রেল পথের উপর দিয়ে কোন সড়ক পথ নির্মান করলে দুই পথের সংযোগ স্থল বা ক্রসিং এ গেট স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপত্তা বিধান জরুরী। প্রধানত: এই ক্রসিংগুলো সৃষ্টি করে সড়ক বিভাগ। অথচ এই গেট স্থাপন ও রক্ষনাবেক্ষনের সকল দায়-দায়িত্ব ও খরচ চাপান হয় রেলওয়ের উপর। রেলপথ ও সড়ক পথের দৈর্ঘ্য এবং জাতীয় বাজেটে এই দুই পথের বরাদ্দে অনুপাত বিবেচনা করলে দেখা যায় এই গেটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ও খরচ সম্পুর্ণ না হলেও অর্ধেকের বেশি হওয়া উচিৎ সড়ক বিভাগের। আবার অন্যদিকে দেখা যায়, রেল ক্রসিংগুলোতে দূর্ঘটনা হলে বেশিরভাগক্ষেত্রে মূলত: দায়ী করা হয় রেলকে।
অথচ এসব দূর্ঘটনার জন্য সিংহভাগসময়ই দায়ী থাকে সড়ক পরিবহনগুলো। সুতরাং প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই ক্রসিংগুলোতে গেট নির্মান ও এর রক্ষনাবেক্ষনের দায় ও ব্যয় ভার শুধু রেলওয়ে কেন একা বহন করবে?
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুন করে তেমন কোন রেলপথ নির্মিত হয়নি। বৃটিশ আমলের পর নতুন করে রেলপথের কোন বিকাশ ঘটেনি। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে সড়ক পথের দৈঘ্য প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। রেলওয়ে নেটওয়ার্ক ১৯৪৭ সালের ২,৮০০ কিলোমিটার থেকে ২,৭০০ কিলোমিটারে নেমে গিয়েছিল।
কিন্তু পার্বতীপুর হতে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা ও বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি পর্যন্ত এবং যমুনা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের আওতায় জামতৈল হতে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের ফলে বর্তমানে রেলপথের দৈর্ঘ্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ২,৮৩৫ কিলোমিটার হয়েছে। অন্যদিকে ১৯৪৭ সালে সড়ক পথ (পাকা রাস্তা) ছিল মাত্র ৬০০ কিলোমিটার। বর্তমানে তা বেড়ে এখন প্রায় ৪৯,৫০০ কিঃমিঃ হয়েছে। যার মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১৩,০০০ কিলোমিটার এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ৩৬,৫০০ কিলোমিটার। এই নতুন নতুন সড়কগুলো নির্মানের সময় সেগুলো অনেক জায়গায় রেলপথের উপর দিয়ে গেছে।
যার ফলে সেখানে একটি সড়ক ও রেলপথের সংযোগ বা ক্রসিং সৃষ্টি হেয়ছে। সুতরাং বলা যায় এই ক্রসিং গুলো সৃষ্টি করছে সড়ক বিভাগ । রেলপথের উপর দিয়ে সড়ক নির্মানের সময় রেলওয়ের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ নতুন ক্রসিং এর ক্ষেত্রে কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অতএব সড়ক বিভাগ রেলপথের উপর দিয়ে অনেক জায়গায় অবৈধ ক্রসিং তৈরি করেছে।
যখন রেল ও সড়ক পথের কোন ক্রসিং সৃষ্টি হয়, তখন নিরাপত্তাবিধানে সেখানে একটি গেট নির্মান করতে হয়। যেহেতু এসব গেটের নাম দেওয়া হয়েছে রেলগেট, সেহেতু একতরফা ভাবে এই সব গেটের নির্মান ও অন্য সব দায় ও খরচ রেলওয়ের উপর চাপান হয়েছে। আবার ক্রসিংগুলোতে দেখা গেছে অনেকসময় দূঘটনা ঘটে। কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দূর্ঘটনার জন্য সড়ক পরিবহন গুলোই দায়ী। দেখা গেছে, ট্রেন আসতে দেখেও ঝুকি নিয়ে পার হতে গিয়েই দূর্ঘটনা ঘটেছে।
নিয়মানুসারে ট্রেন তার নির্দিষ্ট পথ দিয়ে যাবে। ট্রেন যাবার সময় সড়ক বাহনগুলো থেমে পথ দেয়। ট্রেনকে থামিয়ে সড়ক বাহন পার হবার কোন নিয়ম নেই। অথচ বিভিন্ন দূর্ঘটনার পরবর্তীতে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে রেলগেট না থাকায় দূর্ঘটনা ঘটেছে এবং যেহেতু রেলওয়ে ক্রসিংএ গেট নির্মাণ করেনি সুতরাং তার দায় ভার চাপান হয় রেলওয়ের উপর। এটা যে রেলওয়ের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার তা বলে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
আমাদের জাতীয বাজেটে যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তার সিংহভাগই দেওয়া হয় সড়ক পথে, রেল পায় সামান্য। উদাহরণ হিসাবে ২০০৭-০৮ বছরের বাজেটের দিকে নজর দিলে দেখা যায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে সড়ক পথে বরাদ্ধ হয় ২৮৫০.৩০ কোটি টাকা ও রেল পথে বরাদ্ধ হয় ৬৮৫.৫৫ কোটি টাকা। পূর্বেই বলা হয়েছে এই সব নতুন ক্রসিং সৃষ্টি করছে সড়ক বিভাগ। সুতরাং এর নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব হওয়া উচিত সড়ক বিভাগের। অথচ তারা কৌশলে এর দায়িত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে রেলওয়ের উপর।
এসব ক্রসিং দিয়ে যত গুলো ট্রেন যাতায়াত করে তার কম করে হলেও শতগুন বেশি সড়ক বাহন যাতায়াত করে। সুতরাং এসব ক্রসিং এ গেট নির্মান এবং তার দায় দায়িত্ব ও খরচ সড়ক বিভাগের বহন করা উচিত। অথচ সড়ক বিভাগ এর কিছুই করছে না।
সুতরাং জন নিরাপত্তার স্বার্থে এখন সব নতুন নতুন ক্রসিং এ রেলগেট নির্মান সময়ের দাবি হয়ে দাড়িয়েছে। আর এক্ষেত্রে সড়ক বিভাগের উচিত রেলওয়েকে দোষারোপ না করে নতুন ক্রসিংগুলোতে গেট নির্মান ও তার দায় দায়িত্ব ও খরচ বহন করা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।