সেদিন যথারিথি অফিসের পর মহাখালি থেকে লেগুনায় উঠলাম। তখন বেশ স্পষ্ঠ ও শাবলিল ভাষায় এক তরুণ বাইরে থেকে বলে উঠল, “এক্সিকউজ মি ভাইয়া একটু চাপবেন? কাইন্ডলি আমাকে সাইডে বসতে দিন, আমি শামনে নেমে যাব। ” আমার ফেস টু ফেস পিজশনে বসল বেচারা। তাকে বেশ টায়ার্ড লাগছিল আর চুল গুলোও ছিল উশকো শুশকো। তবে পরনের কাপড় বেশ পরিপাটি।
একটু পরেই বুঝতে পারলাম যে, উনি বিএনপি বস্তির সামনে নামবেন আর উনি হচ্ছেন আমাদের দেশের উদিওমান ভবীষ্যত প্রজন্ম থেকে ঝরে যাওয়া এক যোদ্ধা, যিনি মাদকাশক্ত হয়ে আজ তার জীবনকে ক্রমাগত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তার বেকগ্রাউন্ড আমার কাছে স্পষ্ট হতেই, আমি আমার শরিরটাকে একটু গুছিয়ে নিলাম, যাতে তার মত একজন ড্রাগ আডিক্ট এর ঘৃণিত শরীরে আমার স্পর্ষ না লাগে। আমি আরেক্টু চেপে বসলাম। তার একটু পর খেয়াল করলাম আমার সামনে আর ওই তরুণের একজন পরেই আরেকজন বসে আছেন, যিনি খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে ওই তরুণ এবং আমার ঠিক পাশে বসা লোকটার দিকে তাকিয়ে আছেন। তখন লক্ষ করলাম আমার পাশের জনও এডিক্টেড।
তার ঝিমুনি ও জীর্ণ শরীর-কাপড় দেখে বোঝা যাচ্ছিলো, তার অবস্থা আরও খারাপ। তারা দুজন মিলেই তখন ঝিমানো ও মাথা ঝাকানো শুরু করল পাল্লা দিয়ে। একটু পরে আরও টের পেলাম যে, যে বেক্তিটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তাদের দিকে, তিনিও নেশাগ্রস্ত। উনার চোখগুলোও লাল হয়ে ছিল ও উনি কোনভাবেই চোখ বুজতে পারছিলেন না। উনার নেশা দ্রব্যটি বাকি দুজন থেকে ভিন্ন ছিল বলে বোঝা যাচ্ছে।
তারপর আমি যখন বাকি পেসেঞ্জারদের দিকে তাকালাম, তখন আফসোস করলাম। এই যে আমাদের সমাজেরই কিছু অধিবাসিরা নেশার মত ভয়ঙ্কর অভ্যাসের সাথে জরিত, তখন সমাজের অধিকাংশ মানুষরাই চেষ্টা করে একটু চেপে বসতে, চেষ্টা করে এগুলো এভয়েড করতে। এ সমাজের মানুষগুলো নিজের ফেমিলি, ফ্রেন্ড, চাকরি, ব্যবসা নিয়ে এত ব্যস্ত যে সমাজগ্রাশি এসব সমশ্যার দিকে তাকানোরও সময় নেই। কিন্তু ভাই আর কত চাপবো? আর কত সরে দারাবো? কত ওভারলুক করবো? আমি ও আমার সহযাত্রিরা সেদিন পারিনি সরে যেতে, নেশাগ্রস্থদের সাথেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যাত্রা করতে হয়েছে অনিচ্ছা সত্তেও। সেদিন নেশাগ্রস্থদের চেয়ে আমাদের (তথাকথিত সভ্য যাত্রিরা) বেশি নেশাগ্রস্ত মনে হয়েছিলো, যারা দুনিয়ার মোহে পরে তাদেরই পাশে বেড়ে উঠা ভাইটির দুরদশার দিকে তাকায় না, ছুটতে থাকে তার ইপ্সিত স্বপ্নকে অর্জন করতে।
আজ আমরা আধুনিকতার নামে গ্রহণ করেছি ইন্ডিভিজুয়ালিসম। যা আমাদের এ ধরনের রুঢ় বাস্তবতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে ... ... ...। আমরা যেন চলতি পথের এসব হোছট খাওয়া থেকে নিজেদের সুধরে নেই। কারণ সেদিন দূরে নয়, যেদিন আমাদের এই অপারগতার শিকার হবে আমাদের প্রিয়জনেরা।
সুতরাং আমাদের সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজে বাধা দিয়ে যেতে হবে নতুবা সফল মানুষের তালিকায় আর যেই থাকুক, আমরা থাকব না! যা সৃষ্টিকর্তা আমাদের বার বার বলে সাবধান করেছেন, কিন্তু আমরা তা শুনলাম কোথায়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।