আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনুষ্ঠানীকতা নয়, প্রয়োজন নৈতিকতা

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!

ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় ধর্মগুলো প্রবর্তনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যুগের চাহিদার প্রেক্ষিতে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে শুদ্ধ এবং সভ্য করা। এ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রবর্তকররা অবলম্বন হিসেবে নিয়েছিলেন এক কাল্পনীক মহাশক্তিধরের অসীম ক্ষমতাকে। তবে অবলম্বন যাকেই করা হোক না কেন এটা স্বীকার করতে আমার কোন দ্বিধা নেই যে ধর্মের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তিজীবনকে শুদ্ধ এবং শৃংখলাবদ্ধ করা। এ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রতিটি ধর্মই (তা একেশ্বরবাদী বা বহুশ্বেরবাদীই হোক) তথাকথিত কাল্পনীক সেই মহাশক্তিধরকে খুশি করার পথ অবলম্বন করেছিল। তাকে খুশি করা এবং তাঁর পরিনতিতে সমাজকে সভ্য করার মানসে প্রতিটি ধর্মই দুটি রূপ গ্রহণ করেছিল; যথাঃ আনুষ্ঠানীক আচরণ এবং নৈতিকতার চর্চা।

আমার লেখার উদ্দেশ্যকে সরলীকরণের স্বার্থে মহাশক্তিধরকে খুশি করার এ পাথেয় দুটো নিয়ে কিঞ্চিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে বোধ করি। ১. আনুষ্ঠানীক আচরণঃ আনুষ্ঠানীক আচরণ বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে স্রষ্টাকে খুশি করার মানসে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী কর্তৃক স্রষ্টার কাছে নত হওয়া এবং তার প্রার্থনা করা। এর ধরণ হতে পারে নামাজ, রোজা, ব্রত, পুজা, অনশন ইত্যাদি ইত্যাদি। আদতে এটা হচ্ছে নৈতিকতা অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পিত রুটিন কর্মপ্রচেষ্টা। আনুষ্ঠানীক আচরণগুলো এ কারণেই প্রবর্তন করা হযেছে যাতে তা পালনের ফাকে ফাকে স্রষ্টাকে খুশি করার জন্য কিছু ভাল কাজ করতে হয় এবং অবিরত এ চেষ্টার মাধ্যমে তা ব্যক্তির অভ্যাসে পরিনত হয়।

এখানে নামাজে দাড়িয়ে স্রষ্টার কাছে নত হওয়া বা দেবতাকে ফুল দিয়ে তাঁকে খুশি করা একটি আনুষ্ঠানীক আচরণ মাত্র। মূল লক্ষ্য হচ্ছে নৈতিকতা বা সততা অর্জন। ২. নৈতিকতার চর্চাঃ নৈতিকতার চর্চা বলতে বুঝানো হয়েছে সততা, ন্যয়নিষ্ঠতা, কর্তব্যপরায়নতা, আর্থ-সামাজিক ন্যায়বিচার, পরোপকার, দানশীলতা, ক্ষমাশীলতা ইত্যাদি ইত্যাদির চর্চা এবং প্রয়োগ। ধর্মের মূল উদ্দেশ্য আদতে নৈতিকতার প্রতিষ্ঠাই। আনুষ্ঠানীক আচরণগুলোর প্রবর্তনও কিন্তু নৈতিকতা অর্জনের জন্যেই।

মহাশক্তিধরকে এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে কারণ ব্যক্তির উপদেশ হয়তো কম মানুষই শুনবে বা মানবে। এর স্থলে মহাশক্তিধর কেউ থাকলে, তাকে খুশি করতে পারলে বা খারাপ কাজের ফলস্বরূপ তার কাছ থেকে শাস্তির আশংকা থাকলে মানুষ সুশৃংখল হবে এবং সহজেই নৈতিকতার দিকে ধাবিত হবে। এবার মূল আলোচনায় আসি। পূর্বেই বলেছি ধর্মগুলোর আসল উদ্দেশ্য নৈতিকতার প্রতিষ্ঠা। আনুষ্ঠানীক আচরণগুলো ছিল তা অর্জনের জন্য বাহানা মাত্র।

কিন্তু মানুষ এখন কি করছে? তাঁরা কি নৈতিক হচ্ছে? নাকি শুধু আনুষ্ঠানীক ধর্মকেই মানছে? আমার মনে হয় আমার শেষোক্ত পর্যবেক্ষণটির দিকেই বেশিরভাগ মানুষ সায় দিবেন। ধর্মপালনকে এখন মানুষ শুধু একটি আনুষ্ঠানীক আচরণ হিসেবেই গ্রহণ করছে। নৈতিক শিক্ষাগুলোকে এড়িয়ে চলছে সযতনে। ঠিক এই কারণেই আপনি দেখবেন একজন মানুষ নামাজ পড়ার পরও, রোজা রাখার পরও বা দেবতাকে অর্ঘ্য দেবার পরও ঘুষ খাচ্ছে, মিথ্যা কথা বলছে, মানুষকে ঠকাচ্ছে, মানুষকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করছে। কথাগুলো মোটেও বাড়িয়ে বা বানিয়ে বলা নয়।

বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকেই এগুলো সত্য। নিবিষ্ট চিত্তে ধর্মপালন করার পরও মানুষ এমন আচরণ কেন করছে? এর একটাই উত্তর, যে মহাশক্তিধরের ভয়ে মানুষ এতোদিন এমন নেতিবাচক আচরণ থেকে দূরে ছিল তাঁর প্রতি বিশ্বাস কিংবা তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে তাঁরা সন্দিহান। শাস্তির ভয় তাদের মাঝে আর বিন্দুমাত্র নেই। আনুষ্ঠানীকভাবে ধর্মপালন করছে শুধুমাত্র এই কারণে যে বাপ-দাদারা তা করে এসেছে এবং তা পালনের মাধ্যমে অন্তত বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান একটা ভাল মানুষের আবরণ গায়ে চড়ানো যায়। এতকিছুর পরও যদি আপনি সেই লোকটির সামনে স্রষ্টা বা ধর্ম সম্পর্কে কোন কটু মন্তব্য করেন বা এগুলো নিয়ে সাধারণ আলোচনার বা বিতর্কের অবতারণা করেন তবে দেখবেন কেমন রুক্ষভাবে সে আপনার দিকে তেড়ে আসছে।

শারীরিক লাঞ্চনারও শিকার হতে পারেন। কেন সে বা তাঁরা এমন করে? এর একটাই কারন, ধর্মকে যেকোন মূল্যে টিকিয়ে রাখতে হবে। কেন টিকিয়ে রাখতে তার কিছু কারণ আপনিও জানেন, আমিও জানি। এগুলো নিয়ে আজকে আর আলোচনা নাইবা করলাম। তবে সত্যি কথা হচ্ছে এই যে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও সামষ্টিকতার স্বার্থে আমাদের অবশ্যই নৈতিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

অগ্রগতির পথে এর কোন বিকল্প নেই। আলোচনার প্রেক্ষিতে এটা অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে ধর্মের মাধ্যমে আনুষ্ঠানীকতা অর্জন সম্ভব, নৈতিকতা নয়। এর বিকল্প হিসেবে একটিমাত্র উপায়ই আছে। তা হচ্ছে বিবেকের জাগরণ। মানুষ বিবেকবোধ সম্পন্ন প্রাণী।

তাকে ভয় দেখিয়ে নৈতিক হতে বাধ্য করার কোন যৌক্তিকতা নেই বা সম্ভবও নয়। তাকে একমাত্র সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে এবং এর পরিনতিতে বিবেকের জাগরণের মাধ্যমে নৈতিক করার চেষ্টা চালাতে হবে এবং নৈতিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.