আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামহয়্যারইন-এর মাননীয় কর্তৃপক্ষের কাছে ছোট্ট একটি আবেদন এবং আমার তৃতীয় বারের মতো রক্তদান ও একটি কষ্টের কথা...

আই লাভ মাইসেল্ফ
আমার রক্তের গ্রুপ বি+ । খুবই সাধারণ একটি গ্রুপ। দশজন লোকের মধ্যে খোঁজ করলে ৭ জনেরই বি+ পাওয়া যায়। কিন্তু প্রয়োজনের সময় এই গ্রুপের রক্তও পাওয়া যায় না সে কথা আমারচে' আর বেশি কে জানে? সে কথায় পরে আসছি। আজ আমি তৃতীয়বারের মতো রক্তদিলাম আমার বাবার বয়সী এক ব্যক্তিকে।

উনার পিত্তথলির পাথর-এর সমস্যার কারণে অপারেশন থিয়েটারে যেতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই রক্ত প্রয়োজন। এক বন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে রক্ত দিতে গেলাম। সেখানে ডাক্তার থেকে শুরু করে নার্স, স্বাস্থ্যসহকারী সবারই এক প্রশ্ন_ প্যাশান্ট আপনার কী হয়? ২/১ বার বলেছি আমার কেউ না, পরিচিত। পরে দেখলাম তাতে উনারা সন্তুষ্ট না।

পরে এক সুন্দরী নার্সের জবাবে বললাম_ আমার শশুরের বড় ভাইয়ের ছোট শালার শশুর (আদৌ আমার বিয়েই হয়নি)! যাই হোক, প্রতিবারই রক্ত দেয়ার পর মনটা খুব ফ্রেশ লাগে। আমি খুব বেশি বার দিই না রক্ত। গত বছর দু'বার দিয়েছি। আর এবার একবার। আশা আছে আরও দেয়ার।

কারণ, আমি জানি, রক্তের প্রয়োজনিয়তা মানুষকে কতোটা সমস্যা এবং মানসিক যন্ত্রণায় ফেলে। ২. ২০০৪ সালের কথা। আমার মা, পৃথিবীতে সবচেয়ে আপনজন আমার। মায়ের জটিল সমস্যার কারণে ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে মাকে ভর্তি করানো হলো ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল। উন্নত চিকিৎসা সত্বেও মা দিন দিন অসুস্থ্য হতে লাগলেন।

সদাহাস্যময়ী মায়ের মুখে মলিনতা ধরা দেয় না। কিন্তু বুঝতে পারি মায়ের যন্ত্রণার কথা। চোখ ফেটে পানি আসে, মাথা নিচু করে মায়ের পাশে বসে থাকি। হাত বাড়িয়ে মা কাছে ডাকেন। মায়ের বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি।

মা-ও কাঁদেন। তাঁর শত যন্ত্রণার কথা আমাদের বুঝতে দেন না। এক সময় ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নিলেন, আর দেরি করা যায় না। অপারেশন ছাড়া গতি নেই। জটিল অপারেশনের জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেলো।

টাকা-পয়সা থেকে শুরু করে সব কিছুর জন্যই ছোটাছুটি হলো। ঠিক হলো অপারেশন-এর তারিখ। কিন্তু অপারেশনের আগের দিন মা, আমার প্রাণের মায়ের মুখে হঠাৎ মলিনতা দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। তার হাসিমাখা মুখের পরিবর্তে চোখের সামনে ভেসে উঠলো যন্ত্রণায়দায়ক এক মুখ। তিনি চিৎকার করছেন না, ঠিক।

তবে নিচের ঠোঁট কামড়ে চেষ্টা করতে লাগলেন নিজেকে সামলানোর জন্য। বাবাকে খবর দিলাম। বড়পু কান্নাকাটি শুরু করলেন। ডাক্তার-নার্স দৌড়াদৌড়ি শুরু করলেন। মায়ের গাইনী ডাক্তার ঘোষণা দিলো, যে করেই হোক আজই অপারেশন করতে হবে।

জটিল অপারেশন। রক্ত লাগবে কয়েক ব্যাগ। বন্ধু-পরিচিতজনদের খবর দিলাম। কেউ ব্যস্ততা দেখালেন, কেউ আসবেন বলে আসলেন না। কেউ সরাসরি মানা করে দিলেন।

মানসিক যন্ত্রণায় কাতর আমি। কী করি! কী করি!! ৩. আমার মা এখন ভালো আছেন। তিনি যখন আমায় কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু খান, আমি ভাবি, এই তো স্বর্গ! কবির বলা কথা মনে পড়ে_ কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহু দূর? সত্যি কথা। আমি মায়ের আদরের মাঝেই খোঁজে পাই আমার স্বপ্নের স্বর্গ। ৪. সামহয়্যারইন-এর মাননীয় কর্তৃপক্ষ, সামহয়্যারইনব্লগ আমার প্রিয় একটি ব্লগসাইট।

শুধু আমার নয়, অনেকেরই প্রিয়। সামহয়্যার ঘরে-বাইরে প্রচুর অবদান রাখছে। সামাজিক অবদানে সামহয়্যার তো আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে_ যেসব ব্লগার বন্ধু স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে চায় তাদের নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি করে। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, বিষয়টার গুরুত্ব নিয়ে ভেবে দেখবেন।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।