কত আজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই দূরকে করিলে নিকট,বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।
টলেমী রাজবংশের শেষ প্রতীক ক্লিওপেট্রা। রূপ যাদের নেশা,সৌন্দর্য যাদের তপস্যা, ক্লিওপেট্রা তৎকালীন পৃথিবীর সেই সব সুন্দরের পূজারীদের ছিলেন নয়নের মনি। তার নীল চোখ দেখে রচিত হয়েছে কত কবিতা। তার ঠোঁট নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘ক্লিওপেট্রিয়ান আর্ট’।
তার সুডৌল গ্রীবাদেশ দেখে মরাল ও লজ্জা পাবে এটা শিল্পীদের কথা। তাকে নিয়ে শিল্পীরা আঁকলেন কত ছবি, দার্শনিকরা গনলেন প্রমাদ, আর বীর পুরুষেরা করলেন অস্ত্রের ক্ষুরধার পরীক্ষা।
পুরুষের হৃদয় বিদ্ধ অমন যে অস্ত্র ক্লিওপেট্রার আধিকারে , সে সম্পর্কে তিনি অতিশয় সজাগ। তিনি কখনও থাকেন সকলের চোখের আড়ালে আবার কখনও সবাইকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেন। এই পুড়িয়ে ছাড়খার করার মাঝে তিনি খুঁজে পান এক আনাবিল আনন্দ।
কিন্তু যুবরাজ পোথিনাস তার এই খেলা বেশী দিন চলতে দিল না। তার বয়স মাত্র চৌদ্দ বছর। বড় বোন ক্লিওপেট্রার প্রেমে পাগল হয়ে গেল। তখন রাণীর বয়স বিশ বছর।
যুবরাজ পোথিনাস ভিখারীর মত হাত পাতলেন ক্লিওপেট্রার কাছে।
কিন্তু যুবরাজের প্রেম কঠোর ভাষায় প্রত্যাক্ষান করলেন রানী। পেথিনাস জেদ ধরেন। রাণী যুবরাজ়কে বলে দেন তুমি আমার ভাই, মায়ের পেটের ভাই, তোমার আমার মধ্যে এর বাইরে অন্য কোন পরিচয় নাই। পেথিনাস রানীকে মনে করিয়ে দেন যে, তাদের মা তার ছোট ভাইকে বিয়ে করেছেন। অতএব এই বিয়েতে কোন বাধা নাই।
রানী তাকে জানিয়ে দেন অমন রীতির বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম। এই বিধানটি ছিল ফারাওদের-- মিসরীয় নয়।
পোনিথাস অপমানিত বোধ করলেন। পোনিথাসের কামনার আগুন থেকে বাঁচার জন্য ক্লিওপেট্রা আত্মগোপন করলেন। তিনি নিজেকে লুকিয়ে রাখলেন কখনও পাহাড়ের গুহায় কখনও বা খেজুর পাতার ছাউনিতে আবার কখন ও না উটের পিঠে।
পোনিথাস একা হলে তাকে তিনি জব্দ করতে পারতেন। কিন্তু পনিথাসের সাথে আছে সকল রাজপুরোহিতগন এবং যুবরাজের অনুগত সাভাসদ গন। মিসরীয় রীতিতে ভাইবোনের বিবাহের বিধান রয়েছে।
উচ্চাভিলাষিণী ক্লিয়পেট্রা বিশ্ববিজয়ী জুলিয়াস সিজারের চিন্তায় বিভোর। জুলিয়াস সিজারের তখন দারুন খ্যাতি চারিদিকে।
রোমান সিনেটররা এই খ্যাতির নাম দিয়েছেন লাম্পট্য। ক্লিওপেট্রা সবই জানেন, তার খুব সখ এই বীরকে দেখে নেবার।
পোম্পাই বিজয়ের পর সেখানকার রাজা পালিয়ে আশ্রয় নেয় আলেকজান্দ্রায়। তিন দিনের মাথায় তিনি সিজারের হাতে বন্দি হন। আলেকজান্দ্রায় জুলিয়াস সীজার।
বিদ্যুতের গতিতে এই খবর চলে যায় রাণীর কাছে।
সীজারের নেশায় ক্লিওপেট্রা তন্ময়।
ওদিকে অস্থিরতার মধ্যে রাত্রিযাপন করছে সীজার। আলেকজান্দ্রার রাজপ্রাসাদে জেগে জেগে সিজার নীলনদের রূপসী কন্যা মিসরের রাণী ক্লিওপেট্রার স্বপ্ন দেখছেন। রাণীর বয়স বিশ, আর সিজারের বয়স ষাট কিন্তু তবুও চাই রাণীকে।
পরদিন দূতপাঠালেন চারিদিকে রানীর খোঁজে ।
প্রহরী এসে দাঁড়াল রাণীর দরজায়। প্রহরী জানাল সীজারের দূত এসেছে রানীর কাছে। আনন্দে লজ্জার রাণী হয়ে গেলেন আভিভূত। সীজারকে আভিবাদন জানিয়ে দূতকে রাণী বললেন-- তিনি কি ভাবে যাবেন?
দূত তাকে জানাল যে সে ঘোড়া নিয়ে এসেছেন।
রানী তাকে বললেন --এভাবে হবে না। দূত চিন্তা করলেন রাণীর কি এমন ওজন যে অতবড় ঘোড়ার হবে না। রাণী তখন তাকে তাদের ভাই-বোনের সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দের কথা কথা বললেন। দূত তাকে বিশেষ বুদ্ধি দিলেন। এই বুদ্ধি রাণীর মনপুত হল।
আলেকজান্দ্রিয়ার রাজপ্রাসাদে দূত প্রবেশ করলো মাথায় একটি কার্পেটের বোঝা নিয়ে। কার্পেট দেখে জুলিয়াস সিজার ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। কিন্তু কার্পেট খুলে দেখা গেল সেখানে অবস্থান করছেন বিশ্ব জয় করা সুন্দরী রাণী ক্লিয়পেট্রা।
এরপরের ঘটনা গুলি নাটকের মত ঘটতে থাকে। সীজার ও ক্লিয়পেট্রার মিলনের ফলে জন্ম নিল শিশু সিজার।
বিশাল সাম্রাজ্য সামলাতে যেয়ে রোমের সিনেটে লাগলো গোলযোগ । সিজার গোলযোগ থামাতে ফিরলেন রোমে। সেখানে বন্ধু ব্রুটাসের হাতে নিহত হন তিনি আকস্মিক ভাবে। শোকার্ত ক্লিয়পেট্রাকে সান্তনা দিতে দিতে প্রেম হয়ে যায় সিজারের একান্ত অনুগত সেনাপতি এন্টোনির সঙ্গে। সে প্রেমে ক্লিয়পেট্রার যৌবনে আসে নতুন জোয়ার।
সেই জোয়ারে একদিন ভেসে এলেন রোমান সেনাপতি আগাস্টাস। মিসরে রোমান সাম্রাজ্যের অংশ। মিসরের ভাগ্যাকাশে নেমে এল কালো অধ্যায়।
সূত্রঃ সংগ্রিহীত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।