আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০৫৯ : পৃথিবীর শেষ সাই-ফাই... ( ইহা কোন কল্প গল্প নয়, ইহা স্রেফ সাই-ফাই সিজার কে উৎসর্গকৃত )

ছাগু তোষণ নীতি নির্ভর মডারেশন প্রক্রিয়াকে ধিক্কার জানাই. ব্লগের এক কোনায় জেনোসাইড বাংলাদেশের লোগো ঝুলিয়ে ছাগু তোষণ নীতির নামে ভন্ডামি বন্ধ করুন... নইলে এই মডারেশন নীতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকার নাটক বন্ধ করুন.. ব্লগ পর্যবেক্ষনে, আপাতত শুধু কমেন্টাই..
১৪ই মে, ২০৫৯... আর দশটা দিনের মতো আরেকটা বিষন্ন দিন। হাতঘড়ির পিঁপ পিঁপ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো সুজারের। অন্য দিনগুলোতে অবশ্য কখনোই অ্যালার্ম দেওয়া হয় না, সাত সকালে ঘুম ভাঙ্গলেই কি আর না ভাঙ্গলেই কি। অ্যালার্ম দেবার সময় সুজার তাই অনেক টেনশনে ছিলো, কতদিন পর হাতঘড়িটার চাবি ঘুরলো, কাজ করে কিনা কে জানে? চোখ ডলতে ডলতে হাতঘড়িটার দিকে আবার তাকালো সে, ইস আরেকটু আগের অ্যালার্ম কেনো যে দিলো না। চোখ ডলতে ডলতেই ল্যাপ্পির সামনে বসে পড়ে সুজার।

নতুন সাই-ফাই লেখা শুরু, নাম ফেসবুক... ২০৫৯ এর পৃথিবী। প্লুটো থেকে মঙ্গল ধ্বংস হয়ে যাবার পরে সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ। নিষ্প্রাণ, নির্জীব এক মৃত্যুপূরী। পারমাণবিক বিস্ফোরণের বিষক্রিয়া আর পরিবেশ দূষনের চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়ায় সেই পৃথিবীর বায়ুমন্ডল আজ গাঢ় ধূলায় ঘেরা। সেই ধূলার জাল ছিন্ন করে সুর্য মামা, চন্দ্র মামা কারো দেখা মেলা দায়... সকাল আর রাত্রি তাই শ্রেফ সময়ের কিছু ভাগ এর বেশি কিছুই না।

মৃত এই গ্রহের প্রাণের অস্তিত্বের অবশিষ্টাংশ একজন মানুষ, এক সাইফাই লেখক... জীবনের অসংখ্য চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পৃথিবীর সেই শেষ মানুষ হলো সুজার। সেই ২০৫০ এর কথা, যখন বাংলাদেশের পাহাড়পূর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রে সেই মারাত্মক বিস্ফোরণ ঘটলো সুজার তখন বান্দরবনে.. পারমাণবিক বিস্ফোরনের সেই ভয়াবহতায় পৃথিবীর শেষ মানুষটিও যখন মৃত্যুর খুব কাছাকাছি তখন চিম্বুকের এক বিশাল গুহায় প্রিয় ল্যাপটপকে নিয়ে কিভাবে যেনো বেঁচে যায় সুজার.. তারপর শুরু কঠিনতম পথচলা, পাহাড়ি অন্চলে বেঁচে যাওয়া জীবনের যৎসামান্য চিন্হগুলোকে আঁকড়ে এই একাকী জীবন যে কি অসহ্য... তবুও অপেক্ষার পালা... ২০৫৯ এর অপেক্ষা... ২০৫৯ সাল... ঘড়ির হিসেবে দূপুর হয়ে গেছে... লালচে আকাশের দিকে অবশ্য তাকিয়ে কিছু বোঝার উপায় নেই... রং উঠে যাওয়া কী-বোর্ডে ঝড় তুলে সুজারের বৃদ্ধ দূ'হাতের দশ দশটি আঙ্গুল... লিখতে লিখতে সুজার হারিয়ে যায় পচাত্তর বছর আগের জীবনে... ছোট্ট রোমিও জীবন.. আহা..পরক্ষনেই ফিরে আসে কী-বোর্ডের ঝড়ে, সময় যে আর বেশী নেই...একমনে লিখে যায়, জানে না কখন তীব্র লাল আভায় ভরে গেছে চার পাশ... চীড় ধরা মনিটরে লালের তীব্রতায় সম্বিত ফেরে, বেড়ে যায় হাতের ঝড়.. সময় নেই সময় নেই, ঐতো দেখা যাচ্ছে বিশাল উল্কাপিন্ডটাকে... চারপাশে আগুনের ঝড়, কি অসহ্য গরম... মৃত্যুর খুব কাছে এসে বন্ধু রিহানের কথা মনে পরে যায়... সেই কবে জানি রিহান একটা গল্প লিখেছিলো... ইস সবই তো মিলে যাচ্ছে... রিহানের কথা ভাবতে ভাবতে চোখ বুঁজে ফেলে সুজার... উফ কি অসহ্য গরম.... -------------------------------------------------------------------------------------------- মহাকাশযান থেকে নেমে আসে ত্রি। পৃথিবী ধ্বংসের অনেক অনেক পরে এর উত্তপ্ত বুকে প্রথম প্রাণের স্পর্শ...এখানে পাঠানোর জন্য বিজ্ঞানী রু এর উপর প্রচন্ড রেগে আছে ত্রি। সেই আদ্যিকালে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটা গ্রহে কি এমন আছে যে এত দূর থেকে এত কষ্ট করে এখানে আসতে হবে? মনে মনে রু এর চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে ডিটেক্টর যন্ত্র নিয়ে নেমে আসে ত্রি... কিন্তু কি অদ্ভুত প্রথম যে সার্চ অ্যাকটিভ করলো তাতেই ব্লিপ। সার্চ পার্টি রোবট কে নামিয়ে জ্বলজ্বলে চোখে অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে ত্রি।

অনেক্ষন পর রোবট ফেরত আসে, হাতে ধূলো ধুসরিত কি একটা বস্তু... পৃথিবী থেকে হাজার আলোকবর্ষ দূরের ত্রিয়ন গ্রহ। বিজ্ঞান গবেষনাকেন্দ্রের সবাই কনফারেন্স রূমে এক হয়েছে। এই গবেষনাকেন্দ্রেরই একটা গ্রুপ পৃথিবীতে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে এক মজার আবিষ্কার করেছে, আজ তারই ডেমনস্ট্রেশন। আবিষ্কারটি হলো একটি প্রাচীন যন্ত্র, জীবদ্দশায় একে নাকি ল্যাপটপ বলে ডাকা হতো। সৌভাগ্যক্রমে এর ভেতরের তথ্য সম্পূর্ণ ধংস হয়ে যায়নি, বিজ্ঞানী রু এর সেই তথ্যের অনেকটুকঐ পাঠ করতে পেরেছে।

রু এর তথ্যমতে এই যন্ত্রের মালিকের নাম ছিলো সুজার। যদিও সে নিজেকে চড়ুই পাখি বলে পরিচয় দিয়েছে তবে রু এর মতে সুজার নাকি মানব সম্প্রদায়েরই অংশ ছিলো। এই সুজার নাকি আবার লেখক, সাই-ফাই না কি জানি লিখতো। রু সুজারের লেখা শেষ সাইফাই থেকে কয়েক লাইন পড়ে। সম্ভবত এটাই পৃথিবীর শেষ সাই-ফাই।

কি অদ্ভুত একটা গল্প, অনেকটা ডাইরির মতো লিখা.... ১৪ই মে, ২০৫৯। পৃথিবীর বুকে আজ আমার শেষ দিন। নাহ আমার শরীর খারাপ করেনি, ৭৮ পেরিয়ে এসে আজও আমি সেই আগের মতোই কর্মক্ষম। আমার চারপাশটাও সেই আগের মতোই, লালচে বিষন্ন আকাশ আর দমবন্ধ ভ্যাপসা বাতাশ। তবুও আমি জানি আজ আমার শেষ দিন।

এই বিশ্বাস নিয়েইতো বেঁচে আছি এই এতোটা কাল। ২০৫৯.... ২০৫৯.... ইশ সেই ২০০৯ এর কথা। সকাল বেলা ল্যাপ্পির ঝাঁপি খুলেই ফেসবুকে লগইন। দেখি বন্ধুরা কি এক কুইজে যাচ্ছে, কুইজের কিছু প্রশ্নের জবাব দিলেই নাকি মৃত্যুর দিনটা জানা যাবে যত্তসব আজগুবি বলে সামহোয়ারইনে লগইন করি। কিন্তু মনের কোথায় যেনো একটা খচখচানি ।

ধ্যুত দেখিই না কি বলে? গেলাম আবার ফেসবুকে.... দেখি কি সব জানতে চায়, বিড়ি সিগ্রেট খাই কিনা, স্বভাব চরিত্র কেমন এইসব আর কি। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছি মনিটরের দিকে... হঠাৎ দেখি লিখা " when will you die?? Ans = 2059" ইয়াহু বলে চিৎকার আর কিছুক্ষন লাফা লাফি... ইস কি খুশিই না লাগছে তারপর আর কি প্রোফাইলে পোষ্ট আর বন্ধুদের কমেন্ট সেই থেকে অপেক্ষা ২০৫৯ এর... এর মাঝে কত কিছু হয়ে গেলো... আমরা সাই-ফাই লেখকরা যা ভেবেছিলাম, পৃথিবীর ধ্বংসটা ঘটে গেলো টার অনেক আগেই। মানুষ যে কেনো এত খারাপ হয়? মাঝে মাঝে নিজেদেরও সম অপরাধী মনে হয়। কই আমরাও তো সারাদিন এই একই কথা লিখে গেছি, মানুষ খারাপ, পৃথিবী ধ্বংস হবে, স্বপ্নের কথা, মানুষের উন্নতি আর শান্তির কথা কয়টা বলেছি? যাকগে এসব বলেই বা লাভ কি? আজ ১৪ই মে, আমি জানি সময় আর বেশি নেই... একি আকাশটা এতো লাল হয়ে আসচে কেনো? ঐতো বিশাল কি যেনো একটা ধেয়ে আসছে?? এতবড় উল্কাপিন্ড??? ইস কি অসহ্য গরম চারপাশে!!! নাহ আমাকে থামলে হবে না, এটা পৃথিবীর শেষ সাই-ফাই ব্লগ, ফেসবুকের মতো একটা সোসাল নেটওয়ার্কের ভবিষ্যতবানী সত্য হবার ঘটনা... আমাকে আরও লিখতে হবে, কে জানে ভবিষ্যতের কেউ আমার এই লেখার পাঠ উদ্ধার করে সবাইকে জানাবে, ঠিক যেমনটা আমার সাই-ফাই গল্পে হয়... উহ আর পারা যাচ্ছে না, বয়েস হয়েছে তো, একটু গরমই সহ্য হয় না আর এ তো ধ্বংসের সময়... নাহ আর পারছি না.... বিজ্ঞান গবেযনাগারের কনফারেন্স রুমে পিন পতন নিরবতা... বিজ্ঞানী রু এর চোখে জল... লক্ষ বছর পূর্বের হারিয়ে যাওয়া এক সভ্যতার জন্য.....
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।