আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাণ্ডার বাড়ী



পাণ্ডার বাড়ীঃ বিশ বছর আগে পাণ্ডার পছন্দনীয় প্রধান খাদ্যের অন্যতম ---তীর বাঁশ বিপুল পরিমাণে মারা যায়। পাণ্ডাকে বাঁচানোর জন্য চীনের এক সুরকার গান লিখে চাঁদা সংগ্রহের অনুরোধ করেন। বিশ বছর পার হলো, উওলুং প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চলে তীর বাঁশ এখন অত্যন্ত বর্ধনশীল। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মূল্যবান ও বিরল প্রাণী পাণ্ডা এই প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চলে আরামে বসবাস করছে। সিছুয়ান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত উওলুং পাণ্ডা প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চল হচ্ছে পাণ্ডার প্রধান বাসস্থানগুলোর অন্যতম বলে সিছুয়ানকে চীনের রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাণ্ডার জন্মস্থান হিসেবে মনে করা হয়।

এখন কেবল সিছুয়ান, শেনসি, কানসু এই কয়েকটি প্রদেশের ঘন বনে বন্য পাণ্ডা দেখা যায়। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা যদি পাণ্ডার সংস্পর্শ চান, তাহলে সবচেয়ে ভাল জায়গা এই সংরক্ষিত অঞ্চলের চীনা পাণ্ডা বাগানে যেতে পারেন। এই সংরক্ষিত অঞ্চলের দায়িত্বশীল ব্যক্তি চাং লিমিং বলেছেন, "আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে পাণ্ডাকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখা , সারা বিশ্বের পাণ্ডাপ্রেমী লোকদের পাণ্ডার সংস্পর্শে আসার সুযোগ সৃষ্টি করা, পর্যটকদের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার জ্ঞান ও পাণ্ডার ইতিহাস জানানো, যাতে তাঁরা পাণ্ডাকে পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি পাণ্ডার মতো এক রকম প্রাচীন প্রাণী অর্থাৎ জ্যান্ত জীবাশ্ম বেঁচে থাকার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারেন। " পাণ্ডার গোলাকার ভঙ্গিমা, প্রীতিকর আচরণ , কালো ও সাদা রঙের উলের দরুণ পাণ্ডা মানুষের সমাদর পেয়েছে। কোনো কোনো পাণ্ডা স্লাইডিং বোর্ড খেলছে, কোনো কোনোটি পাথরের উপর শুয়ে রোদ পোহাছে, কোনো কোনোটি আবার গাছে আরোহণ করছে।

এই চীনা পাণ্ডা বাগানে ১০০'রও বেশি পাণ্ডা আছে। পাণ্ডা বিড়াল নয়, ভল্লুকের মতো। ভল্লুকের বৈশিষ্ট্যগুলো পাণ্ডারও আছে। যেমন পাণ্ডা সহজে গাছের ওপর থেকে পড়ে না, পড়লেও তার মোটা শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। পাণ্ডার খাবার সংগ্রহ করা কর্মীদের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর ।

আগে পাণ্ডা মাংস খেতো। কিন্তু পরে পরিবেশ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাশ পাণ্ডার প্রধান খাদ্যে পরিণত হয়েছে। উওলুং অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য খুব সুন্দর , আবহাওয়া আর্দ্র। বাশ বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত। ফলে দীর্ঘকাল ধরে এই জায়গাটি পাণ্ডা বসবাসের এক ভালো জায়গা।

কিন্তু নিরামিষভোজী হওয়ার পর পাণ্ডার পরিপাক ক্ষমতার উন্নতি হয় নি। শারীরিক শক্তি রক্ষার জন্য সাধারণত পাণ্ডা সবসময় আস্তে আস্তে সব কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রিবেকা হাস পাণ্ডার খাওয়া দাওয়া ও খেলার অনেক ছবি তুলেছেন। প্রথম বার অতি কাছে পাণ্ডাকে দেখে তিনি খুব উত্তেজিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, "আমি এখানে এসে পাণ্ডার সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়ে আমি খুব খুশি।

তারা দেখতে খুব স্বাস্থ্যবান ও লাবণ্যময়। আমি আশা করি, উওলুং অঞ্চলে আরো বেশি পাণ্ডা থাকবে। " চীনা পাণ্ডা বাগানে পাণ্ডার বাচ্চাকে কৃত্রিমভাবে খাওয়ানোর জন্য একটি উন্নত মানের বেবি কেন্দ্র আছে। পর্যটকরা বেবি কেন্দ্রের কাঁচ দিয়ে নবজাত পাণ্ডাকে দেখতে পান। নবজাত পাণ্ডা মাত্র আমাদের হাতের মতো বড়, দুটো চোখ বন্ধ থাকে, গাঁয়ে অল্প কিছু লোম আছে।

তাইওয়ান থেকে আসা মিঃ চাং শিছাং বেবি কেন্দ্রের সামনে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে মনোযোগ সহকারে বাচ্চা পাণ্ডাকে দুধ খাওয়ানোর পুরো প্রক্রিয়া দেখেছেন। তিনি বলেছেন, "আমি এখানে রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাণ্ডা সম্পর্কে অনেক জ্ঞান লাভ করেছি। পথনির্দেশক আমাদেরকে পাণ্ডার ঐতিহাসিক গল্প ও বড় হওয়ার পরিবেশ জানিয়েছেন। এখন আমি জেনেছি যে, পাণ্ডার সংখ্যা সহজে বৃদ্ধি হয় না, কারণ পাণ্ডার মা বাচ্চাকে বড় করার ক্ষেত্রে সক্ষম নয়। " জানা গেছে, বাচ্চা পাণ্ডার মৃত্যু হার খুব উচুঁ।

কোনো কোনো বাচ্চা সহজাত বা জন্মের পরবর্তী রোগের কারণে মারা যায়। মাঝে মাঝে পাণ্ডার মা অযত্নে বাচ্চাকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে পাণ্ডার মা একবার বেশ কয়েকটি বাচ্চা জন্ম দিলেও নিজের হাতে কেবল একটি বাচ্চাকে বড় করতে পারে। সে জন্য এখানকার কর্মীরা রোগ আক্রান্ত বেবি পাণ্ডা বা পাণ্ডার মা খাওয়াতে পারে না এমন বেবি পাণ্ডাকে বেবি কেন্দ্রে নিয়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন, যাতে নবজাত পাণ্ডার বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি করা যায়। পাণ্ডাকে খুবই পছন্দ করেন বলে অধিক থেকে অধিকতর পর্যটক উওলুং অঞ্চলে নিজের সময় ব্যয় করে স্বেচ্ছাসেবক হতে চান।

খাদকের কাপড় পড়া জাপানী কোদামা মিদোরি হচ্ছেন বহু স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে একজন। তিনি বলেছেন, তিনি তিনজন বন্ধুর সঙ্গে এসেছেন। তাঁরা এখানে পাণ্ডার সঙ্গে আনন্দময় এক সপ্তাহ সময় কাটাবেন। তিনি বলেছেন, "প্রতিদিন সকালে আমি পাণ্ডাকে খাবার খাওয়াই। দুপুর ও রাতে পাণ্ডার ঘর পরিষ্কার করি।

সাধারণ সময় পাণ্ডার সঙ্গে এমন কাছে থাকা সম্ভব নয়। সে জন্য আমি খুব আনন্দিত। " কৃত্রিমভাবে বড় হওয়া পাণ্ডা ছাড়া, এখন উওলুং প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চলের ঘন বনে ১০০'রও বেশি বন্য পাণ্ডা আছে। এ সংখ্যা প্রায় সারা বিশ্বের বন্য পাণ্ডার ১০ শতাংশ। আগে সাধারণ পর্যটকরা বন্য পাণ্ডা থাকার অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারত না।

কিছু দিন আগে সংরক্ষিত অঞ্চল বিশ্বের প্রথম বন্য পাণ্ডা পর্যবেক্ষণ প্রকল্প চালু করেছে। তাদের সদবুদ্ধিসম্পন্ন তত্ত্বাবধান ব্যবস্থার দ্বারা স্বল্প দূরত্বে প্রাকৃতিক পরিবেশে পাণ্ডাকে পর্যবেক্ষণ করা যায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.