কত আজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই দূরকে করিলে নিকট,বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।
ও আমি ঢাকায় যাইমু/পোটলা গুছায় রেডী হইলাম
আমি আর জানু-----
ট্রেন রাত ৯.৫০এ। গোছগাছ শেষ। মালপত্র সব গাড়িতে তোলা হল। মালপত্র মানে দুটি ট্রাভেলিং ব্যাগ ও একটি বড় চটের বস্তা।
আমি সাধারনত লাগেজ কি ভাবে কম করা যায় সেই চেষ্টাই করি। এবার একটু ভিমরতি ই ধরল।
আমার একটি সবজি বাগান আছে সেখানে হয়েছে প্রচুর পরিমানে ঢেঁড়শ, পুই, ঝিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, জালি কুমড়া, কাচাঁ মরিচ, আরও আনেক আনেক সব্জী।
সারা জীবন ঢাকায় থেকেছি। জমিতে আবাদ করা আমার কাজ না।
এই মফস্বলে আমার বাসার আশেপাশে জায়গা যেমন আছে তেমনি আছে আবাদ করার জন্য লোক রবিউল।
রবিউল খুব যত্ন করে আবাদ করে। যদি বলি অত দিয়ে কি হবে? ওর সোজা উত্তর আপনার বাড়ি, স্যারের বাড়ি, আমার বাড়ি, পাড়া প্রতিবেশী- আর এই বাসায় কত লাগে হিসাব করেন? আমি আর কিছু বলি না । ওকে বলে কোন লাভ নাই ও যা করার করবেই। আমি বাগানে যেয়ে মাঝে মাঝে সব্জি তুলি।
বাগানে যেয়ে শাক সবজি তুলতে কিন্তু দারুন মজা।
মনে হল ঢাকাবাসীদের একটু আমার বাগানের টাটকা সব্জি খাওয়াই। আমার সব্জিতে তো আর সার কিংবা কীটনাশক নাই। এর চেহারা যেমন আলাদা- স্বাদ ও তথৈবচ। তাই তৈরী করে ফেললাম একটি বড় বস্তা।
আহা! আহা! --বস্তার দিকে তাকালেই পরান জুড়ায়। রবিউলের উৎসাহ সবচেয়ে বেশি। সে যত পারছে বস্তায় ভরছে।
গাড়িতে উঠবার সময় জানুর চোখে পড়ল বস্তাটা। বলল -“এটা কি?” আমার চোখের তীব্রদৃষ্টির সামনে ( যার অর্থ আমার বাপের বাড়িতে আমি কি নিচ্ছি তার জবাব দেব নাকি।
?! যদিও তাকেই লোকজন দিয়ে এগুলো নেবার ব্যাবস্থা করতে হবে ?!!!)
আর একটি কথাও না বলে গাড়িতে চড়ল।
যথা সময়ে ট্রেন এল। লোকজন ধরা ধরি করে লাগেজ ট্রেনে তুলে দিল। বস্তা তো ট্রেনের কূপে ঢোকে না?? ঢুকলেও রাখা যাচ্ছে না। আমাকে খুব করুন কন্ঠে জানু বলল-- “এটা কি না নিলেই নয়?”
আমি তৎখনাৎ এটেন্ডেন্টকে বললাম --“এই বস্তাটা অন্য কোথাও রাখেন না প্লিজ শুধু এয়ারপোর্ট স্টেশনে নামিয়ে দেবেন।
“ সাথে সাথে এটেন্ডেন্ট রাজি হয়ে বলল --------- " এই করিডোরের শেষ মাথায় টয়লেট এর সামনে টুলবক্স আছে তার উপরে বস্তাটা রেখে দিচ্ছি। । "
আমি বিজয়ের একটা হাসি ছুঁড়ে দিলাম জানুর উদ্দ্যেশে।
জানু শুধু বলল “এই সব ঝামেলা করলে লোকজন বিরক্ত হয়। “
আমি ঝরঝরে কন্ঠে বললাম “যেমন আমরা হই? তাতে কি তোমার বস্দের কোন ক্ষতি হয়? তারা তো ভালই আছে !! তাদের নামের আগে জাদরেল বিশেষন ব্যাবহার করা হয়।
আমি তো একটা বস্তা আমার সাথেই নিয়ে যাচ্ছি। আর তোমার বস্দের যে প্রতি মাসে চালের বস্তা কিনে পাঠাও তাতে তোমার জাত যায় না। তোমার এই স্টাফরাই তখন বলে এই স্যারের কোমরে জোর নাই তার বস্দেররে না কইতে পারে না। ?!”
জানুর মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম কোন বিরক্তির ছাপ পরেছে কি না? পরলে কতটুকু ??? বেশি পরলেই খবর আছে?? নাহ্ বাচ্চাদের সাথে দুস্টামি করছে । ।
বাচ্চারা কোরিডোরে যাচ্ছে আসছে, ওরা না ঘুমানো পর্যন্ত কূপের দরজা বন্ধ করা যাবে না।
রাত বারটায় পাঁচবিবি স্টেশনে ট্রেন থামল। পাঁচবিবি হিলির পরের স্টেশন। মুহুর্তে দেখি আমাদের বগি বিডিআরএর পূর্ন দখলে। বিডিআর যাবার সময় আমাদের কূপের সামনে একবার দাড়াঁয় আবার ফেরার সময় দাড়াঁয়, ভিতরে উঁকি দেয়।
কি মুসকিল!!! উঠে দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে দিলাম । বাচ্চাদের শুইয়ে দিয়ে বললাম “বিডিআর এসেছে তারাতারি ঘুমাও। “ ওরা শুয়ে পড়ল। এখন শুরু হল মাঝে মাঝে আমাদের কূপে জানালা দিয়ে টর্চের আলো ফেলে ভিতরটা দেখা!! মহা বিরক্তিকর। একবার রাগ হয়ে বললাম “এই কি! কি ব্যাপার? কি চান?" কোন কথা বলে না।
হটাৎ আমাদের জানালার পাশ থেকেই চিৎকার ভেসে এল এই বস্তা আনো এই যে পাইছি। স্যাররে ডাকো। ফেন্সিডিলের বোতল। পাওয়া গেল একেবারে আমাদের পাশের কূপ থেকেই। তাই ওরা আমাদের কুপটাও বার বার দেখছিল।
একটা রাবার পাইপের ভিতরে ১লিটারের কোক, সেভেন আপ এর বোতল ভর্তি কোকের রঙের পানিও। পাওয়া গেল দুই বস্তা।
আমাকে জানু বলল--“তুমি জানালা খুলে দেখছ কেন ? জানালা বন্ধ কর,”
বলেই সে জানালা বন্ধ করতে উদ্দ্যত হল ।
আমি বললাম ,”--এখন জানালা বন্ধ করলে তোমার এই কূপ ই প্রথমেই সার্চ করবে??”
জানু ভয় পেয়ে বলল ,”কি যে আজে বাজে কথা বল না। “
আমি বললাম,” এই তুমি মোবাইল জ্বালিয়ে তোমার বার্থের নীচটা দেখ আমি আমারটা দেখি।
আমরা তো রুম চেক না করে উঠেছি যদি কিছু থাকে??”
ও তারাতারি মোবাইলটা জ্বালিয়ে বার্থএর নীচটা দেখে নিল।
এমন সময় চিৎকার শুনলাম-----------------এটা কার বস্তা। ??
জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে মনে হল এটা তো আমারই বস্তা যা এটেন্ডেন্ট টুল বক্স এর উপরে রেখেছিল। কেউ তো দেখি বলছে না ওটা কার বস্তা। আমার হলে তো এটেন্ডেন্ট বলত এটা আমাদের বস্তা।
?!
আমি স্লো মোর্সনের সিনেমার মত দেখছি --বস্তা নামাল, উপরের বাধঁন খোলা হল, একজন বিডিআর বস্তা কাৎ করল , বস্তা থেকে বের হোল একে একে একটি ছোট্ট কাঠাঁল, মিষ্টি কুমড়া, জালি কুমড়া, ঢেঁড়শ, শসা, ঝিঙ্গা, করল্লা, পেঁপে, কাচা মরিচ, দুই ঝুটি রশুন, পিয়াজ, কাঁচা আম, লেবু --------- আর রবিউলের শ্রম। ----------------
আবার ও তারা বলল-- যার বস্তা ভর্তি করে বেঁধে ট্রেনে
তুলে নেন । যেহেতু প্রথমে কেউ বলে নাই এটা কার বস্তা তাই পরেও কেউ বলল না এটা কার বস্তা। আমিতো আমিই, জানু যে এককাঠি উপরে।
কেন রে বাবা, তোরা প্লাটফর্মে ঢালতে পারলি, তবে বস্তাটা ভর্তি করে আগের জ়ায়গায় রাখতে পারলিনা কেন ? ট্রেন ছেড়ে দিল।
পিছনে পরে রইল আমার কাঁঠাল, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, ঢেড়ঁশ-----------।
আমার জানু আমার পাশে এসে বসল। হাতটা ধরে মৃদু চাপ দিয়ে বলল,” তোমার ক্ষেত তো আছেই। আমরা তো দুইদিন পরই ফিরছি। তখন বস্তা ভর্তি করে সবজ়ি লোক দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেব।
মনে মনে বললাম ---এই জন্যই তো তোমাকে এত-------
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।