ভুল করেও যদি মনে পড়ে...ভুলে যাওয়া কোন স্মৃতি.. ঘুমহারা রাতে..নীরবে তুমি কেঁদে নিও কিছুক্ষণ...একদিন মুছে যাবে সব আয়োজন...
ফোন নম্বর - ২
ফোন নম্বর - ১
বাড়ি এসে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসে সারাহ। মা জিজ্ঞেস করে অনুষ্ঠানের কথা। দু এক কথায় উত্তর দেয় সে। কিছুক্ষণ এদিক সেদিক কথা বলে মা বলেন, ‘তোর জন্য আরেকটা প্রপোজাল এসেছে। ’
‘হু।
’ খুব একটা আগ্রহ দেখায় না সারাহ।
‘ছেলে আমেরিকায় থাকে। ইঞ্জিনিয়ার। ওখানেই চাকরী করে। ঢাকায় অবশ্য নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে ওদের।
ছেলের নাম আসিফ রায়হান। মা মারা গেছে দুবছর আগে। ওর খালা আছে এখানে। তোর বাবার সাথে চাকুরী করেন। ওর খালার খুব পছন্দ তোকে।
ইশরাত আন্টি, মনে আছে?’
মনে পড়ে না সারাহর। বাবার অফিসের কলিগদের সাথে দেখাই হয় বছরে দু-একবার। পিকনিকে বা কারো ছেলেমেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে। কয়েকজনের বাসায় যাতায়াত আছে, কিন্তু ইশরাত আন্টির না। হলে সে চিনত।
‘ইশরাত আপা ছেলেকে পিকনিকে তোলা তোর ছবি দেখিয়েছে। ছেলের তোকে খুব পছন্দ হয়েছে। এখন তুই যদি বলিস.....’
‘এখন এটা নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না মা। খুব ঘুম পেয়েছে। রাতে কথা বলবো?’
‘আচ্ছা যা।
ছেলে ঢাকা এসেছে কয়েকদিন আগে। তোর সাথে কথা বলতে চেয়েছে। ..’
আর কান দেয় না সারাহ। খুব ক্লান্ত সে। রুমে ঢুকে দরজা ভিড়িয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
চোখে রাজ্যের ঘুম। তবু সামনে ভাসতে থাকে ঐ যুবকটির মুখ। ঘুমের মধ্যেও চলে আসে ছেলেটি।
অদ্ভূত একটা স্বপ্ন দেখে। দেখে, তুষারের সাথে বিয়ে হচ্ছে তার।
সারাহর চোখে-মুখে আনন্দ। কিন্তু তুষারের মুখটা ভাবলেশহীন। মর্গে দেখা মৃতদেহের মতো। কাজী বিয়ে পড়ায়। কিন্তু তুষার আর কবুল শব্দটা বলতে পারে না।
তুষার সারাহকে আংটি পড়াতে যায়। কিন্তু কোন আঙুলেই আংটি পড়াতে পারে না। কড়ে আঙুলেও ঢোকে না আংটি। সারাহ হঠাৎ দেখে, বিয়ের অনুষ্ঠানে কেউ নেই। তারা দুজন শুধু দাঁড়িয়ে।
তুষারের মুখটা সেই মৃত মানুষের মতো। চোখ বন্ধ করে তার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে তুষার। ভয় পেয়ে যায় সারাহ। চিৎকার দিতে চায়। শব্দ বের হয় না মুখ দিয়ে।
ঘুম ভেঙ্গে যায়।
ঘুম ভেঙ্গে নিজের উপরই খানিকটা বিরক্ত হয় সারাহ। এ ধরণের স্বপ্নের কি মানে? সে নিজে নিজেই একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। তুষারের চেহারাটা মনে গেঁথে আছে। সামান্য অপরাধবোধেও ভুগছে, যদিও তার অপরাধবোধে ভোগার কোন কারণ নেই।
তার উপর বাসায় এসেই শুনেছে বিয়ের প্রস্তাবের কথা। কাল ছিল নীলাঞ্জনার বিয়ের অনুষ্ঠান। পুরোটা মিলেই স্বপ্নটা তৈরী হয়েছে।
ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে। অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছে সে।
হাতমুখ ধুয়ে টেবিলে আসে সারাহ। বিকেলের নাস্তাটা তার জন্য রাখা আছে টেবিলে, জানে সে। বাবা অফিস থেকে ফিরেছে টের পায়। নাস্তার বাটি হাতে নিয়ে বাবা-মার রুমে ঢোকে সে।
‘বাবা কেমন আছে?’
‘ভাল।
তোর মার কাছে শুনেছিস না একটা ছেলে সম্পর্কে, ইশরাত আপার ভাগ্নে?’
আবার বিয়ের কথা? বিরক্ত লাগে সারাহর। সে কেমন আছে না আছে, অনুষ্ঠান কেমন হলো না হলো, সে সব নিয়ে কোন কথা নেই, প্রথমেই এই কথা। সে বিরক্ত স্বরেই বলে, ‘দেখ বাবা, একাডেমিক ক্যারিয়ারসহ পুরো বায়োডাটা না দেখে আমি ঐ ছেলের সাথে কথা বলবো না। আর তাছাড়া আমি তো ছেলের ছবিও দেখিনি। ’
‘তোর আর কথা বলা লাগবে না।
ছেলেটা কাল মারা গেছে। ’
সারাহ একটু থমকে যায়- ‘ওহ স্যরি। ’
‘খুবই স্যাড ঘটনা। কাল রাতে এক বন্ধুর বাসায় যাবে বলে বের হয়েছিল। রাতে ফেরেনি।
গাধা ব্যাটা কেয়ারটেকারটাও রাতে কাউকে জানায়নি। সকালে ইশরাত আপাকে ফোন করে জানিয়েছে। ওর বন্ধুবান্ধব কাউকে তো তারা তেমন চেনেন না। দুপুরে টিভিতে খবরে দেখেন যে, ওর লাশ ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে পড়ে আছে। ..’ শুনতে শুনতে বুকের ভেতরটা ধ্বক করে ওঠে সারাহর।
তবে কি..? ‘কাল রাতে কারা যেন ওকে হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে গেছে। সঙ্গে মানিব্যাগ, মোবাইল, ঘড়ি কিছুই পাওয়া যায়নি। ছিনতাই করে মেরে রেখে গেছে না অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে শিওর হওয়া যায়নি এখনও। ’
বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে সারাহর। মুখ ফস্কে বেরিয়ে যায় নামটা ..‘ তুষার!’
‘হ্যা, তুষার ওর ডাক নাম।
তুই জানিস কিভাবে? তোকে ফোন করেছিল নাকি? আমি অবশ্য তোকে না জানিয়েই ইশরাত আপাকে তোর ফোন নম্বর দিয়েছিলাম ছেলেটাকে দেয়ার জন্য। ’
শেষের কথাগুলো আর কানে ঢোকে না সারাহর। সামনেটা ঝাপসা হয়ে যায়, কেন যেন দুচোখ ছাপিয়ে জল বেরিয়ে আসতে চাইছে। অচেনা-অজানা একটা মানুষের জন্য কেন এতটা খারাপ লাগবে তার? উত্তর পায় না নিজের কাছ থেকে। কিন্তু প্রচন্ড একটা কষ্টবোধ তাকে চেপে ধরতে থাকে ভেতর থেকে।
ধীর পায়ে বাবা-মার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে সারাহ।
...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।