কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না, ইহাতে উহারা কষ্ট পায়
বিল চলন গ্রাম কাঁচা গোল্লার খ্যাতি
অর্ধবঙ্গেশ্বরী রাণী ভবানীর স্মৃতি
উত্তরা গণভবন রাজণ্য ধাম
কাব্যে ইতিহাসে আছে নাটোরের নাম।
প্রকৃতির লীলাভূমি চলনবিল, বাংলার মহীয়সী নারী মহারাণী ভবনী উত্তরবেঙ্গর রাষ্টীয় ভবন উত্তরা গণভবন, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেন, কতকিছু যে জড়িয়ে আছে নাটোর নামটির সাথে। নাটোরের কাঁচা গোল্লার নাম শোনেননি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই মিষ্টির স্বাদ নিতে সবার আকাঙ্খা থাকে।
জানা যায় দুই শত বছরের অধিক ঐতিহ্যের সেরা এই মিষ্টি তৈরীর সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও স্থানীয়ভাবে প্রচলিত কিছু কথা আছে।
যদিও এটা একটা গল্পের মতোই মনে হবে।
নাটোর শহরের আদি নিমতলা, ষ্টেশন বাজার ও লাল বাজারের অনেক দোকানে আপনি এই কাঁচা গোল্লা পাবেন। মধুসুদন নামের এক ময়রা (মিষ্টি তৈরীর কারিগর) প্রতিদিন কয়েকমন দুধ হতে ছানা বানিয়ে মিষ্টি তৈরী করতো । কোন একদিন ২০ জনের মতো কর্মচারী হঠাৎ অসুস্থ হযে পড়লে দোকানের দুধগুলো নষ্ট হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কি আর করা বৃদ্ধ মধুসুদন দুধ জ্বাল দিলেন একাই।
ছানা তৈরীও করলেন, কিন্তু সমস্যা হলো এতো গুলো ছানা তিনি নিয়ে এখন কি করবেন। মাথায় কোন বুদ্ধি এলো না। তিনি ভেবে দেখলেন যে, ছানাগুলোতে চিনি জ্বাল করে তার সীরায় ছানাগুলোকে ভিজিয়ে রাখলে আপাততঃ নষ্ট হবার সম্ভাবনা নেই।
যেই ভাবা সেই কাজ। ছানাগুলো বড় বড় কড়াইয়ে রেখে চিনির গলিত গরম সীরা ঢেলে দিলেন।
ঠান্ডা হওয়ার পর একটু মুখে দিয়ে চেখে দেখলেন বাহ! এতো স্বাদ! তিনি তখনও ভাবেন নি যে তার এই মিষ্টি বিখ্যাত হয়ে যাবে। নতুন মিষ্টির তাৎক্ষণিক কোন নাম দিতে পারলেন না। কাঁচা ছানায় তৈরী ভেবে ঠিক করলেন এর নাম হবে কাঁচাগোল্লা। দিনের পর দিন এটাই বিখ্যাত নাটোরের কাঁচাগোল্লা নামে খ্যাতি অর্জন করলো। এই হলো কাঁচাগোল্লার ইতিহাস।
১৭৯০ সালে বাংলার এই অংশের শাসনকর্ত্রী রাণীভবানীর রাজত্বকালের এই ঘটনা লোক ইতিহাসে পাওয়া যায়। রাজা দ্বিজেন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর এই কাঁচাগোল্লার প্রচন্ড ভক্ত ছিলেন। ১৮৪০ সালে দিঘাপতিয়ার রাজা প্রসন্ন নাথ রায় বাহাদুর, শ্রীকৃষ্ণের উৎসবে সাধারণ মানুষকে এই মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন বলে জানা যায়। তিন আনা দামের এই কাঁচাগোল্লা এখনও তৈরী হয়, তবে এর দাম বর্তমানে সময় ভেদে ১৪০ থেকে ১৯০ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করে।
ভেজালের ভীড়ে খাঁটি দুধের ছানায় তৈরী কাঁচাগোল্লা পেতে হলে আপনাকে কালীমন্দির সংলগ্ন মিষ্টির দোকানে যেতে হবে।
বাসে যাতায়াতকালীন আপনারা হয়তো অনেকেই দেখেছেন হকাররা গলা ফাটিয়ে কাঁচাগোল্লা বিক্রি করে, এসব কিনেছেন তো ঠকেছেন। যারা কখনও এর স্বাদ নেননি অথবা দেখেন নি তাদের কাছে ধারণা হবে নেতিবাচক। তাই একটু কষ্ট করে আদি নিমতলা অথবা কালীমন্দির সংলগ্ন দোকান হতেই কিনে নিন সাধের কাঁচা গোল্লা।
তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতাঃ নয়াদিগন্ত, নাটোর জেলা প্রতিনিধি শহীদুল হক সরকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।