সবাইকে শুভেচ্ছা...
কুস্কো এয়ারপোর্টে নামতেই আমার নামের সাইন নিয়ে মধ্য বয়সী এক মহিলাকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে হাফছেড়ে বাচলাম। হাত তুলে ইশারা করতে এগিয়ে এসে নিজের পরিচয় দিল, দোভাষি এবং ট্যুর গাইড। লিমার ট্রাভেল এজেন্টকে আগা-গোড়া বিশ্বাষ করতে পারিনি বলে নিজকে ধিক্কার দিলাম, ট্যুরের পুরু টাকাটা আগাম তুলে দিতেও কেন জানি মন সায় দিচ্ছিলনা। তবু দিতে হল কারণ এ ছাড়া দ্বিতীয় কোন পছন্দ আমার সামনে খোলা ছিলনা। পৃথিবীর এ প্রান্তের মানুষগুলোর সাথে নিউ ইয়র্কে পরিচয় থাকলেও স্বদেশে তাদের পরিচয় কতটা বান্ধবসূলভ হবে তার কোন ধারণা ছিলনা।
সবকিছু কথামত কাজ করায় বিদেশ বিভূঁইয়ে সাহসটা বোধহয় একটু বেড়েই গেল। দক্ষিন আমেরিকার পেরু নামের দেশটার মানুষগুলোর আচরনে প্রথম হতেই বেশ মুগদ্ব হতে বাধ্য হলাম।
১৯৯০ মডেলের নড়বড়ে টয়োটা সিডানে নড়ে-চড়ে বসতেই অবাক হয়ে খেয়াল করলাম এ যে দেখছি পুরোপুরি গ্রীষ্মকাল! অথচ ঘন্টা দুয়েক আগে ফেলে আসা রাজধানী লিমায় তখন ছিল কনকনে শীত। ভাঙা ইংরেজীতে পরিচয় পর্ব সেড়ে প্রথমেই জানতে চাইলাম আমার ট্যুর আইটেনের্যারী। যেহেতু সপ্তাহান্তে আমাকে নিউ ইয়র্কের রিটার্ন ফ্লাইট ধরতে হবে তাই আশ্বস্ত হতে চাইলাম কোথাও কোন ত্রুটি নেই।
আসলেই কোন ফাঁক ফোকর খুজে পেলামনা, ঠান্ডা হয়ে গাড়ির বাইরে চোখ ফেরাতেই মনটা হাল্কা হয়ে গেল। থরে থরে সাজানো এন্ডিসের চূড়া, তার পদতলে মাথা উচু করে দাড়িঁয়ে আছে ইন্কা সভ্যতার ঐতিহাসিক স্বাক্ষী কুস্কো নগরী, পেরুর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। সমুদ্রপৃষ্ট হতে ৩৫০০ মিটার উচ্চতায় উরুবাম্বা ভ্যালির পাদদেশ জুড়ে প্রাচীন সভ্যতা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি দেখতে পৃথিবীর এ অঞ্চলটায় ভ্রমকারীদের ভিড় লেগে থাকে বছর জুড়ে।
১০ মিনিটের ভেতর পৌছে গেলাম হোটেলে। ’হোটেল র্যয়াল ইন্কা-২’, অতিরিক্ত কোন জৌলুষ ছাড়াই হোটেলটার আতিথেয়তায় মুগদ্ব হলাম।
রুমের সূবিশাল কাচের জানালাটা খুলে দিতেই চোখের সামনে লুটিয়ে পরল পাহাড় আর মেঘ রাজ্যের মিলন মেলা, দিগন্ত রেখায় ঈগল পাখীদের উদ্দেশ্যহীন বিচরন পরিবেশটায় এক ধরনের ভৌতিকতা এনে দিল। স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষন, এন্ডিসের আগ্রাসী চূড়া আর সূবিশাল আকাশ ফুড়ে কেন জানি মেঘনা পাড়ের গ্রামের সেই ছোট্ট বাড়িটায় ফিরে যেতে মন চাইছিল। এ এক ধরনের নষ্টালজিয়া বোধহয় সব বাংলাদেশীকেই কম বেশী তাড়িয়ে বেড়ায়। সূর্য্য মধ্য গগনে উঠার আগেই সাক্সাই ওয়্যামান (পেরুভিয়ানরা ঠাট্টা করে বলে থাকে সেক্সি ওম্যান!) নামের একটা ঐতিহাসিক ভ্যালি দেখতে চলে গেলাম ।
সন্ধ্যা নামতেই প্রচন্ড শীতে গ্রাস করে নিল লোকালয়, এন্ডিসের চূড়াগুলো ঢেকে গেল কুয়াশার চাদরে।
শহরের আলো আধারী নিয়ন বাতিগুলোকেও গ্রাস করে নিল ঘন কাল কুয়াশা। দুপুরের ভ্যপসা গরমের কুস্কো শহর রাত হতেই ভোজবাজর মত মিলিয়ে গেল প্রকৃতির কোলে। আমার শুধু অবাক হওয়ার পালা, কোনটা রেখে কোনটা দেখব! হোটেলের লোকজন জানাল শহরের প্রধান চত্ত্বরে আজ রাতে ইন্কাদের বিশেষ অনুষ্ঠান হচ্ছে, বাহারী পোশাক এবং আঞ্চলিক গানের তালে তালে ইন্কাদের দেখতে চাইলে আজকের রাতটাই বিশেষ রাত। কিন্তূ উপায় ছিলনা, আমাকে সকাল সকাল বিছানায় যেতে হবে। হোটেলে পা রাখতেই দেখা পেলাম সকালের ট্যুর গাইডের।
এক কাপ বিদঘুটে রঙের চা বাড়িয়ে দিল, কোকা টি। হাই আলটিট্যুডে কোকা টি এক ধরনের এন্টডোট হিসাবে কাজ করে। চুমুক দিতেই বিস্বাদে তিতিয়ে গেল মুখ, কিন্তূ ইসাবেলার (গাইড) হুসিয়ারিতে পুরো কাপটাই শেষ করতে হল।
ভোর ৭টায় উঠতে হবে তাই রাতের খাবার খেয়ে সকাল সকাল ঘুমিয়ে পরলাম। পরবর্তী ঠিকানা মাচা পিচু।
-চলবে
২য় পর্বের জন্যে নিম্নে ক্লিক করুনঃ
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।