আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাঁচা-পাকা ভ্যালেন্টাইন

১৪ই ফেব্রুয়ারি। ভ্যালেন্টাইন’স ডে। দিনটির নানান কর্মকাণ্ড, তা নিয়ে বুড়োদের লাফালাফির তেমন কিছু নেই, কারণ সেগুলো মূলত কমবয়সিদের ব্যাপার, যদি না অনেক টাকা আর ভুবনভোলানো ব্যক্তিত্ব থাকে। সেই সব বুড়োরা আবার প্লে-বয়ের মলাটের মত দেখতে প্রেমিকা পেয়ে থাকেন, তাদের জন্য ভ্যালেন্টাইন হতে চুল-দাড়িতে পাক ধরাদের আটকায় না। ভাবছেন, লোকটা হিংসেয় মরলো ! ঠিকই ধরেছেন,মনটা বড্ড হিংসুটে।

যাক গে, গরিবের কপালে ঘৃত সয় না,কঙ্কালমুখোদের তো আরও নাইই। আমিও এক বার ভালেন্টাইন’স ডে কার্ড পেয়েছিলাম, আজ থেকে বছর দশেক আগে। কে পাঠিয়েছিল জানিনা। তখন আমি বেশ ভাল একটা চাকরি করতাম। কিন্তু সেই এক বারই।

আর কিছু এগোয়নি। যাক গে,ঈশ্বর যা করেন,ভালর জন্যেই করতেন। ব্যক্তিগত নথি ছেড়ে কাজের কথায় আসা যাক। ইঁদুর(মাউস) যুগের কল্যাণে চট করে ঘেঁটে নেওয়ার যে সুবর্ণ সুযোগ আমাদের হয়েছে, তার দৌলতে জানলুম,জিওফ্রে চসার কবিতা লেখার আগে ভ্যালেন্টাইনের গোটা ব্যাপারটাই ছিল। কিন্তু সেখানে শুধু রোমান-ক্রিশ্চান যুদ্ধের গল্পই ছিল, প্রেমের ছিটেফোঁটাও ছিল না।

চসার নাকি লেখেন, ভ্যালেন্টাইন দিবসে, পাখিরা সঙ্গী খুঁজে নেয়। ব্যস আর পায় কে! সব কপোত কপোতীরা ১৪ ফেব্রুয়ারি ধরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ব্রিটিশ পাখি বিশারদেরা নাকি আপত্তি করেছিলেন, যে ওই সময়টা ইংল্যান্ডের পাখিদের মেটিং-সিজন নয়। চসার সম্ভবত ২রা মে নাগাদ ভ্যালেন্টাইন’স ডে নিয়ে আরেকটা কি লিখেছেন। কিন্তু ততক্ষণে তীর বেরিয়ে গেছে।

আমেরিকানরা তো গল্পটাকে আরেকটু জমানোর জন্যে জুড়ে দিয়েছে যে-কতল হওয়ার আগের রাতে ভ্যালেন্টাইন জেল সুপারের অন্ধ মেয়েকে ভালবাসার কার্ড উপহার দিয়েছিলেন, তাতে স্বাক্ষর হিসেবে লেখা ছিল-‌তোমার ভ্যালেন্টাইন। ' বোকারা বা বেশি চালাকরা নিশ্চয় ভাবছেন, হা হা, অন্ধ মেয়ে চিঠি পড়বে কী করে? দুঃখিত , ও সব সহজ-সরল ফাঁক ফোকর বাজারের গল্পে থাকে না। চিঠি দেওয়ার আগে ভ্যালেন্টাইন অলৌকিক দক্ষতায় মানসকণ্যার চোখটি সারিয়ে দিয়েছিলেন, নইলে আর পাদ্রী হলেন কী করে! তা এই যে একটা নতুন প্রেমের বাজার তৈরি হয়েছে, হাজার হাজার কার্ড বিকোচ্ছে, মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডাররা এস এম এস থেকে দু' পয়সা তুলছে, টেলিভিশনে এমন একটা ভাব যে ভ্যালেন্টাইন’স ডে তে দেশে একেবারে ঈদের আমোদ হচ্ছে, তাতে ক্ষতিটা কি? কিচ্ছু না। কিন্তু একটা কথা বলে ফেলি, আমরা পুরোনো দিনের মানুষ, চলতি বাজারের নিয়মে যে জীবনসঙ্গী নির্বাচনের প্রসেস, মানে কোন গাড়ি বেশি দিন টিকবে, আর কতই বা খরচ পড়বে,এইসব হিসেবের আচার অনুষ্ঠান, এইগুলোকে দয়া করে প্রেম বলবেন না। ভাবছেন, হিংসে থেকে বলছি।

তা নয়। আমার আবার সব কিছু নিয়ে একটু ঘাঁটার অভ্যেস। আর কথা বলা আর শোনার অভ্যেস। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা ধানমন্ডি লেকে একটা বয়ষ্ক লোককে সন্দেহজনক ভাবে ইয়ং ছেলে-মেয়েদের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখলে, বুঝবেন সেটা আর কেউ নয় এই অধম স্বয়ং। আর কানে খাটো বলে সব যখন শুনতে পাই না, তখন তাদের ডেকে আবার একটা ফোকাস গ্রুপ করে ফেলি।

যে যাই বলুন না কেন, আমাদের ছোটরা এখনও খুব ভাল। বাপের বয়সি লোককে চিড়িয়াখানার বুড়ো বেবুন মনে হলেও তারা কিন্তু অসম্মান করে না। ধৈর্য ধরে কথা বলে। আজকাল সেন্ট কচিমনেও বুড়ো বেবুনরা আশ্রয় পেয়েছে,তা বাসে উঠলেই টের পাই। যাই হোক, এই রকম বিভিন্ন ভাবে খবর সংগ্রহ করে আমি একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি, প্রেমের ধারণায় একটা আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে।

আগের জেনারেশনে অনেকের কাছে প্রেম মানে ছিল একটা মনে মনে মিল, সেই মিলটা নাকি হুডিনির ম্যাজিকের মতো। যার ফলে বহু ছেলেমেয়ে বিশেষ করে মেয়েরা, এক কাপড়ে বাপের বাড়ি ত্যাগ করতে দ্বিধা করেনি। তারপর তারা দেখেছে, প্রেম বেশি দিন টেকে না। কলেজ ক্যামপাসে, কফি হাউসে যে ছেলেকে বন্ধু মনে হয়, পরে দেখা যায় সে যদি সব ক্ষেত্রে বর্বর নাও হয়, বর তো হয়ই। বিয়ের পর বর নাটক করে, বৌ রান্না করে,বর পাড়ায় আড্ডা মেরে রাত দশটায় ফেরে।

পাখি তখনও খাঁচায় বন্দি, তাই বাঁচাটা বাইরে সেরে আসে। মেয়েটি তক্তপোশে শুয়ে অপেক্ষা করে, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী জ্বর মাপে। অনেক ক্ষেত্রে আবার মেয়েটিকে চাকরিও করতে হয়। স্বামী নামক দেবতাকে না পুষে তো উপায়ও থাকেনা। তারপরেও শুনতে হয় অনেক কথা, দেখতে হয়, নাটকের দলের নতুন মেয়েটিকে তার সেই মানুষটির পাশে কত উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।

জীবনের স্বপ্ন আর মুখে মাখার কৌটোগুলো তার কেমন খালি পড়ে থাকে। এই গল্পটা দু' দিকে এগোতে পারত। এক, হতে পারত যে মেয়েটি নিজের ওপরে বিশ্বাস রেখে নিজের জীবন খুঁজে নিয়ে এগোবে। সেটা হয়নি। তার নানান কারণ, বাড়িতে বাড়িতে আঁচল ধরে বাঁচা চেষ্টা করা বাপ মা, অফিসে অফিসে ব্লাউজ সন্ধানী বস, পাড়ায় পাড়ায় কেচ্ছা শিকারি বাড়ি ওয়ালা আর পড়শিও অমন হলে সেই গল্পটা টেনে চলা বড় কঠিন আর ক্লান্তিকর।

কেউ জানেও না, তারপরেও কোনও ঠিকঠাক পুরুষ মিলবে কিনা,বা আদৌ ঠিকঠাক পুরুষ বলে কিছু আছে কিনা। তাই মেয়েরা অন্য গল্পে ঢুকে পড়েছে। এমন পুরুষ হোক, যাকে নিয়ে সামাজিক সূচকের অশান্তিগুলো কম হবে। মা জ্বালাবে না, আত্মীয় স্বজন বলবে, ‘বাবা! নাসির অমন বউভোলা হবে না কেন, আমাদের পাপিয়া কি কম? ইত্যাদি। সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল।

মাস্তি আর দোস্তি এই জীবনে বোধ হয় সত্যিই হয় না। পোড়ামুখো সেই ভ্যালেন্টাইন তোমাদের ভাল রাখুন। আমরা তো এই পৃথিবীকে তোমাদের বাসযোগ্য করে যেতে পারলাম না। তাই ক্ষমা কোরও। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।