আমি সিনেমা দেখি
অথচ বনমালীর সাথে আমার দেখাই হয়নি কোনো দিন। কিন্তু বনমালী আমাকে চিনতো ঠিকই। কিভাবে চিনতো বা কেন চিনতো তা বলেনি কোনো দিন। বনমালীর নামটা শুনলেই আমার চোখে একটা অদ্ভূত অবয়বের মানুষ ভেসে উঠতো। হাসিখুশি একটা মানুষ কিন্তু কোথায় যেন একটা বিষন্নতা ঘিরে রেখেছে।
আজ আর তা মনে করতে পারছি না। বনমালীর চিঠিগুলো আজ পুড়ে গেছে। কোথায় কখন কিভাবে সে আমায় দেখেছিল জানায়নি কোনদিন। অথচ আমার ঠিকানায় চিঠি পাঠাতো অবলীলায়। ঠিকানাটাও জোগাড় করে নিয়েছিল।
কিভাবে জানায়নি।
প্রথম চিঠি পেয়ে বেশ চিন্তায়ই পড়েছিলাম। হাতের লেখাটাও মিলাতে পারিনি পরিচিত কারো সাথে। বনমালী শুধু লিখেই যেত- আমি পড়তাম। আমার লিখার সাধ্য ছিল না।
বনমালী ঠিকানা দেয়নি।
বনমালীর প্রতি চিঠিতেই ছিল আশা জাগানিয়া স্বপ্ন ঘোর। ছিল সূর্যের গল্প। সূর্য- সূর্যাস্তের রঙ। বনমালীর কখনো আমায় সূর্যোদয় নিয়ে লিখেনি।
ভাবি সূর্যের মৃত্যুই বুঝি বনমালীকে টানতো। আমিও এখন বনমালীর মতো মৃত্যুঘোরগ্রস্ত। আমিও এখন সূর্যের মৃত্যু দেখি প্রতিদিন দেখি বনমালীর সূর্যাস্ত।
বনমালীর চিঠির একটা বিশেষ দিক কোনদিনই আমার চোখে পড়েনি। আজই হঠাৎ মনে হলো।
বনমালীর সাধু ভাষায় লিখতো।
বনমালী একবার চিঠির ভিতরে আমাকে পাঠিয়ে ছিল প্রজাপতির একটা ডানা। অদ্ভূত সুন্দর ছিল। প্রজাপতির ডানাটি আজ পুড়ছে। চিঠিগুলোর মতোই।
বনমালীও আজ ডুবছে সূর্যের মতোই। হয়তো বনমালী নয় আমি ডুবছি। আবার আমার উদয় হবে কাল কোনো ঘোরগ্রস্ত দিনে।
বনমালী তুমি কি জান; আমিও আজ তোমার মতো শিকার। আমিও প্রজাপতি শিকার করি।
ধরি উড়ন্ত প্রজাপতি। অদ্ভূত সুন্দর পাখনাগুলো খুলে নেই তার জীবন্ত শরীর থেকে। রঙহীন-বিবর্ণ দেহটার দিকে আর ফিরেও তাকাই না। চলে যাই বুকজাগা ধূ-ধূ নদীর পাড়ে দেখি দেখি আর দেখি সূর্যাস্ত-বনমালীর সূর্যাস্ত। সাধজাগে আমিও ডুবে যাই সূর্যের সাথে কিংবা নদীর অতলে ডুব দিয়ে তুলে আনি কালকের সূর্যটাকে।
বনমালী তুমি আমাকে সূর্যাস্ত দিয়েছো। তুমি আমাকে মৃত্যুঘোর দিয়েছো। শিখিয়েছো উড়ন্ত প্রজাপতির রঙিন ডানা সংগ্রহ। অথচ তুমি আমাকে সূর্যদোয় শেখাওনি। তাই আমিও পুড়ে যাচ্ছি তোমার চিঠির সাথে পুড়ে যাচ্ছি প্রজাপতির ডানার মতো।
আজ আর আমাকে চিঠি লিখ না তুমি; বনমালী। আজ একটিবার শুধু এক মুহূর্তের জন্যে তুমি আমার মুখোমুখি হও। আমি দেখি তুমি কিভাবে আমার খসাও; কিভাবে দেখ আমার অস্ত যাওয়ার দৃশ্য।
আমি জানি তুমি আর এখন প্রজাপতি ধরো না । ওসব খেলা আমারও এক ঘেয়ে লাগে।
আমিও পাখিমুখী। রঙ বেরঙের অনেক পাখি। প্রজাতিকে প্রজাতি পাখিদের মুক্ত হওয়া জীবন তোমাকে খুব বেশী কষ্ট দেয়? বনমালী, জানো আজ কোনো পাখিকে আকাশে উড়তে দেখলে আমি নিভে যাই। আবারও আমার ডুবে যেতে ইচ্ছে করে। পাখিগুলো এমন কেন হয়? উড়ে উড়ে ধরা দেয় শিকারী খাঁচায়।
তবে কি পাখিরাও ঘুড়ি। সুতোয় বাঁধা থাকতে চায়। আমি তো কোন দিনও কোনো গেরো কোনো সুতোয় বাঁধিনি। অথচ পাখিরা সব বাঁধা পরে গেরো গেরো শিকারী জালে; ডানা ভেঙ্গে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।