...যেন এলিভেটরটা অনন্তকালের জন্যে বন্ধ হয়ে গেছে, আমি দাড়িয়ে আছি নিঃসঙ্গ ছাদের রেলিং ধরে।
অনেক দিন পর লিখছি। গত কয়েক মাস পরীক্ষা আর পড়াশোনার চাপে রাতগুলো অতীতচারী হতে পারেনি। তাহলে কি সব কান্না শুধু অতীতের জন্যই? কি জানি! ইদানিং আর মাঝরাতে কান্না পায় না। এখনতো প্রায় রাত তিনটা।
জানালায় ওয়াল মেটের মত রাতের আকাশ ঝুলে আছে। পরীক্ষা শেষ হয়েছে কয়েকদিন হলো। ব্যাস্ততা নেই বললেই চলে। হঠাৎ কেমন জানি থেমে গেলো সব কিছু। চেষ্টা করলাম পুরনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে।
কিন্তু মনে হচ্ছে কোথায় যেন সুর কেটে গেছে। অনেক দিনের বিরতিতে সম্পর্কগুলো শীতল হতে হতে বরফ হয়ে গেছে। একটু একটু করে একা হতে হতে একদম একা হয়ে গেছি। তবু সেই সব দিনের কথা কি আর ভোলা যায়? কিছু কথা যেন কখনই ভুলবো না,কিছু কথা মনেই পড়বে না। কিছু কথা হয়তো কাউকেই বলব না।
আর কিছু কথা হয়তো কখনো জানতেই পারবোনা। কিছু কিছু অনুভুতির যেন কোন মানে নেই। সেদিন যেন হঠাৎ করেই নিউমার্কেটের ভেতর হলমার্কের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল।
সময় যেখানে থেমে থাকার কথা ছিল,সেখানই থেমে আছে। এমন অদ্ভূত শূণ্যতার মাঝে মনে পড়ে নীপবৃক্ষটার কথা।
এটা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত বৃক্ষ। বর্ষা এলেই এটাতে অনেক ফুল ফুটতো। কোন এক সন্ধ্যায় খেয়াল করলাম গাছটাতে আর একটা পাতাও নেই।
কেমন জানি ফাঁকা লাগছিল। পাতার বাঁশির সুরের মত সরু একটা সুর ভেসে আসছিল।
বুঝলাম,নীপবৃক্ষটাকে পেছলে ফেলে,আকাশের চৌকাঠ পেরিয়ে কে যেন হারিয়ে গেলো। আমিও দিকভ্রান্ত হয়ে দিগন্তের কাছে এসে দাড়িয়ে রয়েছি। মাথার উপরে এক সিনথেটিক আকাশ, এই আকাশ থেকে আমার মুক্তি নেই।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি নীপবৃক্ষটা জেগে আছে। আমি নিঃশব্দে হেসে উঠি যাতে কেউ শুনতে না পায়।
একটা সময় ছিল মানুষের সংগ তখন অসহ্য লাগতো। নির্জন দুপুর গুলো কাটতো বিষন্ন বিকেলের অপেক্ষায়। তীব্র একটা যন্ত্রনা নিয়ে দেখতাম বেলা শেষের আলো। রাত্রিগুলো ঘিরে থাকতো নিঃসঙ্গতার শূন্য অনুভব। কিন্তু ইদানিং যেন কিছুতেই কিছু হয়না।
অন্যের আবেগের তীব্রতা দেখে অনুভব করতে পারছি নিজের আবেগ শূন্যতাকে। নির্জনতা কিংবা জনতা, কিছুতেই যেন কিছু যায় আসে না। নিজেকে নিয়েও যেমন কিছু ভাবিনা, তেমনই দেশ,জাতি নিয়ে ভাববারও আগ্রহ হারিয়েছি। টেবিল ঘড়িটার ব্যাটারী নেই অনেকদিন হলো। সেল ফোনের ঘড়িটাও সেট করা নেই।
হাতঘড়িরতো অভ্যাসই নেই। এখন এই মধ্যরাতে কয়টা বাজে দেখতে ইচ্ছে করলেও পাশের ঘরে যেতে হবে। এমন কেন হ্য়? যার ঘড়ি নেই তার কেন এতো সময় দেখতে ইচ্ছে করবে?
তবে মনে হচ্ছে,রাত অনেক হলো। কথায় আছে, ক্ষুধার্ত অন্যের খাওয়া দেখেও শান্তি পায়। বন্ধুদের সম্পর্কগুলোর খুঁনসুটি আর মান অভিমান গুলো দেখে আমারো খুব একটা খারাপ লাগে না।
সেদিন কলাবাগান থেকে হেঁটে হেঁটে বাসায় আসছিলাম। সন্ধ্যার অন্ধকার তেমন গাঢ় নয়। এই অন্ধকারটায় যেন একটু আলো মিশে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে সেই অন্ধকারের আলোয় দেখছিলাম লেকের পাশে শত শত প্রেমিক প্রেমিকার অর্থহীন প্রেমালাপ আর একটু একটু করে একা হয়ে যাওয়া কিছু প্রবীন মানুষের আরো কিছুদিন বাঁচার চেষ্টা।
রাতের অন্ধকারটা অনেক বেশি জমাট।
জোছনার রুপালি আলোও কিছু কিছু রাতের অন্ধকারকে মলিন করতে পারে না। এখন সেপ্টেম্বর মাস। তবুও গরম কম না। একটু একটু পর পর তৃষ্ণা পাচ্ছে। বেডের পাশেই ছোট্ট একটা ফ্রিজ।
কিন্তু পানির বোতল একটাও নেই। বিদ্যুৎ গেছে প্রায় আধঘন্টা হল। তাই পুরোনো এসির ভোঁতা শব্দটাও নেই। অবশ্য গরমে সেদ্ধ হচ্ছি। ঠান্ডা পানির খালি বোতল গুলো ফ্যানের বাতাসে গড়িয়ে যাচ্ছে।
কেমন যেন একটা জমাট গাঢ় স্তব্ধতা নিয়ে দিন গুলো কেটে যাচ্ছে। একাকী সময় কাটাতে যাচ্ছি ব্যাস্ত শপিং মলে কিংবা ছবির প্রদর্শনীতে। নিঃসঙ্গ এই দিন গুলোতে নতুন মুখ গুলোকেই বড্ড আপন মনে হয়।
বহুদিন অরন্য,সমুদ্র কিংবা পাহাড় দেখা হয়নি। নিজেকে মাঝে মাঝে যন্ত্রের মত লাগে।
বিজ্ঞানকল্পকাহিনীর হাইব্রিড মানুষগুলোর মতো হয়তো প্রতিটা মানুষেরই একটা যন্ত্র অংশ থাকে। বৃষ্টিতে ভিজে, রাতের জোছনা দেখেও তাই যন্ত্রটাকে বিকল করতে পারি না। পার্থিব সমস্যা গুলো বড় বেশি পীড়া দেয়। আচ্ছা, অপার্থিব কোন সমস্যা কি হয়? খুব সম্ভবত,মানুষ তার অপূর্নতাগুলো কে বড় করতে গিয়ে সেটাকে অপার্থিব বলে বিশেষায়িত করে।
এইতো বিদ্যুৎ এসে গেছে।
এবার দেখি, একটু ঘুমানোর চেষ্টা করি। রাতের আকাশ কিছুটা ফিকে হতে শুরু করেছে।
(পুরোনো ডাইরির পাতা থেকে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।