আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা ২০ টা টাকা দাওনা একটা বই কিনব

খেটে খাওয়া মানুষ- একটু ভাল করে বাঁচার জন্য ঘর ছেড়েছি

ক্লাস ফোরে পড়ি তখন- কয়েকজন বড় ভাই পুরাতন পেপার দেখার জন্য পাবলিক লাইব্রেরিতে যাচ্ছেন- কি মনে করে আমিও সাথে গেলাম- সবাই পেপর দেখছে আমি ওই দিনের ইত্যেফাক এর ৩য় পাতায় দেখলাম টারজান- পরেরদিন আবার গেলাম কাহিণীর পরবর্তী অংশের আকর্ষনে- সপ্তাহখানেকের মধ্যে আবিস্কার করলাম ছোটদের বইয়ের ভান্ডার- ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৬ সন পর্যন্ত পাবলিক লাইব্রেরি কয়েকবার স্থান পরিবর্তন করেছে- কিন্তু আমি একজন নিয়মিত পাঠক ছিলাম- বিনা পয়সায় এত বই আর কোথায় পাব- সুয়্যান চুয়াং (ইউয়েন সাং) এর এ্যাডভেঞ্চারের অনেক গুলো বই ছিল বাংলায় (কমিক)। আমি এখনও ওই কমিকগুলো খুঁজি কেনার জন্য। কিংবা বিজ্ঞানীদের জীবনি- যেগুলো পড়ে বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিংবা পদার্থবিজ্ঞানের বইগুলো- যেগুলো থেকে শেষে ইলেকট্রনিক্স আর তার সূত্রে বুলিয়ান এ্যালজেব্রার বিষয়ে উৎসাহ- শেষ পর্যন্ত যেটা আমাকে কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহী করেছে- পুরাতন বই ভাড়া নেয়ার ব্যাস্থা না থাকলে আমার যে কি অবস্থা হত! পাবলিক লাইব্রেরিতে ছাড়া স্কুল কলেজে পড়া বেশিরভাগ বই ছিল সেবা'র। ভাড়া নিয়ে পড়তাম।

৩ টাকায় অন্য কোন বই তো আর পাওয়া যেত না! তিন গোয়েন্দা আর কিশোর ক্লাসিক তারপর মাসুদ রানা। সেবা'র অনুবাদের তো তুলনাই হয়না। আর ছিল বিশ্বসাহিত্বকেন্দ্রের বই- সপ্তাহে একট বই নেয়া যেত- কিন্তু যখন সেবা থেকে নতুন তিন গোয়েন্দা বেরুত তখন পড়তাম বিপদে- একট বই ২৪ টাকা দাম- আমি একমাসে এর অর্ধেকও জমাতে পারতাম না- আর নতুন বই ভাড়াও পাওয়া যেত না। তার উপর আবার যোগ হয়েছিল 'কিশোর পত্রিকা' - মাসে আরও ১০ টাকার ধাক্কা। ৬ মাসে একবার স্কুল থেকে ১৮০ টাকা পেতাম- সেটা্‌ ওই দিনই শেষ হয়ে যেত- শেষ পর্যন্ত উপায় বের করলাম ভাগে নতুন বই কেনা হবে- তারপর শেয়ার করে পড়া- যদিও পরে একটু পরিবর্তন হয়েছিল- কেউ একজন কিনত বাকি সবাই পড়তাম- আমি-রানা- রুবু-লাবনী-রাজিব-সেতু- শার্লক হোমস এর সমগ্রটা কে কিনবে সেটা নিয়ে মুশকিল হল- ১৩৮ টাকা দিয়ে রাজিব কিনল- লটারিতে প্রথম আমি পড়ার সুযোগ পেলাম এবং শেষ পর্যন্ত আমি বইটা মেরে দিলাম- - ফলে আর কেউ পড়তে পারে নি- আমার স্কুল জীবনের বন্ধুদের মধ্যে বইই ছিল সেতুবন্ধন- কি কারণে যেন ক্লাসের বই আমরা কেউই দুচোখে দেখতে পারতাম না- অথচ সেই একই বিষয়ে স্বেচ্ছায় পড়তাম পাবলিক লাইব্রেরিতে বসে- আমার কেন যেন মনে হয় ক্লাসের বইগুলোকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হয় ছাত্রদের সামনে- বন্ধুদের মধ্যে লাবণী ছিল বই কেনার ব্যাপারে সবচে কৃপণ- নিজে কোন বই তেমন কিনত না- আমাদের থেকে নিয়ে পড়ত- আর নিজের টাকা খরচ করত কসমেটিকস্ কেনার জন্য- এখন কেন যেন স্কুলে পড়া ছেলে মেয়েরা বই পড়তে চায় না।

আমার ছোট ভাইকে আমি প্রতি মাসে বই কিনে দেই- আগে নিজে থেকে পড়ত না- এখন আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে নতুন বইয়ের জন্য। অবসরে- ভ্রমণে একটা ব্ই থাকলে আর কিছু কি দরকার? বই পড়ার আনন্দের সাথে আর কোন কিছুর কি তুলনা হতে পারে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।