পূর্ণ হতে চাইনি তাই পূর্ণতার খোঁজ করি, অপূর্ণতাই থেকেছে পাশে তাই অপূর্ণতার কাছে ঋণী
(ছবি- পেন আর্নার)
আন্দোলন নিয়েই যেন আবার আন্দোলন না হয়! শাহবাগ স্কয়ার বা প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকে ঘিরে শুনতে পাচ্ছি গুঞ্জন ও সমালোচনা। হওয়াটাই হয়ত স্বাভাবিক! বোঝাই যাচ্ছে যে যুদ্ধাপরাধ কত বড় একটি ব্যাপার! গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ঐতিহাসিক এই গণজাগরণকে ঘিরে যেমন উত্তেজনা, তেমনি আশঙ্কা। আশঙ্কা এই যে, গণজাগরণটি যেন কোনো রাজনৈতিক ইস্যুর পুঁজি হয়ে না দাঁড়ায়!
আসি নিজের কথায়। এই জাগরণের যারা সূচনাকারী, তারা যেই মনোভাব নিয়ে মঙ্গলবার আদালতের রায়ের পর রাজপথে নেমেছেন তাদের মনোভাব আজও তাই। একবিন্দুও এদিক-সেদিক হয়নি।
খুব অল্প সময়ে এত মানুষের সাড়া পাওয়া গেছে তার মূলত একটাই কারণ- যুদ্ধাপরাধ। আওয়াজ একজনকে তুলতেই হয়। বাকিরা সুর মেলায় অথবা সুর না মিলিয়েও মৌন সমর্থন দিয়ে যায়। এখন একজন প্রতিবাদকারী বিবেকের তাড়নায় একনাগাড়ে ডেকেই গেল আর সে ডাকে সুর মেলাতে কেউই এলো না, তাহলে সেই একজন আর কতক্ষণ ডাকবে?! হার মেনে নিলে নিবে অথবা অন্তত হয়ত থেমে গিয়ে ভিন্ন পন্থায় প্রতিবাদ করবে। আর ডাকে যদি সুর মেলানোর সঙ্গী পাওয়া যায় তবে? উত্তেজনা ছড়াবেই- তাই কি নয়?
মানুষের মুখের কথা ছড়াতে সময়ই লাগে না।
মুখ কি আর কম! ১৬ কোটি মানুষের দেশ! ১৬ কোটিই হয়ত কথা বলে না, কিন্তু তারপরও কথা বলা মানুষের সংখ্যা কম নয়! সবাই এই আন্দোলনকে স্বাগতম জানায়নি। জানাবেও না। এটা মেনে নিতেই হবে। নানান সমস্যা ও অজুহাতই তাদের সমর্থন না জানানোর কারণ।
অনেকেই বলছেন এই আন্দোলনে পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে।
দলীয় আচরণ প্রকাশ পাচ্ছে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলবো না সবই মিথ্যে। কারণ যুদ্ধাপরাধকে নিয়ে সবসময়ই একটি ইস্যু করা হয়েছে। কিন্তু এটাও দেখতে হবে যে এখন কারা রাজপথে নেমেছে, কারা আন্দোলনকারী? তারা সাধারণ জনগণ! তারা নবীন-প্রবীণ, তরুণ-বৃদ্ধ সমাজ! যারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ঘরের নবাব-আলাল-দুলাল-স্রদ্ধেয়-মাননীয়, কিন্তু রাজপথে তারা সবাই সমান! এক জাগরণের সমবেত সুর! মনের কোণে কোথাও না কোথাও লুকিয়ে থাকা ঘুমিয়ে থাকা দেশপ্রেম যদি প্রকাশিত হবার বা জেগে উঠবার সুযোগ পায়, তাকে কিছুতেই দমানো যায় না। আর দেশপ্রেম যে কারো মাঝে একেবারেই নেই তা এই জাগরণ দেখে বোঝা যায় না।
কেউ কেউ সংহতি প্রকাশ করতেই বাড়ি থেকে এসেছেন, আবার কেউ কেউ মজা বা কৌতূহল নিয়ে এসেও সংহতি আর একাত্মতার বোধ গেঁথে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এই জাগরণ তাই কোনোভাবেই ব্যর্থ নয়। তারপরও 'there is always one' টাইপ এর কিছু চর্মরোগী থাকবেন। কোনো যুদ্ধ কিংবা আন্দোলন এনাদের মত রোগীদের ত্যানা পেঁচানো ছাড়া সঞ্চালিত হয়নি। থাকুক না তারা! পেঁচাক না ত্যানা! এত সময় নাই আন্দোলনকারীদের এসব নিয়ে গসিপ করার!
অনুরোধ করি বন্ধুদের- মূলে প্রবেশ করুন, গালগল্প না শুনে চেষ্টা চালান, ভিড় ঠেলে মূল মঞ্চে আসুন আর দেখে যান আন্দোলনের রক্ত গরম করা দৃশ্য! দূর থেকে ভিড় দেখে যা মনে আসে বলা যায়।
ভয়ও হয় না জানি কী! কিন্তু আন্দোলনের সুর একবার যে মনে ধারণ করে ফেলেছে তার আর ঘুম নেই এটা আমি জানি। আন্দোলনের ধুন-মন্ত্র সবই চলছে অন্তরাত্মার ভেতরে! যারা ভেতরে এটাকে বহন করছে, তারা বাহিরেও এটাকে প্রকাশ করছে। বাকিদের খবর বাকিদেরই দায়িত্বে।
এরপর 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগান নিয়েও সমালোচনা। 'জয় বাংলা' কি কারো কিনে নেয়া স্লোগান?! আর বঙ্গবন্ধুকে যদি আওয়ামী লীগের সম্পত্তি ভাবতে ভাবতেই বুড়া হই তবে এদেশের সন্তান হিসেবে আমার লজ্জা করাই উচিত।
এই দেশের জন্ম ও ইতিহাস গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান দলীয় নয়, ছিলও না। উনি আগে এই দেশের, তারপর অন্য কারোর! আর এই স্লোগানকে ঘিরে আওয়ামী লীগ যদি পার্ট দেখাইতে চায়, তা-ও দেখাইতে দেন। আন্দোলন করতে করতে রক্ত গরম হয়ে গেলে এই নিরীহ গোবেচারাদের(!) বিনোদন দেখে শরীর ঠাণ্ডা করার চান্স ক্যান মিস করবেন! অবশ্য উল্টাটাই হইছে! সবার লক্ষ্যই এখন প্রজন্ম চত্বর। কী আর? আপনি ধান ছিটাইছেন, চড়ুই এর সাথে সাথে কিছু কাউয়াও আইসা পড়ছে! কী দিলেন সেটার খবর নাই, কার পক্ষে দিলেন তাতেও ভ্রূক্ষেপ নাই! পার্ট নেয়ার আর জায়গা পায় না!
এরপর দুর্ভোগ রাস্তাঘাটের। এটাকে একদমই অস্বীকার করার উপায় নেই।
কিন্তু শুধু আন্দোলনকারীরা ছাড়াই কি বাকি সবাই দুর্ভোগে? নিশ্চয়ই নয়! সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনড় থাকা মুখের কথা নয়, একনাগাড়ে স্লোগান দেয়া মুখের কথা নয়, দুপুরের কাঠফাটা রোদে বসে থাকা, ক্ষুধার তুলনায় আধপেটে থাকা, ভাল পরিবেশ ছেড়ে শুধুমাত্র ইচ্ছার বশে ধুলা-ময়লায় অষ্টপ্রহর জড়িয়ে থাকা, বাড়িতে না ফিরে কী এক তাড়নায় বা হোক তা উন্মাদনায় রাস্তায় রাত কাটানো- এগুলো কোনটাই মুখের কথা নয়! অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে কারই ভাললাগার কথা নয়, কিন্তু একজন আন্দোলনকারী হিসেবে এটুকু স্বস্তি যে এই আন্দোলনটি খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। গান, নাচ, স্লোগান, কবিতা, পথনাটক, চিত্রকর্ম, গণস্বাক্ষর, পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, আলপনাই যার মূল ভিত্তি। দেশ একটি, জাতিও একটি। তাই দেখুন, কোনো না কোনোভাবে পোহাচ্ছি একসাথেই!
প্রিয় পিতামাতাদের জন্য বলছি, আপনাদের বারণ করাটা স্বাভাবিক। আপনারা সেটা আমাদের (সন্তানদের) প্রতি থাকা মমতা থেকেই করেন।
আপনারা আমাদের বেশি ভালবাসেন সবকিছুর তুলনায়! কিন্তু যে ভয়টা আপনারা করেন, ১৯৭১ এ সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পিতামাতারাও একই ভয়টা করেছিলেন। অথচ দেখুন, সেই ভয়কে পুষে রাখলে হয়ত আমরা আজকের প্রজন্ম হতাম না! ...একটি মৃত্যু হাজার জন্মের তাগিদ দেয়! জানিনা সময়ের দাবী কী হবে- মৃত্যু নাকি তার আগেই একটি সুন্দর সকালের দেখা!? (Honestly)এখনও জানিনা দেশের প্রয়োজনে আমি মরতে প্রস্তুত কিনা! তবুও আজ যদি আমরা মাঠে নেমে মৌখিক সমর্থনই না দিতে পারি, ভবিষ্যতে সময়ের আরও কঠিন দাবিতে বড় ময়দানে নামা কখনই সম্ভব হবে না!
যারা বলছেন, আমরা মাতাল, আমরা স্টুপিড! আমি বলবো, yes! we are! Stupidity সাধারণ মানুষের দ্বারা হয় না!
আমি, আমরা কেউই যদি বেশিকিছু বুঝে না থাকি তবে অন্তত এইটুক বুঝি যে কোনো দেশদ্রোহীই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস রাখে না। যদিও এদের দৌরাত্ম দেখে মনে হয় এরা কতই না সাহস রাখে! আসলে তা সাহস নয়, অসময়ের আঁতলামি। আমি কোনোভাবেই এইসব অসভ্য-বর্বরদের রাজনীতি-সমাজনীতি-ধর্মনীতি মানি না। এরা সমস্ত সীমাকে লঙ্ঘন করেছে!
আমাদের জাতীয় পতাকার রঙে লাল-সবুজের সাথে কোথাও কোনো কালো রঙ নেই।
তবে কেন কালো শকুনেরা এই সোনার দেশে টিকে থাকবে!!?
জবাব সবারই জানা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।