এই ব্লগের সব লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
জ্বরের ঘোরে উদ্ভ্রান্তের মতো কাটাচ্ছি কয়েক দিন... রাত দিন সব কেমন যেন অসহ্য মনে হচ্ছে ... একলা থাকার কষ্ট টা ঠিকমতো টের পাওয়া যায় এ সময়েই ... যাই হোক না কেন নিজেকে রান্না করতে হবে, নিজেকেই নিয়ে খেতে হবে, নিজের মাথায় নিজে পানি ঢালতে হবে, সময়মতো নিজে ঔষধ খেতে হবে, আবার অনেক সময় অনেক কিছু ইচ্ছা হলেও বানিয়ে দেয়ার কেউ নাই বলে খাওয়াও যাবে না... জ্বরের কারনে কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না ... পানি পর্যন্ত না ... কেমন জানি বমি বমি লাগছে ... এমনই এক দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল সময়টা ... খুব মনে পড়ছিল এমন অসুখ হলে পরে আম্মুকে কতটাই না জ্বালাতন করতাম ... দেশে থাকতে এমন সময়ে আম্মু লেবুর সরবত বানিয়ে দিতো , সেটা খাব না খাব না করতে করতে খেতাম কিন্তু সেটার পরে ঠিকই খুব ভাল লাগতো ... কথাটা মনে পড়ার পর থেকেই খুব লেবুর সরবত খেতে ইচ্ছা করছিল ...
সেদিন রাতে কথা হচ্ছিলো কোকড়াচুলওয়ালীর আম্মুর সাথে ... কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলো অনেক বেশী জ্বর নাকি ? ... এক কাজ করো - চলে এসো আমাদের বাসায়... বললাম - নাহ থাক, আমার জ্বর , এমন অবস্হায় যদি কোকড়াচুলওয়ালী বেশী কাছে আসে তো ওর জ্বর হতে পারে... পারলে আমাকে কিছু রান্না করে দিয়ে যাও ড্রাই ফুড আর ভাল্লাগছে না খেতে ...
ও জিজ্ঞেস করলো - লেবুর সরবত খেতে এত্তো ইচ্ছা করছে ?
আমি বললাম -- কে বলেছে এ কথা তোমাকে ?
ও বললো -- ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছ দেখলাম ... সারা দুনিয়ার মানুষ তোমার সান্তনা দিচ্ছে , আমাদেরকে একবার ফোন করে বললে কি বানায়ে দিতাম না ? দাড়াও তোমার কোকড়াচুলওয়ালীর কাছে এর বিচার দিচ্ছি ....
আমি বললাম -- আরে করো কি , প্লিজ না ........
আমার কথা তখন কে শোনে, উনি ততক্ষনের কোকড়াচুলওয়ালীকে বলে দিয়েছেন
(তখনো জানি না আমাদের সব কথা নাকি কোকড়াচুলওয়ালী স্পিকারে শুনছিল , এ জন্য সে ঐ সময় আমার সাথে কথাও বলেনি )
পরের দিন দুপুরের দিকে দেখি ওরা বিশাল ব্যাগ হাতে করে আমার দরজায় দু জনেই গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে আছে ... কোন রকমে সেখান থেকে সোফা পর্যন্ত এসে শুয়ে পড়লাম...... ড্রইংরুমের অন্য সোফায় ওরা দু জন বসতে বসতেই কোকড়াচুলওয়ালীর আম্মু জিজ্ঞেস করলো সকালে কিছু খেয়েছি কি না .....
আমি বললাম -- উহু !
ও বললো - তোমার পছন্দের কিছু খাবার রান্না করে আনলাম, একটু গরম করে দেই... খাবার খাওয়ার পরে ঔষধ খেয়ে নিও... এ বলেই উনি চলে গেলেন কিচেনে ...
দেখি কোকড়া চুলওয়ালীও গুটি গুটি পায়ে মায়ের সাথেই কিচেনে চলে গেল
অনেক ইচ্ছা করছিল কোকড়াচুলওয়ালীকে একটু কাছে বসিয়ে আদর করি, ওর ফোলা ফোলা গালে দুটো চুমু দিয়ে চুলের ঝুটিতে দুটো টান দিয়ে রাগিয়ে দেই ... তবে জ্বরের কারনে ওকে কাছে ডাকছিলাম না , সেই সাথে আগের রাতে সে কথা বলেনি এখনো সে আমার সাথে কথা না বলে গম্ভীর হয়ে আছে দেখে খুব বেশী কষ্ট লাগছিল ...
মনটা যেন হঠাৎ করেই অনেক বেশী খারাপ হয়ে গেল ... আর সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম ... ও দিকে মা-মেয়ে কিচেনে কি জানি ঘুটঘাট করেই চলেছে ... মাঝে মাঝে ওখান থেকে শুনছিলাম খসখস, টুং টাং এমন বিভিন্ন রকম আওয়াজ আসছিল,সেই সাথে ওভেনের টাইমার ও টুঊঊউট করে সংকেত দিয়ে বলছে খাবার গরম হয়ে গিয়েছে ...
কিছুক্ষন পরে আমার মাথায় ভিজে একটা ছোট্ট ঠান্ডা হাতের স্পর্শে চোখ খুলে দেখি কোকড়াচুলওয়ালী গাল ফুলিয়ে টলটল চোখে তাকিয়ে আছে, পিছনের ওর আম্মু এক জগ লেবুর সরবত হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে ...
আমাকে চোখ খুলতে দেখে বললো -- নাও তোমার ছোট আম্মুর নিজের হাতে বানানো সরবত খাও , কাল রাত থেকে ওর ঘুম হচ্ছে না তোমাকে নিজের হাতে লেবুর সরবত খাওয়াবে বলে, তোমার খেতে ইচ্ছে করছে বলে রাতে আমার কাছে কতবার যে জিজ্ঞেস করেছে কিভাবে বানায় তার ঠিক নাই ...এখন, আমার থেকে শুধু লেবুটা কেটে নিয়েছে , বাকি সবটুকু নিজে করেছে ... নিজে নিজে পানি ঢেলেছে জগে, লেবু চিপে দিয়েছে, আর এত্তোখানিক চিনি দিয়ে জগে চামচ আর হাত দুটো একসাথে ডুবিয়ে সেগুলো গুলেছে ...
কথাগুলো শুনতে শুনতে মনের অজান্তেই চোখ ভিজে আসছিল, কোকড়াচুলওয়ালীকে কাছে টেনে নিয়ে একটু আদর করতেই আমাকে বকা দিয়ে উঠলো
বললো -- আমাকে কেন আদর করছো, আমার জ্বর আসবে বলে তুমি না বলে আমাকে আদর করবে না ?
আর অমন কথা বলবো না --- কথাটা বলতে বলতে ওরে বুকে টেনে নিতেই ছোট্ট দু হাতে আমাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে কাজল দীঘির মতো গভীর বড় বড় চোখ দুটিতে অভিমানের অশ্রুবন্যা বইয়ে দিলো জানের টুকরা টা .......
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।