রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন
চট্রগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার তদন্তে ক্রমাগত যেসব বিষয় বেরিয়ে আসছে, তা দেশের জন্য এক ভয়াবহ চিত্র। দেশের নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমলা, গোয়েন্দা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল, সেখানে আমরা জাতি হিসাবে কতটুকু নিরাপদ ছিলাম, তা সহজেই অনুমেয়। একটি দেশের সরকার যদি অন্য একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানার চেষ্টা করেন, তবে তা যে কতটা আত্মঘাতি কর্মকান্ড; তা একটু সুস্থ্য মস্তিস্কে চিন্তা করলেই বোঝা যায়। এর ফলে যে আন্তঃরাষ্ট্র বৈরীতা বৃদ্ধি পায়, তা কে না জানে।
অনেকে বলার চেষ্টা করছেন, অস্ত্র আনা হয়েছে তো কি হয়েছে? নিজের দেশে ব্যবহারের জন্য আনেননি? অন্যদেশের জন্য আনা হয়েছে।
একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে আমাদের উচিত অন্য একটি মুক্তিকামী গোষ্ঠীকে সহযোগিতা প্রদান করা। ইত্যাদি, ইত্যাদি। যুক্তি হিসাবে তারা দেখাচ্ছেন, এর আগে ভারত পার্বত্য চট্রগ্রামে বিদ্রোহ তৈরী করেছিল, নেপালে তারা বিদ্রোহ তৈরী করছে, শ্রীলংকায় তামিল তৈরী করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ ভারত যেহেতু এসব করতে পারে, আমরাও তাই করতে পারি। বিষয়গুলি আবেগীয়, কুটনৈতিক পরিভাষায় অগ্রহনযোগ্য এবং পরিত্যাজ্য।
দক্ষিন এশিয়ার বৃহৎ রাষ্ট্র হিসাবে ভারতের দাদাগিরির অনেক প্রমান আছে, এটা নিয়ে কুটনৈতিক পর্যায়ে তর্ক-বিতর্ক হওয়া প্রয়োজন, এটা অনস্বীকার্য। কিন্তু সংঘাতের রাস্তায় হেঁটে চলার অর্থ সেই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত তৈরী করা, যা আর্ন্তজাতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। ভারতের দাদাগিরির বিপক্ষে অর্থাৎ যারা ভারতের আধিপত্যবাদী চিন্তাকে প্রশয় দেয় না, তারা বিভিন্নভাবে কুটনৈতিক প্রচেষ্টায় অব্যাহত রেখে ইস্যুভিত্তিক চাপ প্রয়োগের প্রচেষ্টা রেখেছেন। কিন্তু তথাকথিত ভারত বিরোধিতার নামে দেশে জাতিবিদ্বেষ তৈরী করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেন এবং আর্ন্তজাতিক ফোরামে ভারতের তাবেদারী করেন, তারাই এসব আবেগের কথা বলেন। কারণ, দেশের মধ্যে সস্তা জাতীয়তাবাদী চরিত্র (জাতীয়বাদের অর্থ যারা বোঝেন বলে মনে হয় না, তারা জাতীয়তাবাদ বলতে বোঝেন, ভারত বিরোধিতা) জাহির করার মাধ্যমে তারা দেশের সাধারন মানুষের চেতনাকে উস্কে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চান।
রাজনৈতিক চিন্তায় এটা উর্বর মস্তিস্কজনিত কর্মকান্ড, যা দিয়ে বড় কিছু অর্জন করা যায় না।
দলীয় চিন্তার বাইরে এসে যদি একবার চিন্তা করুন, কি বিপদজনক কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলেন আমাদের রক্ষকরা। এরা কি বাংলাদেশের বন্ধু? কোনভাবেই নয়। এরাই দেশের শত্রু। যারা নিজেদের আর্থিক লাভের (এখানে কোন রাজনীতি ছিল না, রাজনীতি থাকলে অন্যদের ছিল, যাদের জন্য তারা অর্থের বিনিময়ে কামলা খেটেছে) জন্য ১৪ কোটি বাঙালীর জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে উদ্যোত হয়েছিল।
কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে আমরা পার্বত্য চট্রগ্রামে শান্তি চুক্তি করতে পেরিছি, ভারতের সাথে পানি চুক্তি হয়েছে। সুতরাং সেই কুটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে দেশে এবং দেশের বাইরে। অভিযোগ করতে পারেন, পানি চুক্তি হয়েছে তো কি হয়েছে, পানি তো পাচ্ছি না। ভারতের সাথে বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেটা তো পুরণ হচ্ছে না। ভারত টিপাইমুখ বাঁধ তৈরী করতে যাচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।
চুপ থাকা যায় কি করে?
নিশ্চয় চুপ থাকা যায় না। ভারত যদি বাংলদেশের স্বার্থের বিপক্ষে কোনকিছু করতে তাহলে অবশ্যই প্রতিবাদ জানাতে হবে। তবে প্রতিবাদের ভাষা ও প্রক্রিয়া যাতে হিংসাত্বক না হয়ে যা চাই তা যেন কুটনৈতিকভাবে অর্জন করার জন্য যুক্তিযুক্ত হয়, সেজন্য জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে লবি করতে হবে। আর যদি ভারতের কর্মকান্ড আমদের দেশের সার্বভৌমত্বের বিপক্ষে চলে যায়, তাহলে দেশের ১৪ কোটি মানুষ লড়বে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। এজন্য তথাকথিত ভারত বিরোধীরা কতটা লড়বেন, জানি না; যারা ভারতের কর্মকান্ডকে বিশ্লেষণমূলকভাবে গ্রহন ও বর্জন করেন, তারা নিশ্চয় আত্ববিসর্জন করবেন, এটুকুর ইতিহাস বাঙালীর আছে; সেই ইতিহাসের গর্বিত অংশীদার হিসাবে রাষ্ট্রকে রক্ষার দায়িত্ব তারাই নেবেন।
আশাকরি, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি নয়, মানুষের চোখে একবার দেখুন, কতবড় কান্ড-জ্ঞানহীন অপরাধ তারা করেছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।