আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবচেয় বড় বস্তির ক্ষুদ্র এক বাসিন্দার দিনপঞ্জি

প্রত্যেকে মোরা পরের তরে

আমি বাস করি বিশ্বের সবচেয় বড় বস্তিতে। এজন্য মাঝে মাঝে গর্বও বোধ করি, কারন “সবচেয় বড়” শব্দটিতো আছে! সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত এই বস্তি প্রতিনিয়ত তার বৃহত্তম বস্তি হবার কারন জানান দেয়, মাঝে মাঝে গভীর রাতে গভীর ঘুমেও অনুভব করি দিনকে দিন তার আরো বড় হয়ে উঠার চেষ্টাকে। একজন আমজনতা হিসাবে এই বস্তিতে আমার একটি সাধারন দিনের অসাধারন সব অভিজ্ঞতার গল্প খানিকটা তুলে ধরতে চাই, জানি আপনাদের কাছে নতুন কিছু হবেনা কারন আপনারাও যে আমজনতা। আগে শুনতাম দাদা-দাদিরা ঘুম থেকে উঠতেন পাখির ডাকে, নিদেন পক্ষে সুমিষ্ট স্বরের পাখি পাওয়া না গেলেও মোরগের ডাকেও তারা ঘুম থেকে উঠতেন। আর বস্তির বাসিন্দা আমি ঘুম থেকে উঠি চাকাযুক্ত যন্ত্রদানবের হর্নের কর্কশ শব্দে।

রাজ্যের বিরক্তিকে সঙ্গী করে ব্রাশের উপরে পেস্ট লাগিয়ে সেটা মুখে গলিয়ে পানির কল ঘুরাতেই কয়েক ফোটা পানি পরেই শেষ! ওয়াও কি চমৎকার, বাড়ীওয়ালা আঙ্কেলকে মোবাইলে কল দিয়ে বললাম আঙ্কেল পানি নাই। যাই হোক পানি আসা শুরু, পানিতে নর্দমার গন্ধ ! বিরক্তি চরমে উঠে আবার ফোন বাড়ীওয়ালাকে। একি অবস্থা আঙ্কেল পানিতে সোয়ারেজের গন্ধ কেন?!?! বললেন, কি করবে বাবা ওয়াসার লাইন আর সোয়ারেজের লাইন যে এক হয়ে গিয়েছে!! ঠিক না করা পর্যন্ত এমনি গন্ধ থাকবে। নাস্তার টেবিলে বসে পড়লাম, নাস্তা কৈ বুয়া ?? বুয়া বললেন ভাই গ্যাসের চাপ নাই, কিছু রান্না করন যাইতাছেনা আজকা বাইরে খাইয়া লইয়েন। হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারলাম না।

ইচ্ছামতন বাড়ীওয়ালাকে আর গ্যাসওয়ালাকে অভিশাপ দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে হলাম। রিকশাওয়ালাকে বললাম ফার্মগেট যাবে, বললো যাবো। ভাড়া কত, উত্তর আসলো যা ভাড়া তাই দিয়েন। বাস ধরতে হবে, একটু আগে না গেলে বাসে উঠার জন্য মারামারি করতে হবে !! রিকশা থেকে নেমে ১৫ টাকা ভাড়া দিলাম, রিকশাওয়ালা মারমুখি হয়ে গেল সাথে সাথে, ২০ টাকা দেন। কি আজব ব্যপার ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা দিলাম, তাও তার হবে না! সে নাছোড়বান্দা।

নিজের ভদ্রতার মুখোশ খুলে বের হতে পারলাম না, ৫ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে রিকশাওয়ালাকে আভিশাপ দিতে দিতে বাসের জন্য প্রধান সড়কে ঠাই দাড়িয়ে রইলাম। বাস আসে বাস যায়, উঠতে পারি না। অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত দৌড়াতে দৌড়াতে বাসে উঠলাম। বাসে বসে থাকা যাত্রীরা হইহই করে উঠলো, ঐ কন্ডাকটার দাঁড়াইয়া যাত্রী নিসস কেন-ভাড়া পাবি না, চিৎকার চেঁচামেচিতে অতিষ্ঠ হয়ে ঝুলতে লাগলাম। ঝুলে ঝুলে যাচ্ছি, দাড়িয়ে থেকেও তন্দ্রার মতন চলে এলো !! হঠাৎ প্রচন্ড ধাক্কা খেয়ে চমকে উঠলাম, বাসের ড্রাইভার তার কোম্পানির আরেক বাসের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে, কে আগে যাবে, এই মারে তো সেই মরে, রেয়ার ভিউ মিরর ভেঙ্গে গুড়াগুড়া হয়ে গেল! এই যাত্রা পিতৃপ্রদত্ত প্রাণটাকে নিয়ে কোন রকমে বাস থেকে নামতে পারলেই হল, এই কোম্পানির বাসে আর না।

বাসের যাত্রীরা সবাই পূর্ণ উদ্দমে গলা ফাটিয়ে চলেছে, কি চমৎকার পরিবেশ!! যাই হোক অফিসে পোঁছালাম। রাজ্যের বিরক্তিকে ঝেড়ে ফেলে কাজে ডুবে গেলাম। অফিস শেষে বাড়ি ফিরব, একটা ঠাণ্ডা শিতল শিহরন মেরুদন্ড বেয়ে নিচে নেমে গেলো !! জ্যাম আর জ্যাম, বৃষ্টির পানি জমে আইল্যান্ড কে পর্যন্ত ডুবোল্যান্ডে পরিনত করেছে, এক হাতে জুতো জোড়া, আরেক হাতে ছাতি আর কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দিলাম হাটা। রাস্তায় নামার যো নেই কোমর পানি, আইল্যান্ডে হাটার অবস্থা নাই, সব দখল করে নিয়েছে হকাররা। কোনরকমে হেটে চলেছি বাসার উদ্দেশ্যে, হেটেই যেতে হবে আর মনে মনে অভিশাপ দিয়ে চললাম এই কি আমাদের প্রাপ্য ছিল।

কত আর অভিশাপ দিব, কাকেই বা দিব ?? সব কিছু মেনে নিয়ে হেটে চলা, যত যাইহোক তবুও ভালোবাসি বস্তিটাকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.