আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টানাপোড়ের স্মৃতিচারণঃ সবাই অথবা আমি

কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।
কিছু করার ছিল না। বসে বসে সেলফোন গুতাচ্ছিলাম। সেইভ করা কন্টাক্ট নাম্বার গুলায় চোখ বুলাচ্ছিলাম। হিমু এস লিখে সেইভ করা।

ভাবতেছি এই এস টা কেন লিখেছিলাম ! কিছুক্ষণ ভাবার পরে মনে পড়ল, সায়মনের ফ্রেন্ড হিমু। এটা সেই হিমু। হুমমম, এডিট করে ইনফরমেশন ট্যাবে সায়মনের দোস্ত লিখে রাখলাম। ভাবলাম আরও যেসব টুকিটাকি আছে, মনে থাকতে থাকতে সবগুলোর ইনফরমেশন লিখে রাখা দরকার। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ একটা নাম্বার চোখ পড়ল।

একটা মেয়ের। নাম লাভ। কলেজে পড়তাম একসাথে। কতদিন আগের কথা। এক সময় খুব দারুণ খাতির ছিল আমার সাথে।

ছোটখাট মোটামুটি কিউট একটা মেয়ে। বন্ধু হিসেবে দারুণ। এখন আর মনে পড়ে না। কী জানি কেন ! লাভের কথা মনে পড়ায় একই সাথে মনে পড়ল মৌমির কথা। এই মেয়েটাকে কতই না বুঝিয়েছি যে মামুনের মত ছেলে আর হয় না।

তাও, মামুনের সাথে কিছু হল না তো। ধূরর, পরিশ্রম বৃথা গিয়েছিল সেবার। সেই সময় মামুন ছিল আমার সবচেয়ে কাছের। আর, এখন সেই মামুনই বা কোথায় ! আমাকে এড়িয়েই চলে। কই, আমারও ত মনে পড়েনা।

কাকে আর দোষ দিব। ওদের গ্রুপটার কথাই মনে পড়ে। প্রথমে আমার জুবায়েরের একটা ভেজাল জন্মদিন বানিয়ে দাওয়াত দিলাম ওদের, শুধু খাতির করার জন্য। ওরা সবাই জুবায়েরের জন্য গিফট এনেছিল। বেচারা জুবায়ের লজ্জায় লাল।

একে ত সত্যি জন্মদিন না, এরপরে সবাই উইশ করল আমরা বাদে, শেষ পর্যন্ত আবার কেকও কাটতে হল। আমরা বন্ধুরা বাদে সবাই হাততালি দিল। আমরা ত হেসেই শেষ। তখন থেকেই পরিচয়। কতদিন কত আড্ডা।

কলেজের সামনে সারাদিন ঘাস মাটিতে বসে, ছায়ার আর আলোতে। লাভ আর মৌমি এই দুজনেই আমাদের গ্রুপে প্রায় ঢুকে গিয়েছিল। ওদের মাধ্যমে পরিচয় হয় জেমির সাথে। লাভের ছোট বোনের জন্মদিনে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক গল্প, সেখানেই পরিচয় হয় জেমির সাথে।

সেই জেমির সাথে প্রায় দুই বছর পরে গত মাসে আবার দেখা। তেমনই আছে, না বোধহয়, কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মনে পড়ে স্বার্থপর মৌসুমীর কথা। লাভের ক্লাসেই ত পড়ত। মাহবুবের থেকে দুইদিন পরে পরে টাকা ধার নিত, হালকা প্রেমের অভিনয় করত।

কতদিন ! এরপরে আসে আমার পালা। হঠাৎ বানিয়ে দেয়া হয় আমার জন্মদিন। সে উপলক্ষ্যে মৌসুমীকে ডাকি আমরা কিংসে। সেদিনই সেই দিন। মাহবুব আজকে বলবে মনের কথা মৌসুমীকে।

মনে পড়ে, মাহবুবকে এক কথায় মৌসুমী না বলে দিল। মাহবুবকে এত তাড়াতাড়ি করতে বলেছিলাম আসলে আমিই। মৌসুমী রাজী হোক আর না হোক, একটা গতি ত হল। এরপরের কাহিনী এগিয়ে যায় খুব দ্রুত। বৃষ্টির একটা দিনে লাভের কাছে যেতে চায় নাঈম।

সেই লাজুক ছেলেটা। মনে মনে যে লাভকে পছন্দ করত প্রথম থেকেই। লাভ কী বুঝে নি? নাহ, বুঝেছে ঠিকই। নাহ, যেতে পারেনি ত সেদিন। ওর পরিবর্তে গিয়েছিল সার্জিল।

যে দাবী করে কোন মেয়ে তার কাছে কোন ব্যাপার না। আসলে তাও ব্যাপার একটা হয়েছিল। লাভ ওকে না বলল। কেন? লাভ কী আসলে নাঈমকে চেয়েছিল সেদিন? কী জানি ! লাভ কী একটুও পছন্দ করতনা নাঈম কে? তাহলে লাভের ছোট বোনের জন্মদিনে সেদিন ওরা দুইজন ছাদে পাশাপাশি এতক্ষণ চুপচাপ বসে ছিল কেন? সেদিন কী সত্যিই ওদের কথা ছিল না, নাকি নিরবতাটা অন্য কিছু বোঝায়? সত্যিই কি তাই ! অথবা আজকেও হয়ত ঘুম কম হয়েছে আমার। এতসব ব্যার্থতার কেইসের মাঝে সফলতাটা বোধহয় শুধু আমারই ছিল।

অভির ত রিলেশন ছিল আগে থেকেই। সারাদিন ফুসুর ফাসুর। আমিও কী এমন করেছি? নাহ, আমি জানি আমি এমন না। আর, সার্জিল? লাভের কাছে নাঈমের বদলে গেল ও গেল কেন? ওর ত একজন ছিলই। সম্পর্কও ত খুব ভাল ছিল।

কী জানি, বুঝি না। আমার মনে পড়ে, শেষের দিকটায় তেমন জমেনি বোধহয়। তখন চিন্তা ভাবনা অন্য লাইনে চলে গেছে, ক্ষমতা। ফার্স্ট ইয়ারে যেসব ভাবতাম, পরে এগুলো ভাবতে বিরক্ত হতাম। মনে হত, পোলাপান এখনও খুঁজে বেড়ায়, ধূরর।

খুঁজার কী আছে, হইলে এমনিতেই হবে। আর, খুঁজলেই এমন ছ্যাবলামি করতে হবে নাকি? কী জানি। সার্জিলের সাথে আমাকে মিশিয়ে ঝুমুরের কাহিনী। আজব প্যাঁচাল। আরেক কাহিনী।

আরেক দিন। সার্জিলের কথায় খেয়াল হল হিমেলের কথা। দারুণ সুইট আর স্মার্ট একটা ছেলে, দারুণ খেলত। খেলার কথায় মনে আসল চিকিচিকের কথা। ওর নামও মামুন।

দুই মামুন মিলে যাওয়ায় নাম দিয়ছিলাম গাঞ্জা মামুন। সবখানে ত আর গাঞ্জা ডাকা যায় না, তাই ডাকতাম চিকিচিক। চিকিচিকের কথায় আবার ঘুরেফিরে খেয়াল আসে সেই সায়মনের কথা। সায়মনের বন্ধু হিমু, যার সাথে কথা হয়েছিল মাত্র দুই দিন। যার নাম্বারের ইনফরমেশন ট্যাবে তার পরিচয় লিখলাম একটু আগে।

সায়মনের সাথে জেমির কিছু একটা সম্পর্ক হয়েছিল প্রায়। ঠিকমত হল না ত। অনেকদূর, তাও আসলে কিছু না। সায়মনের বাসাতে বসে জেমি, আমি আর সায়মনের কতদিন আড্ডা। নাহ, সায়মনের সাথে প্রেম করবে না সে।

জেমিকে নিয়ে আমার সাথে সন্দেহ করত অনেকে। আমাকে কী পছন্দ করত? কী জানি। জেমির নাকি ভাল লাগে না এসব প্রেম-ট্রেম। ভদ্র সিম্পল মেয়ে, তাই-ই থাকতে চায়। সায়মন ঠিকই জেমিকে পছন্দ করত।

এখনও বুঝি , তখনও বুঝতাম। জেমি ওকে না বলার পরে আর স্বীকার করত না। সেই জেমির সাথে প্রায় দুই বছর পরে গত মাসে আবার দেখা। জেমির কথাবার্তা ওই আগের মতই আছে। তেমনই আছে, না বোধহয়, কিছু পরিবর্তন হয়েছে।

এবার দেখি স্বচ্ছ পাতলা ওড়না। এটা কী জেমি নাকি? আররে, আকাশ_পাগলা ? তোমার এই অবস্থা কেন ? কী অবস্থা? আঁতেল আবার হিপ্পি। ওই হৈল। তোমার খবর কী? ওই আছে একরকম। কই পড়? কীসে পড়।

আরে বললে চিনবানা, বাদ দাও। আরে বল না। প্লিজ। প্রাইমেশিয়া ইউনি, টেক্সটাইল ইঞ্জি। টেক্সটাইলের পুলাপান শুনলাম পাশ করা শেষে নাকি স্বর্ণেরর ভরি দরে বিক্রী হয়? দশ বছর আগের কাহিনী কও মিয়া? আমার সামনে আরও তিন বছর।

তুমি? তোমার আশেপাশেই ত পড়ি। বুঝে নিলাম। এই ত কথা। আর ত বলার কিছু নেই। এত দিন পরে দেখা।

এতদিনের সব কথা শেষ। কোথাও বসার দরকার আছে কী ওর সাথে ? আগের মত আড্ডা জমবে না ত। সায়মনের বাসায় ত যাওয়া হবে না। তবুও কথা টানি। সায়মন আজীবনের জন্য এখন লন্ডনে।

আসলে কিছু? একসময় ছিল, এখন আমার কথা বলার উপলক্ষ্য মাত্র। আর, জেমির? “জান আকাশ, লাভ যেন কার প্রেমে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। গত মাসে। ওর লাশ দেখেছি সবাই। তোমার আর তোমার বন্ধুদের নতুন নাম্বার ত জানতাম না।

আগের নাম্বারে ম্যাসেজ দিয়েছিলাম কয়েকটা”, জেমির উদাস মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। অথবা সেদিনও হয়ত ঘুম কম হয়েছিল আমার। হারিয়ে গেছে সবাই অথবা আমি। © আকাশ_পাগলা
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.