আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্পদশালী হওয়ার বাসনা



সমাজব্যবস্থায় যে জলদি বড়লোক হওয়ার ব্যাধি উঠতি বয়সীদের যেন আক্রান্ত করেছে। মেধা বিকাশের মাধ্যমে বড়লোক হওয়ার বদলে সহজ পদ্ধতিতে ধন সম্পদের মালিক হওয়ার বাসনা এদেরকে গ্রাস করে ফেলছে। বাতাসে উড়ে বেড়ানো অর্থকে হাতছাড়া করতে নারাজ। দেশ ও বিদেশে এদের জন্য ভালো সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কর্মবিমুখতা এদেরকে পেয়ে বসেছে। এমনি একটা পরিবারের করুণ দৃশ্যের সঙ্গে সম্প্রতি আমার পরিচয় ঘটেছে।

দুটো ছেলে সন্তানকে নিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা অনেক স্বপ্ন দেখতেন। মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ছেলে দুটো কর্মবিমুখ হওয়ায় পরিবারে আশার আলো নিভে যেতে বসেছে। ঘুমপাড়ানি গান দিয়ে বাবা-মাকে সান্তনা দেয়াই এখন এদের কাজ। প্রতিভা আস্তে আস্তে শেষ হতে বসেছে, সেদিকে এদের ভ্রুক্ষেপ নাই। চলমান সমাজে কষ্ট করে উপার্জন করার প্রবণতা লোপ পেয়েছে।

সম্পদশালী অনেক ব্যক্তিই সন্তানদের মেধা বিকাশের বদলে এদের সুখ-সমৃদ্ধির আশায় একাধিক বাড়ি-গাড়ি গচ্ছিত রেখে যান। কিন্তু আমরা একেবারেই ভাবি না যে, এ সকল ধন-সম্পদ বংশপরম্পরায় ভোগ করা নিশ্চিত হয়ে ওঠে না। কেননা, চলমান সমাজে নির্ধারিত বাড়ি-গাড়ির বদলে নতুনের দিকে তরুণদের আগ্রহ বেশি। অনেকে নানারূপ প্রলোভনে পড়ে বাবা-মার রেখে যাওয়া সম্পদকে অপব্যবহার বা হাতছাড়া করে ফেলে। বৈধ-অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পত্তি সন্তানদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না।

বরং কষ্ট-ক্লেশের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সন্তানরা সবক্ষেত্রে নিজকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। সুসন্তান সমাজে রেখে গেলে সকল মানুষ শ্রদ্ধাভরে এদের বাবা-মাকে স্মরণ করে। পক্ষান্তরে অসৎ-কর্মবিমুখ সন্তানদের বাবা-মাও মৃত্যুর পর অভিসম্পাত পেতে থাকে। সন্তানদেরকে আমরা খাঁটি-মানুষ বা প্রকৃতির স্পর্শে নিতে কার্পণ্য বোধ করি। ফলে বাবা-মা শখের বশে গ্রাম-গঞ্জ থেকে কোনও খাদ্যদ্রব্য আনলে এদের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতা পায় না।

আমরা নিজেরা দুর্বল বলেই সন্তানদেরকে ভালো-মন্দ বোঝানোর ক্ষমতা যেন হারিয়ে ফেলছি। অর্থ-সম্পদ অর্জনে যে কষ্ট-ক্লেশের প্রয়োজন হয় সে মন্ত্রণা দেয়ারও সাহস আমাদের নেই। সত্যিকার অর্থে সম্পদশালীগণ কষ্ট-ক্লেশ ও মেধাবলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন সে উপমা সন্তানদের মনে স্থান করে দিতে পারছি না। বরং হঠাৎ বড়লোক হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে যাওয়ার ফলে অলীকবস্তু পরশপাথরের পেছনে চলার জন্য সন্তানদেরকে উৎসাহ করছি। সমাজে অসম সম্পদ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ফলে নানারূপ অশান্তি সৃষ্টি হয়ে চলেছে, সে কথা আমরা বেমালুম ভুলে চলেছি।

এক্ষণে যেহেতু মুক্তবাজার ও চলমান বিশ্বে জীবন প্রবাহের ধারাও পরিবর্তনের দিকে অগ্রসরমান, সেহেতু বিশাল সম্পদ গড়ার পেছনে সময় ব্যয় করার বদলে সময়োপযোগী কাজের প্রতি সন্তানদেরকে আকৃষ্ট করা দরকার। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী যারা গ্রাম ছেড়ে শহরে ঠাঁই নিয়েছে তাদেরকে বিশ্বমন্দার ভয়াবহ প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে কৃষি উন্নয়ন বিষয়াদিতে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। এজন্য প্রয়োজনে গ্রাম-গঞ্জে কৃষি উৎপাদন বিষয়ক আত্মকর্মসংস্থানমুখী ব্যবস্থার দিকে মনোযোগী করা দরকার। বিদেশে কর্মবাজার পাওয়ার লক্ষ্যে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা আবশ্যক। গ্রাম-গঞ্জে উন্নত কৃষি ব্যবস্থা বা কৃষিভিত্তিক ছোট ছোট শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে বিশাল জনসংখ্যা অন্ততঃ খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।