আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বগা লেক-কেওক্রাডং থেকে ফেরার পর (শেষ পর্ব)

আমার অসম্পূর্ণ জগৎ
প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব সকাল সাড়ে নয়টায় বগা লেকের উদ্দেশ্যে চান্দের গাড়িতে চড়লাম। বাজার থেকে রুমা থানা পার হয়ে বেশ কিছুদুর রাস্তা ভালই বলা যায়, অনেকখানি জায়গায় ইট বিছান। এর পরেই শুরু সেই দুর্গম রাস্তার ! পুরোটা রাস্তা জুড়ে বালি, আর পাথর। আর পাহাড়ের বাঁকে যে কত প্রকার হতে পারে তা এ রাস্তায় না এলে সম্ভবত বুঝতাম না। কোথাও কোথাও ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁক রয়েছে।

আর রাস্তা এতটাই খাড়া যে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যায়। কিন্তু তারপরেও চারপাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখলে সব ভয় যেন বিলীন হয়ে যায় ! চারপাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। একটার চেয়ে যেন আরেকটা সুন্দর ! তখন পাহাড়ে ঝরা পাতার দিন চলছিল, আর কদিন পরেই নতুন তরু-পল্লবে ছেয়ে যাবে পাহাড়ের কোল। সকালের কাঁচা রোদে পাহাড়ের গায়ে সোনালী আভা ছড়াচ্ছিল। যা হোক, অনেক চড়াই-ঊৎরাই পার হয়ে আমরা ১২ টা নাগাদ বগা লেকে পৌছালাম।

আহ ! দূর থেকে যখন বিশাল হৃদের চকচকে পানি দেখতে পেলাম, সে দৃশ্য ভোলার নয় ! আর্মি ক্যাম্পে নাম লিখিয়েই আমরা এক দৌড়ে সবাই লেকের পাড়ে ! ফটাফট ছবি তোলা শুরু হয়ে গেল। এর পর সিয়াম দিদির হোটেলে গিয়ে পেঁপেঁ খেলাম, খুব মজা। আমরা যেহেতু সংখ্যায় ১৫ জন ছিলাম, তাই সিয়াম দিদির হোটেলে সবার জায়গা হোলনা। ভাগ্য ভাল যে পাশের আর্মি রেস্ট হাউজে আমাদের বাকিদের জায়গা হোল। এবার কেওক্রাডং যাবার পালা ! বাগা লেকে আসার রাস্তা দেখেই আমাদের মধ্যে দুজন আর কেওক্রাডং যেতে রাজি না ! তারপরও অনেক বলে কয়ে সবাই মিলে রওনা দিলাম।

এ রাস্তাটা আরো ভয়ঙ্কর ! কি বড় বড় পাহাড়ী বাঁক আর উচুনিচু রাস্তা ! সারাটা রাস্তা ধুলায় ভরপুর। সব কিছু পেছনে ফেলে আমরা দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের অন্যতম উচু পাহাড় শৃঙ্গ কেওক্রাডং এ পৌছলাম। আমরা দুজন আবার গিয়েছিলাম এর পরের জনপদ সুংসং পাড়ায়, মুরগীর খোজে, কিন্তু মুরগীর দেখা মিলল না ! যা হোক নতুন একটা জায়গা তো দেখা হল। এরপর আবার কেওক্রাডং এ ফিরে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বগার উদ্দেশ্যে ফিরতি পথ ধরলাম। বগায় ফিরে একদৌড়ে সবাই লেকে নেমে পড়লাম।

আহ ! বগার শীতল পানিতে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল ! উঠতেই ইচ্ছা করে না। অনেক্ষন গোসল করে উঠলাম আমরা। এরপর খাবার পালা। এই দুর্গম পাহাড়ে আমাদের জন্য কি খাবার অপেক্ষা করছে তা নিয়ে আমরা সবাই একটু চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু খেতে বসে দেখি সিয়াম দিদি জটিল সব আয়োজন করে রেখেছেন ! ঢেঁকিছাটা লাল চালের ভাত, আলু ভর্তা, সবজি, ডাল, আর আমাদের কেনা মাছের ভাজি।

আর এর সাথে এপেটাইজার হিসেবে ছিল পাহাড়ি মরিচ ভাজি ! কঠিন ঝাল কিন্তু চরম মজা ! বগা লেক গেলে এই বিশেষ মরিচ নিয়ে আসতে ভুলবেন না । আমরা সবাই খেলামও বেশ ! পেট মন দুটাই ভরে গেল। এখানে সিয়াম দিদি সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয়। উনি দেখতে খুবই সাধারণ একজন পাহাড়ি মহিলা। কিন্তু ওনার সাথে কথা বলে অনেক কিছু জানতে পারলাম।

উনি নিজে কষ্ট করে অনেক দূরে গিয়ে পড়াশোনা করেছেন, এবং তিনি ডিগ্রী পাশ! আমি অবাক হয়ে গেলাম ! সম্পূর্ন নিজের চেষ্টায় তিনি দোতলা হোটেল দিয়েছেন এবং দিনরাত হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটেন শুধু মাত্র মা-বাবার সুখের জন্য ! বয়স পেড়িয়ে গেলেও নিজে এখনও বিয়ে করেননি, শুধু মাত্র বাবা-মা এবং ভাই-বোনের চিন্তায়! মানুষ এত ভাল হয় কিভাবে? ওনার কাছ থেকে আমাদের অনেকের অনেক কিছু শেখার আছে। যা হোক, খেয়ে দেয়ে দিলাম এক ঘুম। বন্ধুদের ডাকাডাকিতে তাড়াতাড়িই ঘুম ভেঙ্গে গেল। ওরা নাকি উপরের চূড়ায় উঠবে। পর দিন সকালের জন্য গাড়ি ঠিক করতে হবে বলে আমি আর গেলাম না।

ওরা সন্ধ্যার পর ফিরে এল। মুরগী না পাওয়ায় বার্বিকিউটা করতে পারিনি। কিন্তু আমরা তো আর বসে থাকার লোক নই ! লেকের ধারে আগুন জ্বালিয়ে প্রায় সারারাত আড্ডা দিলাম, গান করলাম, গেম খেললাম। খুবি মজা করেছি ! ভোর ৬ টায় উঠে আমরা বগা থেকে ফিরতি পথ ধরলাম। সবার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল ঐ সময়টায়।

মাত্র একটি দিনেই বগা আমাদের হৃদয়ে যে জায়গা করে নিয়েছে তা কখনই মুছবার নয় ! বিদায় বগা লেক, বিদায় কেওক্রাডং !
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।