পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে গেলে মানুষ যে কি পাগলামি করতে পারে, আমি মনে হয় তার ঝাক্কাস নমুনা। ঘটনা অতি সামান্য কিন্তু যে পরিমাণ জ্বালাচ্ছে , তা আর বলার মত না !
হয় না ? হুট করে কনুইতে ঘা খেলেন , সামান্যই তো সংঘর্ষ , অথচ জগৎ সংসার অন্ধ করে সমস্ত শরীরটা ঝন ঝন করে উঠবে । এ রকমই হয়েছিলো একবার । টেবিলের উপর চেয়ার পেতে আল্মিরার উপর কাবার্ডে কাজ করছিলাম, কোন ব্যাক্কল এসে ফ্যান চালিয়ে দিলো । সেই ফ্যান এর ব্লেড আবার কাবার্ডের দরজার নাগালের ভিতরেই।
ফলে যা হবার তাই হলো। সজোরে চালানো ফ্যান আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই এসে আঘাত হানলো আমার দক্ষিণ হস্তে । কতটুকু হবে ক্ষত ? এই ধরেন দুই সেঃমিঃ মত লম্বা আর হাড় পর্যন্ত গভীর ! আমার মত খেলুড়ে মেয়ের জন্য ওটা কিছুই না । হরদম হাটু, কনুই , হাত , পা ফালা ফালা করে খেলে বেড়িয়েছি । স্যাভলন আর ব্যান্ডেজ আমি পকেটে নিয়ে ঘুরতাম।
সুতরাং এই পিচ্ছি কাটায় আমার কিছু হওয়ার কথা না। কিন্তু বাধ সাধলো হস্ত প্রকম্পিত করা আঘাতের জোর । হাড় এর ভিতর দিয়ে অলি, গলি, হাইওয়ে পার হয়ে সে আঘাত মাথার ভিতরের মালগুলো মালভূমি করে দিলো । জ্ঞান হারালাম রীতিমত ! সেকেন্ডের তরে। কি বেইজ্জতি !
আর একবার কি এক হাউসে ভুল পথে পা বাড়ালাম ।
মানে , পথভ্রষ্ঠ হইলাম নির্ঘাত ! গ্রামের বাড়ি থেকে খাঁটি ( চন্দ্রবিন্দু খেয়াল করুন) লোহার খাঁটি নক্সায় খাঁটি বটি আনা হয়েছে । কোথাও কোন ভেজাল নেই। তো আমিও পরের দিনই কোথাও কেউ নেই ধরনের নিজ্ঝুম দুপুরে মহা আনন্দে সেই বটির উপর দিলাম পাড়া । ঠিক পাড়াও না , ঠেলা । দরজা দিয়ে ঢুকতে পথে , পটে আঁকা ছবির মতন পড়েছিল পাছা , ( বাছা , গ্রামের বটি দেখনি? কাঠের একটা পশ্চাৎদেশ এর উপর বসানো থাকে তার জীবনের যত ধার) আমি কি তা জানি? গানের ছন্দে মহানন্দে মাথা দোলাতে দোলাতে ঢুকেই তার পশ্চাৎদেশে পদাঘাত করে ফেলেছি , আর তিনিও আমার দাদার গ্রামের বটি , বিশিষ্ট সম্মানযুক্ত ।
৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে সাঁই করে ফলা ঢুকালেন পায়ের পাতায়, তেমনই ফল পেলুম তৎক্ষণাৎ যেমন কর্মটি করেছি । তা'পর বিশাল হাউ কাউ । রান্নাঘর থেকে বেড রুম , টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া রক্তে ভেসে গেলো । পায়ের তলায় জুতার সোলের মতন পায়ের সোল ঝুলছে আর আমি হাফসোল বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি রক্তের পুকুরের উপর । সাথে সাথে হাসপাতাল আর তারপর বস্তা সেলাই।
সত্যি বলছি , দুই দুইটা মুশকো জোয়ান চেপে ধরলো আমাকে আর বস্তার দড়ির মত সুতলি আর ইয়া মোটা সুই দিয়ে বারখা ফোঁড় দেওয়া হলো অনেক গুলা । এনেসথেসিয়া ছাড়াই । যতই বলি , ওরে ভাই রে , মামা রে , কাকারে , আমি নিজেই গুণ্ডা গারতি করা মেয়ে , আমারে দ্যাকপার দে তোরা , দিলো না । শুধু শুয়ে শুয়ে টের পেলুম মাংস ভেদ করে সুই ঢুকছে , সুতা টানছে , তা'পর গিট্টু দিচ্ছে ।
তা'পর অনেক বছর ভদ্র , সুবোধ ছিলাম ।
বাবা ও মা যখন নিশচিন্তি পেয়ে পাত্র দেখছেন তখনই বুদ্ধি করে ছিড়লাম হাঁটু । (হাঁটু আবার ছেড়ে কি করে ? হাড়টাই ভাঙিনি , কিন্তু ভিতরের যন্তরপাত্তি ছিঁড়ে দুই খান করেছি , টেনডন রাভিনার সাথে পালিয়েছে ) । তা'পর গেলাম না ডাক্তরের কাছে , আমি তখন ঢাকার বাইরে । সবাই মিলে ঠেলে যখন পাঠালো তখন অই পা নিয়েই হেঁটে গেলাম , উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সামান্য ব্যান্ডেজ আর বিদ্যুত মিস্ত্রীর ডাক টেপ দিয়ে বেন্ধে । পফেছর টাশকি উইথ ভিমরি খেয়ে আব্বুকে বললেন , ছোট বেলায় তোমাকে দেখেই বুঝেছিলাম , এখন এরে দেখে সিওর হলাম, ব্যাটা ডাকাতের বংশ !!! ( আমার দিকে ফিরে) এ তুই মানুষ না কি?
এবং তারপর ওয়াসার পাইপের মতন মুডা একটা সুই আলা সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বের করলেন দুই বাটি ।
যথারীতি এনেসথেশিয়া ছাড়াই । এক বার করে পাইপ ঢুকায় আর নিজেই দাঁত চেপে ইয়া নফসি পড়ে , আমি নিব্বিকার ! ডাকাইতের মেয়ে বলেছে , কান্দাকাটি মানায় না ! ইজ্জত আছে না !
তো এই রকম ইতিহাস রচনার পরে আজকে আমি সত্যি বড়ই কুপিত । শালার নখের একটা কোনা দিন দুনিয়া সব ভুলে পথভ্রষ্ট হইয়া আমার পায়ের আংগুলের ভিতরে ঢুকার তাল করছে গত কয়টা সপ্তাহ । কয়েক বার চেষ্টা করলাম কাটতে , ছোঁয়াই যাচ্ছে না । বেয়াদপ নখের সামনের অংশটুকুতেই ভীষন ব্যথা আর নেইল্কাটার ঢুকাতে গেলেই এমন ব্যথা করছে , পায়ের ব্যথা মাথায় এসে ঝন ঝন করে বাজছে ।
এর আগে দুই বার চেষ্টা করে পারিনি , ভাবলাম দুইটা দিন যাক , প্রদাহ কমুক । তারপর আবার ! কিন্তু শালার কাজ কাম যাই করি একটু পর ঐখানেই ধাক্কা খাচ্ছি আর প্রতিবার ব্যথার চোটে উলটে পড়ার দশা । আজকে আর সহ্য হচ্ছে না ।
প্রতিবারের মত এবার ও এনেস থেশিয়া নাইক্কা । ধারালো ছুরি, কাঁচি , নেইলকাটার নিয়ে বসেছি ।
কয়েকটা চকলেট এর টুকরা খেলাম , আর একটু ঝাল চটপটি । এই সবই আসলে প্রিপারেশন । দুই দাঁতের ফাঁকে একটা পেনসিল দিয়ে চেপে ধরে শক্ত হাতে নখটা উলটে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে !
বাসায় কেউ নাই । অন্য কেউ কাটাকুটি করে দিলে দাত মুখ চোখ বন্ধ করে নিজে চিৎকার করাটা একটু সোজা কিন্তু স্বামী প্রবর এই হীন কাজে সাহায্য করবেন বলে মনে হয় না , আবারো চলো হাসপাতালে নিয়ে যাই করে সময় নষ্ট হবে । অতএব , এই সুযোগ !
দোয়া করিয়েন, আল্লাহ ভরসা , আমি চল্লাম নখ উল্টাইতে ... ... ...
[ এতক্ষণ যারা এই প্যারোনিকাইয়া বা ইন গ্রোন টো নেইল এর ইনফেকশন নিয়ে পড়লেন , তাদের জন্য সাবধান বানী, ইহা একটি ঝামেলাযুক্ত নখের রোগ।
ইহার কারন নখ ঠিক ঠাক মত শেপে কাটতে না পারা । ইহার যন্ত্রনা , নখের কোনা মাংসে ঢুকে প্রচন্ড ব্যথাযুক্ত ফোলা বা ফোড়া হয়, পুঁজ হতে পারে । ইহার উপযুক্ত চিকিৎসা , লিডোকেইন বা নভোকেইন দিয়ে আঙুল সম্পূর্ণ অবশ করে নিয়ে নখের এক অষ্টমাংশ কেটে নিতে হয় । তারপর ড্রেসিং যদি ইনফেকশন থাকে । চিকিৎসা না করলে বার বার হবে ।
কোনা কেটে লাভ নেই , আসল সমস্যা কিউটিকলের ভিতরে। পায়ের ডাক্তার বা পডোট্রিস্টকে দিয়ে কাটাবেন , আমার মত ডাকাইত হইলে ভিন্ন কথা । বাচ্চা লোগ, ডোন্ট ট্রাই দিস এ্যাট হোম]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।