ণা, পাগলের মত বারবার ধরতে যায় আত্মাকে, কিন্তু প্রতিবারই তা হারিয়ে যায়। তাই আর ছোঁয় না সে, শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। দিনের পর দিন কেটে যায়, কষ্টে মথিত হয় তার হৃদ্য়, ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থাকে দেহ; তারপর একদিন পরিণত হয় সে এক বৃক্ষে। এখনো তোমরা ইকো পাহাড়ের কাছে গেলে ঝর্ণার পাশে দেখবে সুন্দর এক বৃক্ষ।

এত সুন্দর, দেখলেই চিনতে পারবে। আর যদি বসন্তকালে যাও, দেখবে ঝর্ণার গায়ে ঝরে ঝরে পড়ছে রূপালি ফুল। শুধু ফুলের হৃদয়টা সোনালী, কারণ সেখানে এখনও রয়ে গেছে অতৃপ্ত ভালোবাসা। ____________________________________________ ও হ্যাঁ, নার্সিসাস ফুলকে আমরা বলি নার্গিস। অনেকে ড্যাফোডিলও বলে।

আর কোনো মানুষ যদি পাগলের মত আত্মপ্রেমে মোহিত থাকে, এর নাম নার্সিসিজম (Narcissism)। [বেশ অনেকদিন আগে লিখেছিলাম এটি, কিন্তু তা নিছকই পুরাণের খাতিরে। এখন শব্দরাজ্যের অধীনে নিয়ে আসলাম--লেখক]
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.