আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাওবাব কেন তার হৃদয় উন্মোচন করে না আর!

বিষণ্ণ দুপুরে নির্জন নিষাদ-এর শুনশান নীরব জগত!
জ্ঞান হচ্ছে বাওবাব বৃক্ষের মতো, একজন মানুষের বাহু কখনো তাকে আবদ্ধ করতে পারে না। —আফ্রিকার প্রবাদ। আফ্রিকার তৃণভূমিতে উত্তপ্ত এক দিন। ভারী বাতাস, রুক্ষ্ম ভূমি আর শুষ্ক মুখ। ক্লান্ত খরগোস বাড়ি ফেরার পথে দেখা পায় জ্ঞানী, জীবনবৃক্ষ বাওবাবের।

"হে বাওবাব," খরগোস বলে, "তুমি বৃদ্ধ, জ্ঞানী এবং দয়ালু এক বৃক্ষ। আমি তোমার ছায়ায় খানিকটা জিরিয়ে নেই?" বৃক্ষ উত্তর করে, "তুমি ঠিকই বলেছ, হে খরগোস। এসো, বিশ্রাম নাও আমার ছায়ায়। " ধন্যবাদ জানিয়ে বাওবাবের ছায়ায় বসে পড়ে খরগোস । কিন্তু তৃণভূমির বাতাস তখনও ভারী, খরগোসের মুখও শুষ্ক।

খরগোস আবার বলে, "হে বাওবাব, বৃদ্ধ, জ্ঞানী এবং দয়ালু বৃক্ষ, তোমার দেহের রস আমাকে পান করতে দাও। " বাওবাব জবাব দেয়, "তুমি যথার্থই বলেছ, খরগোস। আমার শরীর থেকে পান করো তুমি। " বাওবাবের রস পান করে উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠে খরগোস এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। " কেটে যায় আরো কিছু সময়।

খরগোস আবার বলে, "বাওবাব, বৃদ্ধ, জ্ঞানী, দয়ালু বৃক্ষ, তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করতে দিবে কি আমাকে?" এবং বৃক্ষ উত্তর করে, "আহ, তোমার কথা সত্য। এসো, প্রবেশ কর আমার হৃদয়ে। " বৃক্ষ উন্মোচিত করে তার হৃদয়, খরগোস প্রবেশ করে তাতে। অকল্পনীয় সৌন্দর্য, বিচিত্র বর্ণ, জ্বলজ্বলে শিশিরবিন্দু, আর মণিমুক্তা—হীরা, পান্না, চূণি— ধাঁধিয়ে দেয় দৃষ্টি। "বৃদ্ধ, জ্ঞানী এবং দয়ালু বৃক্ষ তুমি, হে বাওবাব।

আমার স্ত্রীর জন্য তোমার হৃদয় থেকে একটা মুক্তা কি নিতে পারি না আমি?" "হে সত্যকথনকারী খরগোস, অবশ্যই তুমি তোমার প্রিয় স্ত্রীর জন্য আমার হৃদয় থেকে মুক্তা নিতে পার। " কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে খরগোস বাওবাবের হৃদয় থেকে একটি স্ফটিক নিয়ে বের হয়ে যায়। বাওবাব তার হৃদয় বন্ধ করে। স্ত্রীর গলায় মুক্তা পরিয়ে দেয় খরগোস। হাসতে হাসতে খরগোস বউ সবাইকে তার উপহার দেখাতে থাকে।

আর তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয় হায়েনা আর হায়েনার বউ। সে রাতে বউ হায়েনাকে বলে, "যাও, আমার জন্য বাওবাবের হৃদয় থেকে মুক্তা নিয়ে আস। " পরদিন সকালে, ভারী জমাটবদ্ধ তৃণভূমির বাতাস, উত্তপ্ত সূর্য, রুক্ষ ঠকঠক ভূমি। হায়েনা আসে বাওবাবের কাছে, "তুমি বৃদ্ধ, ধনী এবং সুন্দর এক বৃক্ষ। আমাকে তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করতে দাও।

" হৃদয়ের আর্গল খুলে দেয় বাওবাব, হায়েনা প্রবেশ করে তাতে। বহু বর্ণের আভা, জ্বলজ্বলে শিশিরকণা আর মূল্যবান পাথর দেখে স্তম্ভিত হয় হায়েনা। খামচে ধরে সে একটা হীরা, একটা পান্না, একটা চূণি। দুহাতে আরো নিতে থাকে সে, উন্মত্ত হয়ে উঠে লোভে। বাওবাবের হৃদয়ের আনাচে কানাচে মাতালের মতো হাতড়ে বেড়ায়।

আতঙ্কে কেঁপে উঠে বাওবাব থামতে বলে হায়েনাকে, কিন্তু শোনে না হায়েনা তার কথা। ভয়ঙ্কর শব্দে তার হৃদয় বন্ধ করে দেয় বাওবাব, মারা যায় আটকে পড়া হায়েনা। সেই থেকে সব সময় তার হৃদয় বন্ধ করে রাখে বৃদ্ধ জ্ঞানী দয়ালু জীবনবৃক্ষ বাওবাব, কখনো সাড়া দেয়না কারো ডাকে, এমনকি তা যদি যথার্থও হয়। [আফ্রিকার উপকথা]
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.