আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিকশনে মঙ্গল

স্বপ্নচূড়া ঐ দেখা যায় !!
গত শতাব্দী থেকেই ফিকশনে মঙ্গলের উপস্থিতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে । এর কারণ শুধু মঙ্গলের চমৎকার লোহিত বর্ণই নয়, বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণে মঙ্গলে প্রাণি বসবাসের অনুকূল পরিবেশের বিবরণ, বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার সম্ভাবনা, সর্বোপরি মঙ্গলে বসবাসের জন্য আগামীতে মানুষের অভিযান সব মিলিয়ে মঙ্গল সব সময়ই একটি আকর্ষণীয় চরিত্র । যার ফলে প্রচুর সাইন্স ফিকশনে মঙ্গল উঠে এসেছে বহুরূপ নিয়ে । এইচ. জি ওয়েলস এর বিখ্যাত উপন্যাস "ওয়ার অব দ্যা ওয়ার্ল্ড" এর কথাই ধরুন । মঙ্গলের বুদ্ধিমান প্রাণীরা তাদের ধ্বংসপ্রায় গ্রহ থেকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আক্রমণ করেছে আমাদের এই পৃথিবী ।

পৃথিবীবাসী নিজেদের বাচাঁতে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে ভিনগ্রহের এই প্রাণীদের বিরুদ্ধে । ১৯৩৮ সালের ৩০ অক্টোবর এই উপন্যাসটির একটি রেডিও সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছিলো সরাসরি খবর হিসেবে এবং সেটি শুনে অনেক শ্রোতাই তখন বিশ্বাস করেছিল এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলো । ৩১ অক্টোবর দি নিউইয়র্ক টাইমস্ এ শিরোনাম হয়েছিলো সেই উদ্বেগের সংবাদটি । এডগার রাইস বারোজ লিখেছিলেন " এ প্রিন্সেস অব মারস্" যেখানে ভার্জিনিয়ার জন কার্টার নামের এক ভদ্রলোক অলৌকিকভাবে মঙ্গলে চলে যান । সেখানে তিনি দেখতে পান মানুষের মতোই সেখানকার রাজকন্যার ।

আরো দেখেন ভয়ংকর সব প্রাণী, বিভিন্ন প্রজাতির যোদ্ধা, অদ্ভুদ সব অস্ত্র ইত্যাদি । কার্টার সাহেব সেখানকার রাজকন্যাকে পৃথিবীতে না নিয়ে আসতে পারলেও বারোজের কল্পনার তুলিতে আকাঁ মঙ্গলে সেই ছবি পরবর্তীতে অনেককেই অনুপ্রাণিত করেছিলো । ১৯২২ সালে এ.এন টলস্টয় লিখেছিলেন "এইলিটা" যেটি ফ্রান্সের প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর একটি । কল্পকাহিণীটি এগিয়েছে ফ্রান্সের এক ইন্জিনিয়ার লস ও তার একদল কর্মীবাহিনীকে নিয়ে । লস ও তার দল বিশাল এক রকেট শিপ নিয়ে মঙ্গলে অভিযান চালায় ।

লস মঙ্গলের এক প্রবল পরাক্রমশালী সম্রাটের একনায়তন্ত্রের অবসানের লক্ষ্যে মঙ্গলের অধিবাসীদের নিয়ে একটি বিপ্লব চালানোর চেষ্টা করেন । এই অভ্যুথানে তাকে সহযোগিতা করে স্বয়ং রাজকন্যা এইলিটা যে কিনা টেলিস্কোপ দিয়ে লস কে দেখে প্রেমে পড়েছিলো । কিন্তু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে লস রাজকন্যাকেও খুন করে এবং পৃথিবীতে ফিরে আসে। এরূপ অসংখ্য কল্পকাহিণী লিখা হয়েছে মঙ্গলকে ঘিরে । মেরিনার ও ভাইকিং যান মঙ্গলের ছবি তুলে পাঠানোর পর সকল কল্পনার অবসান ঘটে ।

কারণ মঙ্গল এক মৃত, শুষ্ক, এক প্রাণহীন গ্রহ হিসেবে উঠে আসে ভাইকিং এর ছবিতে । তাই বলে কি মঙ্গলকে ঘিরে সব কল্পনার অবসান ঘটবে ? শুরু হলো আবার তবে এবার বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে । মঙ্গলে মানুয়ের বসতি নিয়ে কল্পবিজ্ঞানীদের কলম আবার চলতে শুরু করল । কিম স্ট্যানলির "রবিনসন্স মারস্ ট্রায়োলজি"তে আমরা দেখতে পাই ২০২৬ সালে রাশিয়া এবং আমেরিকার ১০০ জন ক্রু সহ বিশাল এক স্পেসশিপে করে মঙ্গলে অবতরণ করেছে মানুষ । বসবাস শুরু করেছে মানুষ ।

সেদিন হয়তো সত্যি বেশি দূরে নয় যেদিন মানুষ সত্যি সত্যি বসবাস শুরু করবে মঙ্গলে আর অবসান হবে সকল কল্পনার । তবুও মঙ্গলের বুকে অদ্ভুদ সব মানুষের মুখের মতো ছাপ, অজানা সব পদচিহ্নের ব্যাখ্যা মানুষ যতদিন না বুঝতে পারছে ততদিন মঙ্গলের প্রচীন সভ্যতা আর মঙ্গলবাসী বিজ্ঞানের জনপ্রিয় চরিত্রই রয়ে যাবে ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।