ব্লাডঃ এবি নেগেটিভ।
তখন ২০০০ কিংবা ২০০১ সাল। সম্ভবতঃ ফেব্র“য়ারী অথবা মার্চ মাসের শেষের দিক। ভলবোর একটা বাসে চেপে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ভ্রমণ সরঞ্জাম হিসেবে বরাবরই সঙ্গে যা থাকে তা-ই, কাঁধে একটা ঝোলার মতো ব্যাগ, ব্যাগে কয়েকটা পেন্সিল, কলম, ইরেজার, ক’টা কাগজ, কয়েক টুকরা প্যাস্টেল রঙ আর ক’টা গ্লাস মার্কার।
কাপড়-চোপড় বলতে কিছুই নাই। ময়লা যে দু’একটা কাপড় সাথে আছে তার ভেতর আমি ঢুকেই আছি। হাতে একটা স্কেচ্ খাতা।
সঙ্গী, মানে আমি নিজেই একজনের সঙ্গী। উনার সাথে আমার পরিচয় বেশী দিনের নয়।
উনি সেক্টর কমাণ্ডার মেজর জলিলের ভাতিজা। বয়স্ক। উনি আমাকে উনার সাথে নিয়েছেন যেন আমি সার্বক্ষণিক আঁকি ও আঁকতে পারি সিলেটের মনোরম দৃশ্য। এবারই আমার সিলেট ভ্রমণ প্রথম নয়। এর আগেও অনেক বার সিলেট সুনামগঞ্জ এসেছি এবং একটানা ৮/৯ মাস থেকেছি, ওটা অন্য প্রসঙ্গ।
বাস চলছে শো-শো করে। উনি বসে বসে পবিত্র কোরআনের ইংরেজী ভার্সন পড়ছেন আর মাঝে মাঝে বলছেন
তুমি তোমার কাজ কর।
বলি- এখানে কী কাজ করবো ?
কাজ জানলে অনেক কিছুই করা যায়।
ভেবে পাইনা কী করবো।
হঠাৎ চোখ পড়লো লুকিং মিররের দিকে।
ক্লোজ-আপ আকারে দুইটি মানবীর মুখচ্ছবি জ্বলজ্বল করছে। আহা কী সৌন্দর্য ! এরকম কাউরো সামনে দাঁড়ানো আমার পক্ষে কোন কালেই সম্ভব নয়। বার বার দেখছি। হাজার বার দেখছি। লক্ষ বার দেখছি।
ইতোমধ্যে অনেক সময় গড়িয়ে যায়। নাক, কান, চোখ, মুখ সবই দেখছি। একেবারে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। এমন ভাবে দেখছি যেন গিলে খাব। আমার এভাবে দেখা তাদেরও চোখ এড়ায় না।
তারাও দেখে ফেলে। একবার না, কয়েক বার। এক পর্যায়ে তাদেরকে অসহ্য-রাগান্বীত লাগছে। আমারও দেখা প্রায় শেষের পর্যায়ে। ফাইনাল হচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ এভাবে দেখাদেখি-চোখাচোখি হওয়ার মধ্যেই হঠাৎ অগ্নিমূর্তি ধারণ করে একজন এসে আমার সীটের সামনে হাজির। আমার হার্টবীট প্রায় বন্ধ। প্যান্ট নষ্ট হবার যোগাড়। এসি বাসে আমি ঘামতে শুরু করলাম। আমার মুখে কোন রা’ নেই-
এই ছেলে, আয়নায় আর তাকাবেনা।
অসভ্য, অভদ্র. . . কোথাকার ।
আমি বেকুব, পুরো বেকুব বনে গেলাম। শুধু আমিই নই বাসের অনেক যাত্রীও। বুক ফেটে কান্না আসছে। সামনের ঘটনা মনে করে আবার হাসতেও ইচ্ছে করছে।
আমার সঙ্গীতো থ’। আবার একমনে ইংরেজীতে কোরআন পড়তে লাগলেন। আমিও আবার আমার কাজে . . .।
কিছুক্ষণ পর, সম্ভবতঃ মৌলভী বাজার পার হলে কিংবা তার আগেই বাসটা থামলো। অনেকেই নামছেন।
দুরুদুরু বক্ষে, বুকে অনেক ঝাড় ফুঁক দিয়ে, দো’য়া কালাম যা জানি তা চিবিয়ে খেয়ে আস্তে আস্তে মানবী দু’টার সামনে গিয়ে স্বপ্রতিভ ভঙ্গিতে দাঁড়াতেই। চেঁচিয়ে -
তুমি এখানেও ? ওদিকে দাঁড়াও।
যেন আমাকে সহ্যই করতে পারছেন না।
তবুও ভয়ে ভয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে তার পোর্ট্রেট আঁকা পেইজটা মানবীর সামনে ধরে- আফা আফনের একটা অটোগ্রা. . .
বলা শেষ না হতেই
ওহ ! মাই গড -বলেই সে-কী চিৎকার !
আমার পানি পিপাসা লেগে যায়। তাদের চিৎকার শুনে আমার সঙ্গী কেন যেন ভয় পেয়ে যান (মান ইজ্জতের ভয়েই নাকী কে জানে)।
সো মাচ নাইস !
তুমি আর্টিস্ট ?
কোথায় পড় ?
কী কর ?
কোথায় যাবে ?
কী খাও ?
ইত্যাদি ইত্যাদি. . .
যত্তসব আজাইরা প্যাচাল। (চলবে)
আগের লেখা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।