আমি আর আমার ছোট বোন পিঠাপিঠি ছিলাম বলে সারাক্ষণ একসাথে থাকতাম। আমাদের একটা প্রিয় কাজ ছিল সোফার পিছনে বসে গুটুর গুটুর করে গল্প করা। একদিন এভাবে দুজন বসে গল্প করছি। এমন সময় বড়বোনের অংক টিচার এলেন পড়াতে। ছোটবোন একলাফে সোফার পিছন থেকে বের হয়ে দৌড় দিয়ে ভিতরের ঘরে চলে গেল।
আমার লজ্জা লাগছিল স্যারের সামনে সোফার পিছন থেকে বের হতে। ভাবলাম অসুবিধা কী, স্যার একঘন্টা পড়িয়ে চলে যাবেন, আমি তারপর বের হব, স্যার কিছু জানবেনও না। চুপচাপ শুয়ে রইলাম। কোন শব্দ করছিনা। কিন্তু আধাঘন্টা পর আমার ছোটবোনটা এমন দাগাবাজি করল, স্যারের সামনে সে সোফার পিছনে উঁকি মেরে বলল, তুমি এখনও এখানে শুয়ে শুয়ে কী কর, বের হও।
এখন না পারি বের হতে, না পারি শুয়ে থাকতে। বাধ্য হয়ে বের হয়ে দিলাম একটা দৌড়। তবে যাবার আগে স্যারের হতভম্ব চেহারার দিকে একবার তাকাতে ভুলিনি।
ছোটবোন যখন বেশী ছোট ছিল, আমার সাথে খেলাধূলা শুরু করেনি, তখন আমি আমার মেজ বোনের সাথে সময় কাটাতাম। মেজআপা বানিয়ে বানিয়ে আমাকে অনেক কথা বলত, আমি এত বোকা ছিলাম যে সব বিশ্বাস করতাম।
পরে অবশ্য বুঝতে পেরেছিলাম সেগুলো সত্যি না। তখন আমি আমার ছোটবোনের উপর সেগুলো চালানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় সে আমার চেয়েও চালাক ছিল, কিছুতেই আমার কোন গালগপ্পতে বিশ্বাস করতনা।
পড়াশোনায় ছোটবোনের একেবারে মন ছিলনা। ওকে স্কুলে ভর্তি করানোর পর ওর প্রতিদিনের রুটিন ছিল যেটা তা হল, সারাদিন খেলাধূলা আর দুষ্টুমি করে কাটাত, রাতে যখন সবাই শুয়ে পড়ত, তখন সে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করত।
জিজ্ঞেস করলে বলত, আমার অনেক বাড়ির কাজ রয়েছে, একটাও করা হয়নি। আম্মা বলতেন, তো দিনের বেলা করলিনা কেন? তখন সে একটা মুখঝামটা দিয়ে বলত, আমিতো সারাদিন পড়ার সময়ই পাইনা।
একটা সময় ছিল যখন আমাদের মধ্যে কে ছোট কে বড় বোঝা যেত না। সবাই আমাদের যমজ ভাবত। একবার এক পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আমার নাম ডেকেছে, আমি স্টেজে চলে গেছি পুরষ্কার নিতে।
এর মধ্যে একজন ভদ্রলোক ছোটবোনকে দিয়েছে এক ঝাড়ি, তোমার নাম ডাকছে তুমি হা করে বসে আছ কেন। বেচারী ধমকটা হজম করে বলল, যার নাম ডেকেছে সে গেছেতো। ভদ্রলোক বোকার মত একবার আমাকে দেখে, একবার ছোটবোনের দিকে তাকায়।
এখন অবশ্য এরকম সমস্যা হয়না। যমজ ভাবেনা কেউ আমাদের।
খালি কে ছোট কে বড় এটা এখনও বোঝেনা। আমাকে মনে করে ছোট। এতে আমরা কিছু মনে করিনা। মজাই পাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।