আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিনাংকাবাউঃ যেখানে মেয়েরাই সর্বেসর্বা!



এ সপ্তাহের অঙ্গনা ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে মাত্র দু’ঘন্টার আকাশ ভ্রমন দূরত্বে, পশ্চিম সুমাত্রার কোটো পাঞ্জাং নামক জায়গায় মিনাংকাবাউ গোত্র অবস্থিত, ইতিহাসের মাতৃতান্ত্রিক সভ্যতার প্রায় সর্বশেষ প্রমান হিসেবে এখনো যে গোত্রে মেয়েরাই সর্বেসর্বা। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ চার মিলিয়ন মিনাংকাবাউ মানুষের প্রায় প্রত্যেকেই বর্তমান সময়ের সর্ববৃহৎ মাতৃতান্ত্রিক গোত্রের একজন সদস্য হিসেবে গর্বিত। এ গোত্রের সব কিছুই মেয়েদের অধিকারে। ষাড়ের শিং’র মত করে বানানো ছাদওয়ালা ঘর, নারিকেল গাছ, ঘরের পিছনে জমা করে রাখা ফলের গোদাম এবং ধানের ক্ষেত- সবকিছুর মালিক আক্ষরিক অর্থেই ঘরের মেয়ে। মিনাংকাবাউ গোত্রের অন্যতম প্রথা অনুযায়ী বিয়ের পর কনে তার বরের সাথে কিছুদিনের জন্যে শ্বশুড়বাড়ি থেকে আসলেও, মূলতঃ বরকেই তার বধূর ঘরে চলে আসতে হয়, শুধুমাত্র নিজের দেহ এবং গায়ের কাপড় নিয়ে।

বিয়েতে সাধারনত বর বা কনে উভয়পক্ষ থেকেই কোনো যৌতুক প্রথার প্রচলন নেই। বিয়ের পর কনের পরিবারকে নিজের পরিবারের মত মেনে নেয় বর। মিনাংকাবাউ গ্রামের মেয়েদের পেশার মধ্যে ক্ষেত-খামারী এবং অন্যান্য বিভিন্ন কাজ থাকলেও, মূলত ইন্দোনেশিয়ার ট্র্যাডিশনাল ‘মুকেনা’ সেলাই করে ঘর চালায় বেশীর ভাগ মেয়েরা। ‘মুকেনা’ হল সাদা রং’র মাথা থেকে কোমড় এবং কোমড় থেকে পা ঢেকে মেয়েদের নামাজ পড়ার পোষাক। মিনাংকাবাউ মেয়েরা মুকেনা বানিয়ে ঘরের ছেলেকে দিয়ে জাকার্তা এবং প্রতিবেশী দেশ মালেশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়।

ছেলেরা সেখানে ব্যবসা করে টাকা কামিয়ে ঘরে ফিরে ঘরের কর্ত্রীর কাছে জমা দেয়। মিনাংকাবাউ গোত্রের প্রতিটি বিবাহিতা দম্পত্তির একান্ত কামনা তাদের প্রথম সন্তান যেন মেয়ে হয়। যে দম্পত্তির যত বেশী মেয়ে সে দম্পত্তি তত বেশী সুখী বলে গন্য করা হয়। এর অন্যতম কারন, গোত্রের সমস্ত কিছু মূলতঃ মেয়ের উপরেই নির্ভরশীল। সাধারনত প্রতিবেশীর ছেলের সাথে খেলাধূলা, প্রেম এবং বিয়ে, অবশেষে ঘরের দায়িত্ব বুঝে নেয়া মিনাংকাবাউ গোত্রের মেয়েদের অন্যতম সাধারন প্রথা।

সাধারনতঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়কারী, অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে দায়িত্ববান এবং মেয়েদের মত পরিশ্রমী ছেলেদেরকে মিলাংকাবাউ মেয়েদের পছন্দ বেশী। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ছেলেরা সাধারনত ভাল রান্না করার দক্ষতার উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। গোত্রের পুরুষেরাও তাদের মেয়েদের কতৃত্বে মোটেও অসন্তুষ্ট নয়। গোত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ সদস্য ‘জুল’র ভাষায়, ‘আমাদের মেয়েরা যদি আমাদের সব কথাই মেনে নিত, তাদের নিজেদের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী না হত, তাহলে আমাদের জীবনে কোনো মজা থাকতোনা। জীবন নিরামিষ হয়ে যেত।

আমরা ছেলে এবং মেয়েরা মিলেমিশে কাজ করি, মিলেমিশে থাকি- এতেই আমাদের আনন্দ’। মিনাংকাবাউ গোত্রের মূল বিশ্বাস ইসলাম হলেও, গোত্রের মেয়েরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এবং প্রার্থনার সময় বড় চাদরে নিজেদের সতর ঢেকে রাখলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসলাম এবং সমাজ এ দুই কে মিলিয়ে নিজেদের মত করে প্রথা তৈরী করে নিতে হয় তাদেরকে। বিশেষ করে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী সম্পত্তি বন্টনে মেয়েদেরকে ছেলেদের অর্ধেক দেয়ার আইন এ গোত্রে অনুপস্থিত। মিনাংকাবাউ গোত্রের বর্তমান অন্যতম গোত্রপতি যাকে সবাই ‘দাদু’ বলে ডাকে, তিনি বলেন ‘কিছু ক্ষেত্রে প্রথা এবং ইসলাম একে অন্যের সাথে সংঘর্ষ করে থাকে। কিন্তু বৃহৎভাবে দেখলে বুঝা যায় প্রথা এবং ইসলাম- উভয়ের উদ্দেশ্যই হলো মানুষের কল্যান।

সমাজের কল্যান। মেয়েদেরকে কর্তৃত্ব দেয়া মূলতঃ সমাজের জন্যেই কল্যানকর। আমরা তাই মেয়েদেরকে সম্পত্তির মূল অংশ দিয়ে থাকি’। যদিও এ গোত্রের বেশীর ভাগ মেয়েই তাদের পুরো জীবনে নিজেদের গ্রামের বাইরে যায়নি, তারপরও তাদের আত্মবিশ্বাস, অনবরতঃ কাজ করে যাওয়া এবং সমাজ চালানোর দক্ষতা প্রায় অবিশ্বাস্যই বলা যায়, বিশেষ করে মুসলিম এই স্বয়ংসম্পূর্ন গ্রামের আত্মবিশ্বাসী মেয়েরা মাতৃতান্ত্রিক সুন্দর সমাজ ব্যবস্থার জীবন্ত প্রমান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.