আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খরস্রোতা গোমতী এখন ঘুমপাড়ানির গল্প

সময়কে কাধে নিয়ে চলো বন্ধু
ছবি দুটি কুমিল্লার গোমতী নদীর। এখানে আজ পায়ে হেটে নদী পাড় হওয়া যায়। নদীতে পানি নেই। কিন্তু ড্রেজিংও হচ্ছে না। ফলে ঝুকির মুখে শহরবাসী ও ৭ উপজেলার মানুষ।

নাব্যতা হারাচ্ছে গোমতী নদী, সেচ বিঘ্নিত, পানির প্রবাহ স্মরণকালের সর্বনিন্মে। । বালু উত্তোলন বন্ধ; কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, বেকার হয়েছে প্রায় ২সহস্রাধিক শ্রমিক। । হাইকোর্টে রীট পিটিশন চুড়ান্ত শুনানী না হওয়ায় ইজারা দেয়া হচ্ছেনা কুমিল্লা গোমতী নদীর ৭টি বালু মহাল।

ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। প্রায় ৩বছর বালু মহাল বন্ধ হয়ে থাকায় বেকার হয়েছে ২ সহস্রাধিক শ্রমিক। ভয়াবহ বন্যার আশংকায় কুমিল্লা শহর। কুমিল্লার গোমতী নদীর তলদেশ গত ৩বছরে মাটি আর বালি জমে উচ্চতা বেড়েছে ৫ফুট। ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ বন্যার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অতীতের চেয়ে সর্বনিন্মে রয়েছে গোমতীর পানি প্রবাহ। ফলে লো-লিফট পাম্পগুলি বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। আড়াইশত লো-লিফট পাম্পের মাধ্যমে ১৪হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়ে থাকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে গোমতী নদী শুকায়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। কুমিল্লা গোমতী নদীর ৭টি বালু মহালের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রীট পিটিশন চুড়ান্ত শুনানী না হওয়ায় ইজারা দিতে না পারায় সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

বেকার হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক লোক। আর কুমিল্লা শহর ও আশপাশের অঞ্চলের ইমারত নির্মাতা আর উন্নয়ন কাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদাররা উচ্চ মূল্যে বালি ক্রয় করতে হচ্ছে। অপরদিকে বালি না উত্তোলন করায় নদীর তলদেশ বালু জমে নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। নানা অনিয়মের অভিযোগে গত ২০০৭সালের ২৬জুন থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়। হাইকোর্টে রীট পিটিশন চুড়ান্ত শুনানী না হওয়ায় বালু মহালগুলো ইজারা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এর ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি নদীর তলদেশ বালু জমে ভরাট হওয়ায় নাব্যতা কমে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনন্ত্রনালয়ে একটি পত্র ও প্রদান করা হয় সম্প্রতি। এদিকে নদীর নাব্যতা কমার পাশাপাশি বালুর সংকটও বিরাজ করছে। বালু উত্তোলনের কাজে জড়িত সহস্রাধিক শ্রমিক ও বেকার হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদী থেকে বালি উত্তোলনের ফলে গোমতি নদীর পানি প্রবাহ থাকতো।

বালি উত্তোলনের ফলে মাটি জমতে পারতোনা। বর্তমানে নদীর তলদেশ মাটি ও বালি দিয়ে ভরাট হয়ে যাবার কারণে বন্যার আশংকা রয়েছে। ১৯৮২সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬টি বৃহৎ বন্যায় শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হলেও এ ব্যাপারে নেই কোন পরিকল্পনা। গোমতী নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া এবং নদীর তলদেশ উপরে উঠে যাওয়ায় গোমতী নদীর ড্রেজিং অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে পরিকল্পিত উপায়ে নদীর তলদেশ ড্রেজিং কিংবা ব্যক্তিগতভাবে নদীর তলদেশ খনন করা গেলে নাব্যতা ফিরে আসবে।

১৯৯০সালে গোমতীর বাধ নির্মাণ হলেও দীর্ঘদিনেও তা আর সংস্কার হয়নি। এদিকে গোমতীর উজানে ভারতে পানির ব্যবহার ব্যাপক করলেও বাংলাদেশ অংশে পানির সঠিক ব্যবহার করা হচ্ছে না। বেসরকারি পর্যায়ে ২৫০টি লো-লিফটের মাধ্যমে প্রায় ১৪হাজার একর সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও বর্তমানে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে সেচের কাজ। গোমতী নদীর পানি প্রবাহ ১২ মাসী। শুস্ক মৌসুমে (চৈত্র-বৈশাখ) অতীতে গোমতী নদীর পানির প্রবাহ ছিল সর্বনিন্ম সেকেন্ডে ৮.০০কিউসেক কিন্তু চলতি শুস্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ নেমে এসেছে সেকেন্ডে ৫.২২কিউসেক।

ইহা এ যাবৎকালের প্রবাহের সর্বনিন্ম বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোমতী নদী অতীতে কখনো এতো শুকিয়ে যায়নি। গোমতী নদীর দুই তীরে ব্যক্তি মালিকানায় প্রায় আড়াইশ লো-লিফটে পাম্পের মাধ্যমে কৃষকরা সেচ সুবিধা পেয়ে থাকে। প্রায় ১৪হাজার হেক্টর জমিতে এ সেচ সুবিধা দেয়া হয়। গোমতীতে পানি না থাকায় পাম্পগুলি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে গোমতী নদী শুকিয়ে যাবার পাশিপাশি পরিবেশ ও সেচ কার্যে বিপর্যয় নেমে আসবে। এদিকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলাধীন গোমতী নদীর ৬টি বালু মহালে দীর্ঘ দিন যাবৎ বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদীতে পলি জমছে। ২০০৭সালের উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। হাইকোর্টে ৬টি পৃথক রীটের কারণে বালু উত্তোলন হচ্ছে না বৈধভাবে। বালু উত্তোলন না হওয়ায় এবং গোমতী নদী ড্রেজিং না হওয়ায় নদীর তলদেশ থেকে মাটি কাটা হলে কিছুটা রক্ষা পাবে।

সর্বশেষ খবর হলো দীর্ঘদিন যাবৎ বালুমহালে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও প্রশাসনের অনুমতির অপেক্ষা না করে স্থানীয় এমপির সহযাত্রীরা বালু উত্তোলন শুরু করেছেন। সেটা ভালো দিক যে বালু তো উত্তোলন হচ্ছে। কিন্তু খারাপ দিক হলো সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু শহর রক্ষায় সরকার আর প্রশাসনের দিকে কতক্ষন তাকিয়ে থাকবেন তারা সেটার সময়কি আছে?
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।