আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হযরত ফাতেমা (রাঃ)

রাসূলুলস্নাহ (স.)-এর ঔরসে বিবি খাদিজার গর্ভে ষষ্ঠ ও সর্ব কনিষ্ঠা সন্তান হযরত ফাতেমা জোহরা (রা.) নবুয়্যাতের পাঁচ বছর পূর্বে এবং রাসূলুলস্নাহ (স.)-এর ৩৫ বছর বয়সে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ফাতেমা জোহরাকে আবু তালেবের পুত্র হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় হযরত আলীর বয়স ছিল ২১ বছর ৫ মাস এবং হযরত ফাতেমার বয়স ছিল ১৫ বছর ৫ মাস। একমাত্র ইব্রাহীম ছাড়া রাসূলুলস্নাহ (স.) এর সব কয়টি সন্তানই নবুয়্যত লাভের পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। এক হাদীসের বর্ণনা মতে, কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ৪২ নং আয়াতের তাফসীরে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) হযরত ফাতেমা যাহরাকে হযরত ঈসা (আ.)-এর মাতা হযরত মারইয়ামের প্রশংসার সাথে সম্পর্কযুক্ত করেছেন।

মহানবী ( সা: ) সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেন,আল্লাহর আদেশে আমি ফাতেমার সাথে আলীর বিয়ে দিচ্ছি এবং তাদের বিয়ের মোহরানা বাবত ধার্য করেছি চারশ মিসকাল রৌপ্য। হযরত আলীর তরফ হতে বিবাহের প্রস্তাব আসার পর রাসূলুলস্নাহ (স.) তাঁকে ডেকে জিজ্ঞস করলেন- মোহরানা আদায় করার মতো কোন কিছু তার আছে কি? হযরত আলী উত্তর করলেন- একটি মাত্র ঘোড়া ও একটি বর্ম (যুদ্ধের জন্য ব্যবহূত লোহার পোশাক) রয়েছে। তুমি বর্মটি বিক্রয় করে মোহরানার খরচ সংগ্রহ কর। হযরত আলী বর্মটি ৪৮০ দিরহামের বিনিময়ে হযরত উসমানের নিকট বিক্রয় করলেন। রাসূলুলস্নাহ (স.) অর্থ দিয়ে হযরত বেলালকে বাজারে পাঠালেন যেন কিছু সুগন্ধি কিনে আনা হয়।

বেলাল সুগন্ধি নিয়ে আসলেন। তারপর রাসূলুলস্নাহ (স.) হযরত আলীর সাথে ফাতেমাকে অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে বিয়ে দিলেন। কন্যা বিদায়ের সময় রাসূলুলস্নাহ (স.) একটি খাটিয়া, বিছানা, একটি আটা পিষার চাক্কি এবং পানি তোলার একটি মশক উপঢৌকন দিয়েছিলেন। শেষোক্ত জিনিস দুটি মা ফাতেমার মৃতু্য পর্যন্ত তাঁর সাথে ছিল। বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত হযরত আলীর কোন বাড়ি-ঘর ছিল না।

তিনি রাসূলুলস্নাহ (সঃ)-এর সংসারেই থাকতেন। বিবাহের পর মা ফাতেমাকে নিয়ে বাস করার জন্য যখন বাড়ির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল, তখন হারেস বিন নো'মান আনসারী তাদের বাস করার মতো একটি বাড়ি দিলেন। হযরত ফাতেমাকে নিয়ে হযরত আলী সেই বাড়িতে উঠে আসলেন এবং বসবাস করতে লাগলেন। হযরত আলীর ঔরসে মা ফাতেমার পাঁচজন সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। রাসূলে আকরাম (সা.)-এর কন্যার জানাজায় কয়েকজন পারিবারিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

কিছুসংখ্যক ঐতিহাসিক মনে করেন, হযরত ফাতেমাকে তাঁর নিজ ঘরে সমাহিত করা হয়, যে অংশটি মসজিদে নববীর অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে যেসকল দুঃখ-কষ্ট নবীজী ভোগ করেছেন সে সময়ে তাঁর সাথী ছিলেন হযরত ফাতেমা। ইন্তেকালের সময় মা খাদিজা ( সা: আ: ) প্রচুর ধন সম্পদ রেখে যান। সে সম্পদের কোন প্রভাব বালিকা ফাতেমার উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে নি। মহীয়সী মায়ের মতো তিনিও সকল ধন সম্পদ ইসলাম প্রচারের জন্যে পিতার হাতে তুলে দেন।

ফাতেমা মহানবী (সা এর কন্যা হয়েও স্নেহময়ী মায়ের মতো মহানবীকে ভালোবাসতেন বলেই তাঁর উপাধি হয়েছিল উম্মে আবিহা। হযরত ফাতেমা(রাঃ) একবার দাবী করেন যে, তিনি তাঁর পিতার সম্পদের ওয়ারিছ। কিন্তু এর উত্তরে হযরত আবুবকর(রাঃ) রাসুলুল্লাহর পবিত্র বাণী" আমরা,নবীরা কোন সম্পদ ওয়ারিছদের জন্য রেখে যাই না; আমাদের যা থাকে, তা অবশ্যই খয়রাতের জন্য'। এই হাদিসের সত্যতা সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন করল না। হযরত ফাতেমার(রাঃ) দাবি অগ্রাহ্য করা হল।

ফাতিমা ৬০৫ সালে মক্কায় খাদিজার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত ফাতেমা পৃথিবী ও পরকালের নারী কুলের নেত্রী এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে তিনিই সর্বাগ্রে জান্নাতে প্রবেশ করবেন বলে হাদীসে উল্লেখ আছে । নারী প্রগতির তথাকথিত স্বর্ণযুগেও মূলত নারীর হাতে-পায়ে নিত্য নতুন বেগীর ব্যবস্থাকরা হচ্ছে। প্রগতির চটকদার বুলিতাদেরকে নতু নতুন দুর্গতির ফাঁদে ফেলছে। অধিকাং ক্ষেত্রেই আজও নারীরা পণ্য হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে বিজ্ঞাপন মডেল, সন্দরী প্রতিযোগীতা ইত্যাদি সব নিকৃষ্ট আয়োজন অতীতের মত এখনও বিকৃত রুচির পুরুষদেরই শয়তানী মগজের ফসল।

“চারজন নারী বিশ্বের নারীদের সর্দার, ইমরানের কন্যা মারইয়াম (সা. আ.) [হযরত ঈসা (আ.) এর মাতা], মুযাহিমের কন্যা আসিয়া (সা. আ.) [ফেরাউনের স্ত্রী], খোওয়ালাদের কন্যা খাদিজা (সা. আ.) [মহানবী (স.) এর স্ত্রী] এবং মুহাম্মাদ (স.) এর কন্যা ফাতেমা [সা. আ.], যিনি হচ্ছেন হচ্ছেন এদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট। মুহাম্মাদ (স.) এর জীবনের অন্তিম মুহূর্তে হযরত ফাতেমা (সা. আ.) প্রচন্ড ক্রন্দন করছিলেন। মহানবী (স.) তাঁকে নিজের কাছে ডেকে কিছু বললেন। ঐ কথা শোনার পর হযরত যাহরা (সা. আ.) এর ক্রন্দন আরো তীব্রতা পেল। অতঃপর তিনি (স.) তাকে পূনরায় কিছু বললেন, এতে ফাতেমা (সা. আ.) মুচকি হাসলেন।

পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন : আল্লাহর রাসূল (স.) প্রথমে আমাকে বললেন : ‘এ ব্যাথাতেই আমার মৃত্যু হবে’। তার মুচকি হাসির কারণ জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, তিনি (স.) বলেছিলেন : ‘আমার আহলে বাইতের মধ্য হতে তুমিই হচ্ছো প্রথম ব্যক্তি যে আমার সাথে মিলিত হবে’। হযরত খাদীজার ইন্তেকালের পর পরিবারের দেখা-শোনার জন্য মহানবী (সা.) সাওদা নামক একজন বিধবাকে বিয়ে করেন। শিশু ফাতেমা যাহরাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য সাওদাকে বলা হলে তিনি জবাব দেন, ‘আমি কিভাবে তাঁকে শিক্ষা দিতে পারি যিনি নিজেই একজন পবিত্রা এবং উচ্চ মর্যাদাশীল ব্যক্তিত্ব? তাঁর কাছ থেকে আমার নিজেরই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। ’ফাতেমা (সা) এর মর্যাদা কেবল এজন্যে নয় যে তিনি ছিলেন নবীজীর কন্যা।

বরং তিনি ব্যক্তিগতভাবেই ছিলেন আত্মিক এবং চারিত্রিক গুণে সম্মানীয় ও মর্যাদার অধিকারী। তাঁর এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠার পেছনে কাজ করেছে কোরআনের উন্নত শিক্ষা এবং তাঁর পিতা রাসূলে খোদা (সা) এর হেদায়াতমূলক পথনির্দেশ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০৫ বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.