আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসসস মেয়ে হলে কতই না সুবিধা!!!! আসলেই কি সুবিধা???

লিখতে তো দেখি ভালোই লাগে.......

মেয়ে হওয়ার সুবিধা নিয়ে অনেক ভায়েরাই অনেক পোষ্ট করেছেন। এক ব্লগার ভাই তো রীতিমত মেয়ে নিক নিয়েই ফেলেছেন বুঝি। হায়রে আমার ছেলে বন্ধুরা ! মেয়ে হওয়ার সুবাদে আমরা অলিখিত কিছু সুবিধা ভোগ করি তাই তাদের সহ্য হয়না, আর তারা ছেলে হওয়ার পুরষ্কার স্বরূপ ঘরে বাইরে কত যে লিখিত ও অলিখিত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে তার হিসাব কে নিবে! আমরা কিন্তু তা শুধু সহ্যই করিনা বরং সে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পথে অনেকক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করে থাকি। বাবার প্রতি, ভাইয়ের প্রতি, স্বামীর প্রতি কিংবা সন্তানের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে উদ্বুদ্ধ হয়ে কত যে নারী তার জীবনের কত যে চাওয়া নিৎস্বার্থে বিলিয়ে দেয় তার সংখ্যা অগণিত। তবুও ভাবে ত্যাগেই সুখ, আমারই তো আপনজন! যাক সে সব কথা ।

আমি এ বিষয়ে বিতর্কে যেতে চাই না । কারণ এ বিতর্কের ইতি আদো আছে কিনা তা আমার অজানা। আমি আজ মেয়ে হওয়ার কিছু অসুবিধার কথা নিয়ে বলতে এসেছি যেটা আমি এবং আমার অন্যান্য মেয়ে কলিগরা প্রতি পদে পদে অনুভব করছে। যখন থেকেই জব করতে এসেছি তখন থেকেই খেয়াল করছি আমাদের সমাজে এমন কিছু সুযোগ সন্ধানী পুরুষজাতি আছে যারা সুযোগ পেলেই মেয়েদের সাথে আড্ডা মারতে, গল্প করতে কিংবা অপ্রয়োজনীয় নাক গলাতে ব্যতিব্যস্ত থাকে। বিরক্তিকর এসব সামাজিক কীট কে প্রতি পদে পদে পাশ কাটিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার থাকেনা।

এসব লুইচ্ছাদের খুবই টেকনিক্যালি হেন্ডেল করতে হয় আমাদের। না হলে দেখা যাবে অফিসে আমাদের নিয়ে এমন সব আজে-বাজে রটনা রটছে যার র-ও আমাদের অবগতির মধ্যে নেই। এই গেল এক ধরণের সমস্যার কথা। এবার আসি অন্য ধরণের আরেক সমস্যার কথা নিয়ে। সাধারণতই বাংলাদেশী অফিস গুলিতে মেয়ে চাকুরীজীবির সংখ্যা কম থাকে।

তাই ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের প্রতি সিনিয়র বসদের দৃষ্টি থাকে সজাগ। বিশেষ করে যেসব বসরা একটু লুজ টাইপের থাকে তাদের জন্য এ কথা খুবই প্রযোজ্য। ছোট-খাট কোনো কাজ পড়লেই সাথে সাথে অমুক (মেয়ে) কে ডাকা, একটু-আধটু ভুল হলে অহেতুক চিৎকার-চেঁচামেচি করে চেয়ারের বাহাদুরি দেখানো, কাজ না থাকলেও নানান কাজের অজুহাত দেখিয়ে ৬টা/৭টা পর্যন্ত আটকে রাখা এসব তো এখন আমাদের অফিস গুলির জন্য নিত্ত-নৈমেত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কালই আমার এক মোষ্ট সিনিয়র বস আমাকে ডেকেছিলেন খুবই একটা সিমপল কাজ করার জন্য। প্রথমেই বলে নেই উনার সম্পর্কে।

উনি আমাদের অফিসের খুবই হাস্যকর একটি চরিত্র, সবাই উনার পিছে পিছে উনাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এসব হাসি-তামাশার মাঝে আমাদের এক মেয়ে কলিগ মাঝে মাঝে জড়িয়ে পড়ে যদিও এসবে তার কোনো হাত নেই। কোন সময়, কোন জায়গায় কিংবা কাকে কি বলতে হবে, এমন কি কাকে দিয়ে কি কাজ করাতে হবে সে সম্পর্কে উনার বোধশক্তির সমূহ ঘাটতি রয়েছে। এমন ও দেখা গেছে রুম ভর্তি মানুষ বসে আছে , ওদের সবার সামনে উনি আমার কলিগকে বলছে আপনার তো কোনো কাজ নেই শুধু হাই হিল পড়ে ঠগ ঠগ করে হাঁটা ছাড়া। বেচারী আমার কলিগটির তখন কি অবস্থা, সে আমার পাশে এসে বিড় বিড় করে বলে কুত্তা একটা (এটা তার মুদ্রা দোষ মনে হয়, কারো কোনো কিছু ভালো না লাগলেই সে এ ওয়ার্ডটা বলে ), এতোগুলি মানুষের সামনে আমাকে অপমান করছে। এসব কান্ড দেখে এবং ওর বলার ধরণ দেখে আমার না মাঝে মাঝে হাসি পেয়ে যায় যদিও বুঝি হাসা উচিত নয়।

একবার নাকি উনি ওদের রুমে গিয়েছিলো তো ওখানে গিয়ে উনি দেখে ওদের সামনের জানালাটা খোলা, তখন নাকি বলেছে এই জানালা খোলা কেন? পাশের রুমের ছেলেদের সাথে টাংকি মারা হয় না! এই হচ্ছে উনার স্বভাব। ও! একটা কথা বলতে ভুলে গেছি ঐ মেয়েটিই আমাদের মধ্যে একমাত্র অবিবাহিত এবং সবচেয়ে জুনিয়র কর্মকর্তা । উনি আমাকে যে কাজটি করার জন্য ডেকেছিলেন সেটি হচ্ছে নেহায়েতই নগন্য একটি কাজ। একটি চিঠি কম্পিউটারে করা আছে সেখানে কিছু ভুল সংশোধন করে একটু ফরমেটিং করে প্রিন্ট করে দেওয়া। কম্পিউটারে যে কাজ করে সে আসেনি তাই উনি তা প্রিন্ট করতে পারছেনা।

যাক আমি উনার জন্য কাজটি করছিলাম। এরই ফাঁকে দেখি উনি আমার ঐ কলিগকে ফোন করলেন । ফোন কলের কথোপকথন নিম্নরূপ: স্যারঃ আপনি কি অফিসে আছেন? (আমি হালকা যা শুনতে পারছিলাম) কলিগঃ স্যার আমি আমার মা কে নিয়ে অমুক জায়গায় (সম্ভবত ডাক্তারের কাছে বলছে) আসছি লান্চ এর পরে অফিস করব ভাইয়াকে বলে আসছি (ওর ইমিডিয়েট বস)। স্যারঃ বলে গেছেন ভালো কথা কিন্তু আপনি কি আমার কোনো খবর রাখেন যে আমার উপর দিয়ে এখানে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আপনারা মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবেন, একজন ভার্সিটি যাবেন আমার কি হবে....(শুধু শুধুই , তেমন কোনো ইম্পরটেন্ট কাজ ছিলো না ওর ) এটুকু বলতেই আমার কলিগটি করল কি লাইনটা কেটে দিল।

স্যার তো গেল আরো খেঁপে... আবার ফোন করলেন.... স্যারঃ আপনি লাইন টা কেটে দিলেন কেন? আপনি জানেন আমি আপনার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে পারব। কলিগঃ স্যার আমার আজকে পুরো দিনটাই ছুটি নেওয়ার কথা ছিলো আমি ছুটি নেই নাই কাজের কথা ভেবে। লান্চ এর পর থেকে অফিস করব। কে শুনে কার কথা....। স্যারঃ ছুটি নেন আর যাই করেন আপনি লাইন কাটলেন কেন।

আমি এখনই চেয়ারম্যান স্যারের কাছে যাচ্ছি আপনার বিরুদ্ধে নালিশ করব....... এই বলে উনি চুপ হয়ে গেলেন...যা বুঝলাম আমার কলিগ আবারো লাইন কেটে দিয়েছে....সম্ভবত ওর স্বভাবগত ভাবে স্যারকে কুত্তা বলে গালি দিচ্ছে..... গালি তো শুনতেই হবে উনার স্বভাবের কারণেই উনাকে গালি শুনতে হচ্ছে............। আর তাছাড়া উনি যে চেয়ারম্যান স্যারের কাছে কিইবা নালিশ করবেন তা আমার কলিগের ভালোই জানা আছে তাই তো ও এতো বীরদর্পে লাইনটা কেটে দিয়েছে। এই হচ্ছে অফিস আদালতে মেয়েদের অবস্থা। এখন যদি ওর জায়গায় কোনো ছেলে হতো তাহলে এই ঝামেলাই পড়তে হতো না। মাঝে মাঝেই কত ছেলেরা অফিস ফাঁকি দিচ্ছে বিশেষ কোনো কাজ না থাকলে তার খবর কে নিচ্ছে! আর ও বলে গিয়েও শান্তি পাচ্ছে না.......... ভাই এই ধরণের সুযোগ-সুবিধা পেতে আমরা মেয়েরা চাই না ।

আমরা নরমাল মানুষের মতোই নরমাল ভাবেই রাস্তা-ঘাটে, অফিস-আদালতে চলাচল করতে চাই , দরকার হলে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় টেক্সিক্যাবের জন্য, ব্যাংকে বিল পরিশোধের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে আমাদের আপত্তি নেই শুধু আমাদের কে আমাদের স্বাভাবিক চলাফেরার জন্য সুস্থ , স্বাভাবিক একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে দেন......তাতেই চলবে। এর চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা নিশ্প্রয়োজন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।