মানবতার পক্ষে .................................
ফ্রান্সে একটা ওয়ার মিউজিয়াম আছে, যেখানে সারা বিশ্বের বড় বড় যুদ্ধের বিভিন্ন দলিল, প্রামান বা বিভিন্ন নিদর্শন আছে। আরো আছে তামাম দুনিয়ার বড় বড় বীরদের নাম। জানেন সেখানে আমাদের উপমহাদেশের দুইজন বীরের নাম স্থান পেয়েচে??
তাদের একজন হলো টিপু সুলতান। আরেকজন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর উত্তম, তিনি ছিলেন একজন সেক্টর কমান্ডার... তিনি হলেন মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুর।
আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েচে ১৬ ডিসেম্বর।
কিন্তু দেশের অনেক জায়গায় তখনও যুদ্ধ চালু ছিল। খুলনা অঞ্চল তার মধ্যে একটি। পাকি বাহীনি যশোর ক্যন্টনমেন্ট থেকে বিতাড়িত হয়ে মার্কিন সপ্তম নৌ বহরের আশায় খুলনা গিয়ে ডিপেন্স করে। অনেক চেষ্টার পরেও তাদেরকে আর্তসমর্পন করানো যাচ্চিল না। কারন পাকিরা তাদের ট্যংক বহরের পেচনে অবস্থান নিয়েচিল... আর তাদেরকে ধংস করার জন্য বাংলার বীর মেজর মঞ্জুর মাত্র ৬জন কমান্ডোকে নিয়ে সেই ট্যাংক বহরের ভেতরে ঢুকে পড়ে... দুই হাতে দুইটি এসএলআর সাম্নের দিকে তাক করে দুটিতেই একসাথে ফায়ার করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে যায় স্বয়ং কমান্ডো কমান্ডার মঞ্জুর... শেষ পর্যন্ত পাকিরা আর্তসমর্পন করতে বাধ্য হয়...।
একবার ভেবে দেখুন নিজে একজন সেক্টর কমান্ডার হওয়ার পরেও তিনি কিভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে নিজে জাপিয়ে পড়েচিলেন... আমি যেই যুদ্ধের কথা বলচি, সে যুদ্ধটা "ব্যাটল আব শিরোমনি" নামে পরিচিত। অনেকে শুনে বিশ্বাস করবেন না, এই যুদ্ধটা বিশ্বের কঠিন বা ভয়াবহ ১০টা যুদ্ধের একটি। এই মহান বীর এম এ মঞ্জুর বীর উত্তমের প্রতি জানাই, আমার অন্তর থেকে শ্রদ্ধা... আর লাল সালাম।
দেশ স্বধীন হওয়ার পরে আমাদের সেনাবাহীনিতে যে পাকি ভূতের আসরগুলা ছিল, তাদের কল্যানে দেশের অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে এলো ১৯৮১সালের ৩০শে মে। এইদিন সেনা শাসক জিয়াকে হত্যা করা হলো চট্রগ্রামে।
তখন চট্রগ্রামের জিওসি ছিলেন মেজর জেনারেল মঞ্জুর বীর উত্তম। তখনকার সেনাপ্রধান এরশাদ আদেশ দিলেন মঞ্জুরকে গ্রেফতার করার জন্য... মঞ্জুরকে দোষি করা হলো জিয়াকে হত্যার জন্য। তাকে ধরার জন্য ৫লক্ষ টাকা পুরষ্কার ঘোষনা করা হলো। একসময় মঞ্জুর ধরাও পড়লেন... হাটহাজারিতে। তাকে নিয়ে যাওয়া হল হাটহাজারি থানায়।
থানায় তার গ্রেফতারের খবরে আগে থেকে উপস্থিত চিলেন ওসি গোলাম কুদ্দুস এবং ডিআইজি এ এস এম শাহজাহান.........
মেজর মঞ্জুর শাহজাহানের কাচে বলেন, তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবেন। কিন্তু শাহজাহান তা করতে দেননি।
শেষে মঞ্জুর ওসি গোলাম কুদ্দুসকে এবং ডি আই জি শাহজাহানকে বলেন 'আমি আপনাদের (পুলিশের) কাচে স্যলেন্ডার করেচি সুতরাং আমাকে যেন সেনাবাহীনির কাচে তুলে দেওয়া না হয়'।
শাহজাহান তাঁকে আস্বস্থ করেন তাকে সেনাবাহীনির কাচে দেওয়া হবে না। তখন মেজর মঞ্জুর যে হাবিলদারের কাচে ধরা দিয়েচিলেন তাকে ডেকে, নিজের কোমরে লুকয়ে রাখা পিস্তলখানা সেই হাবিলদারের কাচে দিয়ে দিলেন।
আর বললেন "আমি যদি নিশ্চিত না থাকতাম যে পুলিশের নিরাপদ কাস্টডিতে আমি নেই তাহলে পিস্তলটা দিতাম না। অন্য কেউ আসলে ব্যবহার করতাম, কিন্তু এখন আমি নিশ্চিত যে পুলিশের কাস্টডিতে আছি, আর্মির না। এ কারণেই সারেন্ডার করছি। এই কথা তিনি বললেন এ এস এম শাহজাহানকে।
সেই এ এস এম শাহাজাহান কি করলেন একটু পরেই?
কিছুক্ষন পরেই এল আর্মির গাড়ি।
মঞ্জুরের তখন কিচু বুজার বাকি ছিল না। তিনি খুজতে লাগলেন শাহজাহানকে, কিন্তু সেই শাহজাহানকে কোথাও খুজে পাওয়া গেল না। এই শাহজাহান আর্মিকে খবর দিয়ে সে স্থান ত্যাগ করে চলে যায়।
মেজর এমদাদ একদল সেনা নিয়ে মঞ্জুরকে আটক করে। ২রা জুন ১৯৮১ সকালে বেতার -টেলিভিশনে সরকারিভাবে জানানো হল , "আমাদের বিক্ষুব্দ সৈন্যরা মঞ্জুরকে হত্যা করেছে "।
কিন্তু রাতের খবরে জানানো হয় , "তাকে গ্রেফতার করে চট্রগ্রাম সেনানিবাসে আনার সময় পথে একদল সশস্ত্র লোক বন্দীদের ছিনিয়ে নেবার চেস্টা করে এবং নিরাপত্তা প্রহরীদের সাথে গুলি বিনিময় হয় । এতে জেনারেল মঞ্জুর গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন ও হাসপাতালে নেবার পথে তিনি মৃত্যুবরন করেন । " কি করুন পরিনতি এক বীরের...
নিরস্ত্র অবস্থায় তাকে হত্যা করা হলো। কি ছিল তার অপরাধ তা কেউ জানলো না। কোন আইনে তার বিচার করা হল তা কেউ জানল না।
...তাকে কোথায় কবর দেয়া হলো বা আদৌ তাকে কবর দেয়া হয়েচে কিনা তা কেউ জানল না...। ফ্রান্সের মিউজিয়ামে তার নাম সংরক্ষিত করা হয়েচে কিন্তু আমাদের দেশের কয়জন জানে তার নাম...।
হাটহাজারির সে ওসি কুদ্দুস, মেজর মঞ্জুরকে ধরার ৫লক্ষ টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনিই। দিয়েছিলেন এরশাদ। কুদ্দুস চাকরি ছেড়ে দেন ।
সেই কুদ্দুস এখন দেশের বিশাল ব্যবসায়ী। বিজিএমইএর সভাপতিও ছিলেন। তার গ্রুপের নাম ড্রাগন গ্রুপ।
আর এ এস এম শাহজাহান? পরে আইজি হন, সচিব হন, তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও হয়েছিলেন। এখন তিনি সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, রীতি মত বুদ্ধিজীবি।
টক শো তে দেখা যায়। গতকাল তাকে দেখলাম একুশে টিভিতে(তাকে দেখেই আমার এই প্রায়াশ) বড় বড় কথা বলচেন... রাজনৈতিক নেতাদের, সমাজের প্রতিটা মানুষের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলচেন তিনি... অথচ তার নৈতিকতা কোথায় সেটা আমি খোজার অনেক চেষ্টা করেচি। সামরিক শাসকদের পা চুসে বড় কর্মকুত্তা থুক্কু কর্মকর্তা হয়ে নিজের আখের গুচিয়ে , মঞ্জুরের মত দেশপ্রেমিককে হত্যার জাল বুনে তিনি এখন অন্যের নৈতিকতা খোজেন... ।
মঞ্জুর হত্যার কাহীনি এখনও পরিষ্কার নয়... একদিন অবশ্যই তা খোলাশা হবে এই আশা রাখি...। এক বীরের অপমৃত্যুর রহস্য উম্মেচিত হবেই...।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।