বিয়ের আট মাসের মাথাতেই নববধূকে ঘরে রেখে তার প্রথম প্রবাসে আগমন। বিমানে উঠবার আগে সেই বধূটির চোখের জল দেখে সে একটি মুহূর্তের জন্যে ভেবেছিল, "দুচ্ছাই, কেন যাচ্ছি অত দূরে? এতো ভালোবাসা রেখে কোথায় মরতে যাই। " কিন্তু কোন উপায় ছিলোনা। ছিলোনা সময়টুকু। শুধু আলিঙ্গন টাকে সম্বল করে আর বধূর কান্নায় ভেজা শার্টের কলার নিয়ে শুরু করল দূর পথের যাত্রা।
সে দূরে আসবে বলে যে কেউ অমন করে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিদিন, প্রতিদিন কাঁদবে এটা সে প্রথম বুঝতে পারে তখন।
পথ চলতে চলতে তার মন-প্রাণ ভরে উঠল অসীম বিরহব্যাথায়। অনেক দূরে একজন তার জন্যে প্রতীক্ষায় বসে আছে, এটা ভেবে ভেবে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইল। কিন্তু পারে কি?
সে যেখানে এসেছে সেখানে চারিদিকে পাহাড়। পাহাড়ের চূড়া ধবল হয়ে থাকে তুষার জমে জমে।
আর তার মন কারে জানি খুঁজে ফিরে ওই ধবল-চূড়াতে সূর্যের প্রতিফলিত আলোর মাঝে। নদীর কুলকুল ধ্বনির মাঝে প্রতিধ্বনিত হয় কার হাসি, সেই পাগল-করা হাসি। রৌদ্রছায়ায় কার নিষ্পাপ মুখটি লুকোচুরি খেলে যায়। প্রবাসীর দু'চোখ খুঁজে ফেরে...কারে? প্রকৃতি লুকিয়েচুরিয়ে তার মনে শুধু ফিস্ফিস করে বলে যায় কার আকুল আহবান, " তুমি কবে আসবে? তাড়াতাড়ি চলে এসো। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারছিনা।
আমার সব কিছু এলোমেলো লাগে। "
সেই চিঠির পরশ তার হাতে লেগে থাকে। অনেক ভালোবাসার সেই স্পর্শ। সেই চিঠিটাকে বুকে চেপে ধরে সে পথ চলে। সকাল থেকে সন্ধ্যে।
হেঁটে চলে নদীর পাড় ধরে। পাহাড়ি ঝরনার ধ্বনি তার মনে কার কণ্ঠের অনুরণন মনে হয়। পাহাড়ের আড়ালে সূর্যটাকে ডুবে যেতে দেখে। কিন্তু তার মনের সূর্যটা অস্ত যায়না। আলোয় ঝিল্মিল করতে থাকে।
তার মনে জীবনানন্দের মতোই সে বলে ওঠে,
"তোমায় ভালোবেসেছি আমি, তাই
শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই,
তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে
চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে
শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে। "
সে ফিরে চলে আলো ঝলমলে যান্ত্রিক শহরের পথ আর গলি ধরে তার থাকবার ছোট্ট জায়গাটিতে। আর মনে মনে বাজতে থাকে, " তুমি কবে আসবে?"...
আজ বধূটির জন্মদিন।
২৫ মার্চ, ২০০৯।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।