যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
সাফ্ফাত বললো মালদ্বীপে কোন গ্রাজুয়েট কলেজ নাই। সে পড়েছে টুয়েলভ ক্লাস পর্যন্ত। সাড়ে তিনলাখ লোকের দেশে গ্রাজুয়েট বা মাস্টার্স করতে হয় মালদ্বীপের বাইরে হিজরত করে। জানতাম না। প্রায় ত্রিশ হাজারের মত বাঙালী ওয়ার্কার সেখানে কাজ করে।
কনস্ট্রাকশনের লেবার, কুলি-মজুর এমন সব কাজে। বেতন একশ থেকে দেড়শ ডলার মানে সাত থেকে দশ হাজারের মত হবে। শুনে অবাক লাগলো। বাংলাদেশে একজন রিকশাচালকও এখন মনে হয় সাত হাজারের বেশী উপার্জন করে। তারপরও এইসব শ্রমিকরা বাপ-দাদার জমি বিক্রি করে মালদ্বীপে কেন গেছে?
সাফ্ফাত ফারুগ গ্লোবাল ভয়েসের লেখক।
চমৎকার ইংরেজী বলে। এনজিও একটিভিস্ট। এনভারমেন্ট নিয়ে কাজ করে তার এনজিও। ঢাকায় এসেছিল কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি সেন্টারের আহবানে একটা ওয়ার্কশপে এটেন্ড করতে। গ্লোবাল ভয়েসের ঢাকার কারো সাথে তার যোগাযোগের ইচ্ছে জানিয়ে মেইল করেছিল রেজওয়ান ভাই।
তার ফলে সে যেখানে উঠেছে সেই রিগজ ইনে গিয়ে দেখা করলাম। গুলশান, বনানী রিকশায় চড়ে ঘুরে দেখালাম। বনানীর ১১ নম্বর রোডের ব্রীজ দেখে উচ্ছ্বসিত। বললো রাতে এসে ছবি তুলবে।
কথা প্রসংগে বাংলাদেশী শ্রমিক মালদ্বীপে কেন - এই বিষয়টাই ঘুরে ফিরে এসেছে।
সাফ্ফাহকে যখন বললাম এখানের একজন শ্রমজীবি মানুষের আয়ের পরিমাণ, সে তেমন ডিফারেন্স পাইলো না। কিন্তু সে শুনেছে তাদের মুখে যে মালদ্বীপ আসতে দুই/আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কেউ জমি বেচেছে, চড়া সুদে ধার করেছে। উপরন্তু মালদ্বীপে গিয়ে দেখেছে যে কোম্পানীর জন্য তাদের নেয়া হয়েছে তার বেশীরভাগই ভুয়া। আবার যখন অন্য কোন কনস্ট্রাকশন সাইটে বা দিনমজুর হিসাবে কাজ করে তখন ইললিগাল হয়ে যাচ্ছে।
সাফ্ফাহের হিসাব মতে ত্রিশ/পয়ত্রিশ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক মালদ্বীপে - যা তাদের দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জাতিস্বত্ত্বা হয়ে পড়েছে এখন। পাশ্ববর্তী ইন্ডিয়া ও শ্রীলংকার মিলে দশ হাজারের বেশী হবে না যারা মালদ্বীপে বাস করে এবং তারা সবাই টুরিস্ট রিসর্ট থেকে শুরু করে অধিক উপার্জনক্ষম কাজ বা ব্যবসার সাথে জড়িত।
সাফ্ফাহের বক্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেশের জন্য মালদ্বীপ কোনভাবেই জনসম্পদ রপ্তানীযোগ্য জায়গা নয়। সরকারের উচিত মালদ্বীপে লোক পাঠানোর সাথে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে খবর নেয়া। আমাকে বলেছে মালদ্বীপে গিয়েই সে এমন একজন বাংলাদেশীকে খুঁজে বের করবে যার আইটি জ্ঞান আছে।
তাকে সে ব্লগিং শেখাবে এবং তখন তার নিজের মুখেই হয়তো আমরা জানতে পারবো শ্রম রপ্তানীর ইতিহাস।
মালদ্বীপে কোন হায়ার স্টাডির ব্যবস্থা না থাকলেও দেশটির শিক্ষার হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। পুরা দেশটা অন্য একটা জায়গায় সরিয়ে নেবার জন্য তারা অন্য কোন মহাদেশে ভূমি খুঁজছে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে মাত্র এক মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মালদ্বীপের বারোশ দ্বীপ ও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল ক্লাইমেট চেঞ্জের প্রথম শিকার হবে বলে বিজ্ঞানীরা আশংকা করছেন। কিন্তু মালদ্বীপ বিকল্প ব্যবস্থা করে ফেলবে বলে আশাবাদী।
দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট মালেয়ানদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন নতুন একটা দেশের, নতুন একটা ভূখন্ডের। মাত্র সাড়ে তিনলাখ মানুষ বাস করে মালদ্বীপে। হয়তো তাদের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ? কোথায় বসতি গড়ে তুলবে এদেশের সাত কোটি উপকূলীয় মানুষ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।