মাঝে মাঝে মা যখন অসুস্থ হয়, তখন সে কতটা অসুস্থ থাকে আমি জানিনা। তবে এতটুকু বুঝি তার চেয়ে কয়েকগুন অসুস্থ হয়ে যাই আমি নিজে। আমার পৃথিবী পাল্টে যায় আরেক পৃথিবীতে। আমি ঘন্টার পর ঘন্টা এক জায়গায় বসে কাটিয়ে দেই। অনেক পরে বুঝতে পারি আমি আসলে একটা কাজ করছিলাম।
প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে খেতে বসে, আমি মুখে ভাত নিতে পারিনা। কোনো অনন্দঘন অনুষ্ঠানে, আড্ডায় হাসাহাসির কোনো পর্বে হাসতেই নিজের অজ্ঞাতেই আমার হাসি থেমে যায়। মস্তিস্কের কোথাও যেন একটা সংরক্ষিত তথ্য আমাকে থামিয়ে দেয়, আমার মা অসুস্থ। পৃথিবীটাই নিস্প্রাণ লাগে।
আমার মা সুস্থ হয়ে ওঠে।
আমি উল্কার গতিতে চলতে পারি। আমি পুরাতন নিস্প্রাণ পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে অবাক হই, পৃথিবীটা এতো সুন্দর কেন?
আমার মায়ের ভালো থাকা, খারাপ থাকা আমার পৃথিবীকে মুহুর্তেই উল্টে পাল্টে দেয়। কখনো সাজানো পৃথিবী ভেঙ্গে চুর করে দেয়, কখনো গুড়ো গুড়ো করা পৃথিবী আশ্চর্য নিপুনতায় গড়ে দেয়।
মায়ের এই টান আগে কখনোই বুঝিনি। কী নির্দ্ধিধায় মায়ের প্রতি অবাধ্যতায় পার করেছি আমার শৈশব।
কী নির্দ্ধিধায় মায়ের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়ে নিজের মতো চলেছি কৈশরের পথে।
পার করে দেয়া সময়, মাকে কষ্ট দেয়ার সময় ভেবে আমি অসার হয়ে যাই। ভাবি কেউ কী আছে, ফিরিয়ে দেবে আমার কিছু সময়? শুধরে নিতে চাই মায়ের সাথে করা ভুলগুলো।
এতো কিছুর পরও আমার মা হাসে। আমার ভুলগুলো সযতনে এড়িয়ে যায়।
আমার দেয়া কষ্টগুলো অসামান্য দক্ষতায় গোপন করে ফেলে।
আমি কৃতজ্ঞতায়, ম্লাণ হয়ে যাই।
ভাবি, এটাই হয়তো মা। সন্তানের, সব বোঝে। বুঝেই নিরব থাকে।
সন্তানের সব কিছু তার জানা। আর জানা বলেই তারপরও প্রশ্রয় দেয়।
আর সব জানে বলেই কিছুটা হতাশা কাটিয়ে উঠি। আমার এই অকৃত্রিম ভালোবাসাও হয়তো এখন আমার মা জানে।
প্রিয় মা, জানা থাকলে তো ভালো।
যদি না জানো তবে বলি, আমি মাঝে মাঝে পূণর্জন্মের প্রত্যাশী হয়ে উঠি। কারন আমার এমন শতজন্ম আমি তোমার জন্য উৎসর্গ করতে জন্মাতে চাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।