চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার, স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও!
অবিলম্বে জাহেদুর রহমান রোকনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার কর!আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র, কবি ও সংস্কৃতি কর্মী জাহেদুর রহমান রোকনকে চ.বি. শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি বিনা অপরাধে এক বছরের জন্য বহিস্কার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ তোলা হয় যে, তিনি দু'জন শিক্ষককে লাঞ্চিত করেছেন।
প্রকৃত ঘটনা হলো; সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী দ্বারা এক ছাত্রী নিপীড়নের প্রতিবাদে আন্দোলন চলছিল। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উক্ত নিপীড়নকারীকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়। উক্ত বহিস্কারাদেশ ঘোষণার প্রাক্কালে কয়েক হাজার ছাত্রদের মধ্যে দাঁড়িয়ে উপাচার্য, প্রক্টরসহ শিক্ষকরা বক্তব্য রাখছিলেন।
এসময় ছাত্রী নিপীড়নকারী রাজুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু "দয়াল"সহ অন্যান্য সহযোগিরা আন্দোলন বানচাল করার উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিতভাবে পেছন থেকে জুতা নিক্ষেপ করে এবং "ধর, ধর" আওয়াজ তুলে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। এসময় জাহেদুর রহমান রোকন শিক্ষকদের কাছে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে আসা ধাক্কায় তিনি সামনের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কিন্তু. দু'জন শিক্ষক এ ঘটনাকে আক্রমনের প্রচেষ্টা হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করেন। তাৎক্ষনিকভাবেই রোক শিক্ষকদের কাছে ভুল বুঝাবুঝি নিরসনের চেষ্টা করেন এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরাও শিক্ষকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন।
পরদিন ২ জুন ২০০৯ দৈনিক "আমাদের সময়"-এ জাহেদুর রহমান রোকনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে জানা যায়, তাকে তখনও বহিষ্কার করা হয় নি। শিক্ষক সমিতি তার শাস্তি দাবী করে ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়েছে। এ সংবাদের ভিত্তিতে রোকনসহ তার সহপাঠিরা উপাচার্য, প্রক্টর এবং শিক্ষক সমিতির কাছে লিখিতভাবে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেন।
তারা অভিযোগকারী শিক্ষকের সাথে দেখা করেন এবং বোঝাতে সক্ষম হন। এর প্রেক্ষিতে অভিযোগকারী শিক্ষক ফোনে শিক্ষক সমিতিকে রোকনকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে জানিয়ে দেন।
কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য, এতকিছু পরও ৩ জুন ২০০৯ বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা রকষা কমিটি একজন নির্দোষ ছাত্রকে অসত্য অভিযোগে শাস্তি প্রদান করল। শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির এই সিদ্ধান্ত কেবল একজন নিরাপরাধ ছাতের শিক্ষা জীবনকেই চরমভাবে ব্যাহত করল তাই নয়, একটি পরিবারকেও আজ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, জাহেদুর রহমান রোকন প্রগতির পরিব্রাজক দল, প্রপদ-এর একজন সংগঠক।
তিনি কবি ও সংস্কৃতি কর্মী হিসাবে সুপরিচিত। একজন সংগঠক হিসাবে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, পাহাড় ধ্বস, সিডর, বন্যা, মঙ্গা, শীতে বারবার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি একজন ছাত্র নেতা হিসাবে ছাত্র সমাজের স্বার্থে কিংবা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেছেন। এরকম একজন সচেতন ও সংস্কৃতিবান মানুস সম্মানিত শিক্ষকদের লাঞ্চিত করতে পারেন- এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
আমরা অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছি, একজন ছাত্রী নিপীড়নকারীর বিচার ও শাস্তির জন্য যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবী করতে হলো, আন্দোলনে যেতে হলো, কেবল তারপরই নিপীড়নকারীর শাস্তি হলো।
যেখানে সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠনগুলোর হানাহানির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বারবার বিপন্ন হলেও তাদের বিরুদ্ধে এই প্রশাসন আজও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। তদন্তের বেড়াজালে সবই আটকে রইল। অথচ সেখানে রোকনকে শাস্তি দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ এতটুকু দেরী করলেন না। রাতারাতি তাকে বহিষ্কার করে দিলেন! তদন্ত করলেন না, তার আবেদনের এতটুকু তোয়াক্কা করলেন না, এমনকি আত্মপক্ষ সমর্থনেরও কোন সুযোগ দিলেন না। প্রশাসন এখন শাস্তি দেয়ার জন্য নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনকারীদের খুঁজছে।
প্রশাসনের চোখে অন্যায়ের প্রতিবাদ করাটাই কি সবচেয়ে (নিপীড়ন ও হানাহানির চেয়েও) বড় অপরাধ? প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে প্রশাসন কি সন্ত্রাসী ও নিপীড়কদেরই রক্ষা করে চলবেন? আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে যারা কথা বলবেন তারাই প্রশাসনের জিঘাংসা ও পাল্টা দমননীতির শিকার হবেন? প্রশাসনের আইনের প্রয়োগের লক্ষ্য কি কেবল প্রতিবাদী ছাত্রদেরই তাড়া করবে? জাহেদুর রহমান রোকন কি তবে প্রশাসনের এই দুর্নীতি ও জিঘাংসারই শিকার হলেন?
এভাবে ঘটনাটি কেবল একজন রোকনের উপর বিনা অপরাধে শাস্তি চাপিয়ে দেয়ার মত সংকীণ বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটা সকল ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়ানো প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তি ও জনগণের বিরুদ্ধে দমনাভিযানের অংশে পরিণত হয়। একটা সামগ্রিক ও নীতিগত প্রশ্নে পরিণত হয়।
ছাত্ররা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কারনে প্রশাসন ও শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির মধ্যে নিজেদের অতি সরকার সমর্থক হিসাবে জাহির করতে তৎপর গুটিকয়েক শিক্ষক আন্দোলনকারীদের উপর প্রতিশোধ প্রবণ হয়ে উঠেছিলেন। তারা ব্যাপক শিক্ষকদের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন।
আমরা মনে করি, প্রকৃত ঘটনা জানা থাকলে কোন বিবেকবান শিক্ষকই এই চরম অন্যায়ের পক্ষে দঁড়াতেন না।
শুধু তা-ই নয়, ছাত্র নিয়েই শিক্ষক। শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের ভালোবাসেন। অথচ এই ধরনের চরম অন্যায্যত যদি শিক্ষকদের নামে ছাত্রদের উপর প্রশাসন চাপিয়ে দেয়, তা ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককেও চরম অবিশ্বাস, অশ্রদ্ধা ও বৈরিতার দিকেই পরিচালিত করবে। শিক্ষার পরিবেশের উপর যার ফল হতে সুদূর প্রসারী।
এটা কোন ছাত্র-শিক্ষকের জন্য কাম্য হতে পারে না।
উচ্চশিক্ষার অনিবার্য শত হলো বিশ্ববিদালয়ের গণতান্ত্রিক প্রশাসন ব্যবস্থা। এজন্য এদেশের ছাত্র-জনতা বহু রক্ত দিয়েছে। আজ চ.বি. প্রশাসন যে চরম স্বেচ্ছাচারিতার প্রকাশ ঘটাচ্ছে, তা কেবল উচ্চ শিক্ষার প্রতিবন্ধকই নয়, এদেশের জনগণের ঐতিহাসিক অর্জনকে ধুলিস্যাত করছে। ব্যাপক ছাত্র-জনতা তা কিছুতেই মেনে নেবে না।
একজন নিপীড়ন বিরোধী প্রতিবাদী কবি জাহেদুর রহমান রোকন আজ সংগঠিত প্রশাসনিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এই বর্বর অন্যায় মেনে নেয়া যায় না। এ অন্যায় প্রশ্রয় পেতে পারেনা। আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশের ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ, সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ব্যক্তি ও সংগঠনকে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। আসুন, আমরা জাহেদুর রহমান রোকনের পাশে দাঁড়াই! সোচ্চার কন্ঠে আওয়াজ তুলি:
১।
অবিলম্বে জাহেদুর রহমান রোকনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার কর!
২। ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দমননীতি পরিহার কর!
৩। অগণতান্ত্রিক-স্বেচ্ছাচারি প্রশাসন ব্যবস্থা নিপাত যাক! গণতান্ত্রিক প্রশাসন চাই!
উপরোক্তদাবী সমূহ নিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচী শুরু হয়েছে। অংশগ্রহণ করতে আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
আমাদের ই-মেইলঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।