Everyone is entitled to my opinion.
আমাদের জানা যতগুলো শাসন ব্যবস্হা আছে তার মধ্যে গনতন্ত্র স্পস্টতই সবচেয়ে স্হিতিশীল এবং নিরপেক্ষ একটি শাসন ব্যবস্হা। কিন্তু এরও কিছু খারাপ দিক আছে। কখনও কখনও গনতন্ত্রও অনাকাঙ্খিত ফল বয়ে আনতে পারে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় প্যালেস্টাইনীদের ভোটের মাধ্যমে চরমপন্হী সংগঠন হামাসকে নির্বাচিত করা অথবা আমেরিকার সিনেট কতৃক নিরাপত্তার অজুহাতে 'প্যাট্রিয়ট এ্যাক্ট' পাশ করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে জনগণের যে কোন বিষয়ে নাক গলানোর অধিকার প্রদান করা।
গনতন্ত্র নিঃসন্দেহে একটি বলিষ্ঠ শাসন ব্যবস্হা কিন্তু কোন ক্রমেই এটাকে নিঃখুত বলা যাবে না।
আমরা যদি পিছনের দিকে ফিরে চলে যাই সেই সময়টাতে, খৃস্টপূর্ব ৩৯৯ সালে, যখন এথেন্স নগরীতে প্রথম শুরু হয়েছিলো গনতন্ত্রের চর্চা সেই তখনও আমরা গনতন্ত্রের এই দূর্বলতা খুজে পাই। আমরা দেখতে পাই গনতন্ত্র একই সাথে একটা নগর রাস্ট্রকে মহিমান্মিত করেছে আবার তার সুনাম ক্ষুন্ন করেছে।
সে বছর এথেন্সের মানুষেরা দার্শনিক সক্রেটিসের বিচার করেছিলো। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিলো সেটা ছিলো এরকম: "This indictment and affitdavit is sworn by Meletus Meleton of Pitthus, against Socrates Sophroniscou of Alopece. Socrates is guilty of not acknowledging the Gods the city acknowledges, of introducing other new divinities. He is also guilty of subverting the young men of the city. The penalty demanded is death."
বিচারকাজ স্বভাব সুলভ নিয়ম অনুযায়ী একদিন চলেছিলো এবং তারই সমগোত্রীয়দের (peer) দ্বারা গঠিত জুরী তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। একমাস পরে তরা মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
রবিন ওয়াটারফিল্ড তার 'Why Socrates Died' নামের নতুন প্রকাশিত বইতে সক্রেটিসের বিচারের বিভিন্ন কারণ এবং এর পিছনের খুঁটিনাটি বিষয় জোড়া দিয়ে বের করেছেন একটি গুরুত্বপূর্ন সত্য যে এটা ছিলো গনতন্ত্রিক পদ্ধতির মূল মন্ত্রের একটি নস্ট প্রয়োগ।
এথেন্সে সেই সময় যে গনতান্ত্রিক ব্যবস্হা চালু ছিলো সেটাকে বলা হত 'র্যাডিক্যাল' গনতন্ত্র। এথেন্সের সেই সময়কার আইন কানুন অনেকাংশেই বর্তমান আধুনিক পশ্চিমা গনতন্ত্রের সাথে মিলে যায়। এই নগর রাস্ট্রের নাগরিকেরা ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচিত করত। সম্পদের উপর ভিত্তি করে কর দিত।
এমনকি তাদের একটা অফিশিয়াল উন্মুক্ত সভাস্হল ছিলো যেখানে তারা তাদের দুঃখ দুর্দশার কথাও অভিযোগাকারে জানাতে পারত। কেউ যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করত তবে তাকে শাস্তি প্রদান করা হত।
গনতন্ত্রের প্রতি এই অতি মোহের কারণেই এবং নেতৃস্হানীয়দের বিভিন্ন রকম দিক নির্দেশনার কারণেই এথেন্সে প্রায়ই চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করত। এদের সবাই দাবী করত তার সিস্টেমটাই হলো গনতন্ত্রের সত্যিকারের রক্ষাব্যুহ।
মোটামুটি প্রাচীণ এথেন্সের সব সরকারী পদগুলোই ছিলো জনগনের ভোটে নির্বাচিত।
বেশীর পদাধিকারীই এক বছরের জন্য নির্বাচিত হতেন এবং সারা জীবনে মাত্র দুইবার একই পদে নির্বাচিত হতে পারতেন। আর এ কারণেই ক্ষমতার মূল কেন্দ্র ছিলো নিয়ত পরিবর্তনের মাঝে। আর যেহেতু তখন কোন রাজনৈতিক দল ছিলো না তাই ভবিষ্যত নেতারা বা গত হয়ে যাওয়া নেতারা সারাক্ষনই মৈত্রী করার জন্য সমমনা লোকের খোঁজে থাকত। এই ব্যাপারটাই ছিলো তখনকার গনতন্ত্রের সবচাইতে বড় দূর্বলতা। মোটামুটি বলতে গেলে কোন রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা ছিলো না।
আরা নিয়ম-কানুন গুলোও সবসময় বিদ্যুৎগতিতে পরিবর্তিত হতো।
কিন্তু, এই পরিবর্তনের রাজনীতিও আসলে ব্যাখ্যা করে না সক্রেটিসকে কেন মরতে হয়েছিলো। আসলে তিনি এথেন্সের এই র্যাডিক্যাল গনতন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত জীবনের কারণে, বিশেষ করে এলসিবিয়াডিসের (Alcibiades) সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে।
বেশিরভাগ সূত্র থেকেই জানা যায় এলসিবিয়াডিসের মধ্যে অভিজাত এথেন্সবাসীর সব গুনাবলিই বিদ্যমান ছিলো। সে ছিলো স্মার্ট, সুদর্শন, ধনী, প্রমাণিত যোদ্ধা।
আর সক্রেটিসের কাচে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ছিলো তার মানসিক উৎকর্ষতা। বৃদ্ধ দার্শনিক এবং তরুণ অভিজাত একে অন্যের মধ্যে পরিপূরক গুনগুলি খুঁজে পেয়েছিল। প্রথামজন পেয়েছিল সৌন্দর্য এবং মনন আর দ্বিতীয়জন পেয়েছিলো জ্ঞানের ঝর্নাধারা। ফলে জন্ম নেয় এক উষ্ণ বন্ধুত্বের।
পেলোপনিশিয়ান যুদ্ধের সময় এলসিবিয়াডিস যুদ্ধ না করে শত্রু নগর রাস্ট্র স্পার্টায় পালিয়ে গেলে তিনি এথেন্সবাসীর রোষানলে পরেন এবং তারা তার বিচারের ব্যবস্হা করে।
কিন্তু তাদের রাগের প্রধান উৎস পালিয়ে যাওয়ায় তার মিত্রদের দিকে নজর দেয়। এই উইচ-হান্টের নজর পরে তার শিক্ষক সক্রেটিসের উপরে। ওয়াটারফিল্ডের মতে সক্রেটিসের মৃত্যুর কারণ এথেন্সে দেবতাদের অস্বীকার করা ছিলো না। এই অভিযোগ আনা হয়েছিলো শুধুমাত্রই প্রতিশোধ স্পৃহাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার জন্য।
সক্রেটিসকে বলা হয়ে থাকে পশ্চিমা দর্শনের জনক।
সত্যিকার অর্থেই তার বিশ্বাস ছিলো মানুষের ইচ্ছাশক্তি এবং মানসিক ক্ষমতার উপরে। মৃত্যুর আগের দিনগুলোতে বন্দীদশা থেকে মুক্ত হওয়ার সবচেয়ে সহজ রাস্তাটা তিনি নিতে অস্বীকার করেন এটা ভেবেই যে তাহলে প্রকান্তরে সেটা জনগনের জন্য অমঙ্গঁলই বয়ে আনবে। ফলে তিনি মনেপ্রাণে যে 'কারণে' বিশ্বাস করতেন সে 'কারণের' জন্যই মৃত্যুকে বরণ করে নেন। অন্যদিকে তার সেই 'কারণই' তাকে আসলে হত্যা করে। আর গনতন্ত্রের এই ডাবল-এজড সোর্ড আমরা আজও বহন করে চলেছি।
এথেন্সের গনতন্ত্র থেকে আমরা সবচেয়ে বড় যে জিনিষটা শিখতে পারি সেটা হলো যে কেউ এবং যে কোন কিছুই দুর্নীতি গ্রস্হ হতে পারে। তাই গনতন্ত্র যদি চরমপন্হীদের হাতে যায় তবে গনতন্ত্রও হয়ে উঠতে পারে অমঙ্গলজনক।
ভাবানুবাদ: When Democracy's fair to a fault ------ Yoni Goldstein
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।