আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্লেয়ার টেক্সটাইল ।।

shamseerbd@yahoo.com

নাম নিয়ে একটুও ভাবতে হয়নি বিশাল এই টেক্সটাইল কমপ্লেক্সের। আজ এর নাম ফলক লাগানো হচ্ছে। এক সাথে দুইহাজার কর্মী কাজ করবে এখানে। রিকনডিশন্ড করোলা এক্স থেকে নেমে এলেন এর অন্যতম বাংলাদেশী অংশীদার। গেটের মাথায় নাম ফলকটি লাগানো হচ্ছে।

গ্লেয়ার টেক্সটাইল । বাংলাদেশী মালিকের চোখ দুটো একটু যেন আদ্র হয়ে উঠেছিল। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলেন। ভার্সিটি জীবনে ডিকশনারীতে হঠাৎ চোখে পড়েছিল এই শব্দটি। গ্লেয়ার -লোক চক্ষুর কেন্দ্রবিন্দুতে।

তখনই ঠিক করেছিল নিজের কোন প্রতিষ্ঠান দেবার সুযোগ হলে তার নাম হবে এটা। মনেমনে ভাবছেন তিনি নাম দেবার কাজতো হল। এখন একে অর্থ পূর্ন করে তুলতে হবে। বিদেশী এক বন্ধুর আগ্রহ ও অর্থ সংস্হান এবং ব্যাংক লোনের উপর ভর করে আরামপ্রিয় আর চাকরী করে জীবন পার করে দেবার পথে হঠাৎ করে এই উত্তোরন বাংলাদেশী অংশীদারের। জীবনসঙ্গীনির চোখেমুখে শুরু থেকেই সে দেখেছে দ্বিধা আর ভয়।

কি পরিণতি হয় আল্লাই জানেন। মুখে দ্বিধা প্রকাশ না করে সাহস যোগানোর চেষ্টা দেখালেও পরিচিত জনদের সাথে ফোনা লাপে ভয়ের কথাই প্রকাশ পেয়ে যায়। ধীরেধীরে পুরা ফ্যাক্টরীই তৈরী হয়ে গেল অপারেশনের জন্য। দুই হাজার কর্মী নেয়ার জন্য বিগ্গাপন দেয়া হল। পোষ্টারের শেষে ষ্টার মার্ক দিয়ে লিখাটা ছিল এমন- আপনি শুধুই কর্মী নন আপনি হবেন আমাদের সমৃদ্ধীর গর্বিত অংশীদারও।

আপনার ও আপনার পরিবারের ভবিষ্যত বিনির্মানের দায়িত্ব আমাদের। কিছুটা নতুনত্ব তো আছেই সাথে অন্য কারখানার মালিকদের আলোচনায় হাসাহাসির জন্যও একটা খোরাক জোগানো হল। লোক নিয়োগ শেষ। ব্যবস্হাপনায় ও কিছুটা নতুন আয়োজন সবাই যে এ পেশায় আগে ছিল তা নয়। কিছু স্বপ্নবাজের ও স্হান হল।

এটা শুধু যে পরিবর্তনের জন্য তা নয় আড্ডাবাজ অংশীদারের আনন্দময় অবসরের ব্যাপারটাও মাথায় রাখা হয়েছিল। শুরুর আয়োজনে ও কিছুটা ভিন্নতা। মন্ত্রী এমপি না এনে মালিক নিজেই দায়িত্ব নিলেন। করোলা এক্স থেকে মালিক নেমে আসাতে কর্মীরাও একটু অবাক। হালকা গুঞ্জন ও শুরু হলো তাদের মাঝে।

প্রাডো পাজারো দেখতেই অভ্যস্ত তারা। তাদের জানা ছিলনা মালিক গাড়ী ব্যাপারটাকে কখনো প্রয়োজনের বেশী কিছু ভাবেনি। বিলাসিতার জন্য অন্য কোন দেশ ঘুরতে যাওয়া যায় পঞ্চাশ লাখ টাকার গাড়ীর কোন মানে নাই। এই গাড়ীও লোন নিয়ে কেনা হয়েছিল এক বন্ধুর পরামর্শে। সৈই বন্ধু , তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী আর মালিক ডাঃ চেম্বার থেকে বের হয়ে একটা সিএনজির জন্য যখন এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিল তখন সৈই বন্ধুর পরামর্শ পারলে বিয়ের আগে গাড়ী কিনবি , সেটা না হলেও বাচ্চা হবার আগে অবশ্যই।

গাড়ি না কিনা পর্যন্ত নো বাচ্চা কাচ্চা। আজ থেকে আপনারা সবাই এ প্রতিষ্ঠানের শুধু কর্মী নন একজন অংশীদারও। আপনারা নিজের জন্যই কাজ করবেন। আপনাদের স্বাচ্ছন্দ্য পূর্ন্য জীবনের দায়িত্ব আজ থেকে এ প্রতিষ্ঠানের। কথাই নয় ধীরে ধীরে কাজের মাধ্যমেই আমরা তা করে দেখাবোই ইনশাআল্লাহ।

শুরু থেকেই ছয় জন ডাক্তার থাকবেন শুধু আপনার নয় আপনার পরিবারের জন্যও সবসময়। ধীরেধীরে আপনার সন্তানের লেখাপড়ার দাযিত্ব ও আমরা নিব। আমরা একটা আদর্শ প্রতিষ্ঠান হতে চায়। টেনশন থাকলে আউটপুট কম হবে। সো সেটা আমরা দূর করব।

আপনারা মনোযোগ দিয়ে কাজ শুরু করুন। তিন মাস পর আমাদের প্রথম শিপমেন্টের কাজ শেষ হবে। তারপরই আমরা আরো নতুন সুবিধার ব্যবস্হা করব। আমি জানি এসব কথা আপনাদের কাছে হাস্যকর ঠেকছে। মনেমনে ভাবছেন সুবিধাভোগী শ্রেনী অন্যের সুবিধার কথা বলে কিন্তু বাস্তবায়ন শুধু কথায় থেকে যায়।

এটা ভাবাই আপনাদের কোন দোষ নেই। আমি শুধু বলব অপেক্ষা করুন। আপনারাই দেখবেন। শেষ করে সে নিজেই অবাক হল। পলিটিক্যাল ভাষন হয়ে গেছে।

তবে কর্মীদের মাঝে এটা একটু হলেও প্রভাব ফেলবে এই বিশ্বাস তার আছে। নতুন জীবন ব্যস্ততাও নতুন ধরনের। পরিবারের অভিযোগ না থাকলেও কিছুটা অনুযোগত আছেই। তবে সবাই মানিয়েই চলছে। ইদানীং ঘরের সবারই টেক্সটাইল এর প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়েছে।

কিভাবে হয় কত সময় লাগে। অবসরে তার স্ত্রীর হাজারো প্রশ্ন। এই কাপড় কিভাবে হয় , কিকি লাগে। বেঁচারা নিজেই জানেনা জবাব দিবে কি। জীবনের বাকী সব কাজের মত এই ব্যবসাটাও শুরু করার সময় সে যে অত কিছু ভাবেনি।

তোমাকে একদিন নিয়ে সব দেখিয়ে আনব এই বলে পার পাবার চেষ্টা করে সে। প্রথম শীপমেন্ট উৎসাহের সাথে সফল ভাবেই শেষ হল। কিছুটা আভাস পাওয়া গেল ফিফটি পার্সেন্ট এর বেশী প্রফিটের ব্যবসা এটা সব ঠিক মতে চালিয়ে নিতে পারলে। কমপ্লেক্সে নতুন একটা ছোট শেড তৈরী হচ্ছে। কর্মীদের এ নিয়ে তেমন আগ্রহও নেই।

মাস শেষে ঠিকমত বেতন পাচ্ছে এতেই তারা খুশী। শেড তৈরী শেষে এর সাইনবোর্ড দেখে কর্মীরাত অবাক। নায্য মূ্ল্যের দোকান তাদের জন্য। চারজনের পরিবারের রেশন এখান থেকে তারা পাবে সম্পূর্ন কেনা দামে। কাজ করতে গিয়ে আহত কয়েকজনের কর্মসংস্হান হল এই দোকানে।

আরো ঘোষনা এল মেয়েরা শুধু প্রথম সন্তানের জন্য বেতন সহ তিন মাস ছুটি পাবে। দ্বিতীয় সন্তানের জন্য হলে বেতন পাওয়া যাবেনা। জনসংখ্যা কমানো এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য কর্তপক্ষ্য এটাই যথাযত মনে করে। নারী কর্মীরা বেশ খুশী হলেও কিছুটা সন্দেহ ও ধরে রাখল বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত। বাংলাদেশী অংশীদার নিত্যনতুন স্বপ্নের জাল বুনে চলে বোর্ড মিটিং এ।

ধারাবাহিকতায় ফ্যাক্টরীর পাশেই সে আরেকটি জায়গা কিনে ফেলে। কর্মীরা ভবে কারখানা হয়ত আরো বড় করা হবে। ধীরেধীরে একটা ভবন ও দাঁড়িয়ে যায়। কর্মীদের আবারও হতবাক হবার পালা। মালিক তার বাবা মায়ের নামে একটি স্কুল খুলে বসেছেন।

তাও তাদের সন্তানদের জন্য এটা হবে সারাদিনের স্কুল। কাজ শেষে সন্তানদের নিয়ে তারা বাড়ী ফিরে যাবেন। আজকে আমার এই অবস্হা। আমি এতটুকু এসেছি। আমার সন্তান শুরু করবে আরো একধাপ এগিয়ে।

সে আরও সামনে আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে। পিছনে নয়। কথা গুলো আমার এক কলিগ বলেছিল যখন আমিও আপনাদের মতন চাকরী করতাম। আজ আমিও আপনাদের বলছি একই কথা। আপনাদের সন্তান আপনাদের থেকে এগিয়ে যাবে আরো ভাল জীবন পাবে সবসময় সৈই মতই কাজ করবেন।

তাদেরকে স্কুলে নিয়ে আসুন। এই ছিল স্কুলের উদ্ভোদনে মালিকের কথা। এরপর কারখানার পরিবেশ আর উৎপাদন ক্ষমতায় সত্যিসত্যি ব্যাপক পরিবতর্ন আসতে শুরু করল। অন্য অনেক কারখানার মালিক , মিডিয়ার নজর কাড়ল গ্লেয়ার টেক্সটাইল । অনেকে এই রকম উদ্যেগের ঘোষনা দিলেন।

নেগেটিভ প্রতিক্রিয়াও শুরু হল। শোষিত অনেক জায়গার কর্মীরা আন্দোলন এ নেমে পড়ল। যথাযথ বেতন ও সুযোগ সুবিধা চাই তারা। মালিক পক্ষও তাদের মেরেধরে দমানোর ব্যবস্হা করল। গ্লেয়ার টেক্সটাইলের মালিক বড় ধাক্কা খেলেন যখন অন্যদের লেলিয়ে দেয়া লোকজন তার কারখানায় হামলা চালাল।

কর্মীরাই উদ্যেগী হয়ে তা ঠেকিয়েও দিল। হতাহতও হল। হতাহতদের হাসপাতালে পাঠিয়ে মিটিং এ বসলেন তিনি । সবার চিকিৎসা কোম্পানি বহন করবে। ঘোষনা করলেন আমরা থেমে যাবনা , অগ্রগতি আর সবার সমৃদ্ধীর জন্য আমরা এগিয়েই যাব, যত বাঁধাই আসুকনা।

স্ত্রীর উদ্বিগ্ন্য ফোনে মিটিংএ একটু বাঁধা পড়ল। বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে আপাতত শান্ত করে আবার মিটিং। সিদ্ধান্ত হল কর্মীদের জন্য ইনস্যুরেন্স এর ব্যবস্হা করা হবে আর দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে যেখানে আরো দুইহাজার লোকের কর্মসংস্হান হবে। ধুর কারেন্টটা চলে গেল। শুক্রবার অফিস নেই।

ঘুম ভাঙ্গার পরও ঘন্টা খানেক ধরে শুয়েশুয়ে দিবা স্বপ্ন দেখছিলাম। গরম লাগাতে উঠে একটা সিগারেট ধরিয়ে পেপারটা হাতে নিলাম। বড় লাল রঙা হেডলাইন : আজ মহান মে দিবস।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.