আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়াচমেন - চিত্রনাট্য লেখক যেখানে দিশেহারা !!!

.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)

গত ৬ মার্চ বিশ্বব্যাপি মুক্তি পেয়েছে অনেক জল্পনা-কল্পনার পর প্রথমবারের মত ওয়াচমেন কমিক সিরিজের উপর ভিত্তি করে তৈরী চলচিত্র 'ওয়াচমেন'। একজনও নামী অভিনেতা বা অভিনেত্রী ছাড়াই ছবিটিকে প্রধানত গ্রাফিক্স দিয়ে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। থ্রি হান্ড্রেড-এর সফল পরিচালক জ্যাক সিন্ডার ছিলেন এ ছবির পরিচালক। ওয়াচমেন কমিক সিরিজটি ১৯৮৫ সনে প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এরপর অনেকবার ছবি বানানোর পরিকল্পনা করা হলেও বাস্তবে রুপ নিতে কেটে গিয়েছে ২৪ বছর।

যদিও মুভিটা ২০০৯ সনে রিলিজ করা হলো, তবে এখনও ঘটনা ১৯৮৫ সনের উপর ভিত্তি করে গঠিত। যুক্তরাষ্ট্র এবং তৎকালিন সোভিয়েন ইউনিয়ন-এর মাঝে কোল্ডওয়ার চলাকালিন সময়ে টানটান উত্তেজনার প্রক্ষাপটে ওয়াচমেন ছবিটি তৈরী। সিনেওয়ার্ল্ড ডাবলিনের ১৭ নাম্বার স্কিনে বসে প্রথম ধাক্কাটা খেলাম ছবি শুরু হবার আগেই। রেটিং দেখানোর সময় দেখালো ১৬; তবে নিচে ছোট করে লেখা অপিলের মাধ্যমে ১৮ থেকে নামিয়ে আনা হয়েছে! তখনই কিছুটা অনুমান করে নিতে পেরেছিলাম কি হতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে পাশ্চাত্যে সেক্সের জন্য যতটা রেটিং দেয়া হয়, তার থেকে অনেক বেশি দেয়া হয় ভায়োলেন্সের জন্য।

অতএব ছবিটায় রক্তারক্তি আর হানাহানি প্রচুর থাকবে বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল অন্য জায়গায়। ঘটনার কোন কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ছবির প্রথম দৃশ্যেই দেখা যায় ওয়াচমেন চরিত্রগুলোর অন্যতম একটি, কমেডিয়ান, মারা যায়। তারপর ছবি চলতে থাকে এলোমেলো ভাবে; অনেকটা যেন হঠাৎ কোন কিছু মাঝ থেকে দেখতে বসলে যে অনুভুতি হয়, তেমনটা।

কিছুক্ষন পর ধীরেধীরে বুঝতে পারি আসলে ওরা একটা গ্রুপ ছিল অতীতে। ফ্ল্যাসব্যাকে একটু একটু করে তাদের ৪০ বছর আগের ঘটনা দেখাতে থাকে। ছবির ঘটনা যখন কিছুটা আয়ত্বে এনেছি তখন হঠাৎ ছবি এমন এক দিকে মোড় নিলো যে মনে হলো এই মাত্র আরেকটা কাহিনী শুরু হলো। অনেকটা ভারতীয় হিন্দী সিরিয়ালের মত! নায়িকা এক সুপার হিরোর সাথে রোম্যান্স করছে কিন্তু কিছুতেই স্যাটিসফাইড হচ্ছে না। সুপার হিরোর যে কিনা রোম্যান্সে চার হাত ব্যবহার করছিল, সেও ব্যার্থ! এরপর নায়িকা ছুটে গেলো আরেকজনের কাছে।

সেখানে মায়ের (৬৭ বছর বয়সী) প্রাক্তন গ্রুপ মেম্বার নাইট ওউল তাকে স্যাটিসফাইড করে দিল! আহারে সুপার হিরো। এসব যখন ঘটছে তখন মনে হচ্ছিল পুরো ঘটনার বাহিরে চলে এসেছি। মূল গল্পে ফিরে যাবার যখন খুবই দরকার ছিল, তখনই আরেক ক্যারেক্টার - মাস্কম্যান রোসেককে বিনা কারনে জেলে ঢোকানো হলো। সেখানে এক বামুন অফিসারের সাথে তার বাকবিতন্ডা এবং তার এক সহকারীর হাত কেটে ফেলার যে দৃশ্য দেখানো হয় সেটার কোন প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা আমি খুঁজে পাইনি। তাছাড়া রোসেক একজন মানুষকে হত্যা করেছিল যে একটা কিশোরী মেয়েকে কেটে টুকরা টুকরা করে কুকুর দিয়ে খাইয়ে দিয়েছিল।

এই গল্প রোসেক জেলের ডাক্তারকে বলেছিল। কিন্তু কেন? মূল ঘটনার সাথে এর সম্পর্ক কোথায়? লেখক নিজে জানলেই হয়! যাইহোক, রোসেকের ঘটনা যখন চলছিল তখন দেখা গেলো নায়িকা এবং নাইট ওউল চরম রোম্যান্সে ব্যাস্ত। তারা সেক্স করতে করতে বিপদে পতিত মানুষদে উদ্ধারে যাচ্ছে, আবার উদ্ধার করার পর আগের ক্রিয়া শুরু করে দিচ্ছে। এই অহেতুক যৌনতার কি প্রয়োজন ছিল? লেখক নিজেও সম্ভবত জানেন না। দর্শক সারির অনেকে তখন বের হয়ে চলে যাচ্ছে।

ছবি দুইঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু গল্পসূত্রের কোন মাথা-মুন্ডু বুঝতে পারছি না। আরো খানিক পরে দেখলাম ক্লাইম্যাক্স এর মতই মনে হচ্ছে, কিন্তু না! সুপার হিরো - ড. ম্যানহাটন ফিরে এসেছেন মার্স থেকে!!! নায়িকাকে তিনি সাথে করে মার্সে নিয়ে যাচ্ছে আর নায়িকার বর্তমান প্রেমি আবেগ আপ্লুত হয়ে তাকিয়ে আছে। এরকম সময়ে চারদিকে তাকিয়ে বের হবার পথ গুলো খুঁজছিলাম; কিন্তু মানুষের ভীড় এত যে সেটাও সম্ভব নয়। তাছাড়া ছবির মিউজিক চমৎকার। গানশুনে সময় কাটাতে মন্দ লাগছিল না।

শেষ পর্যন্ত অ্যামেরিকায় বোমা পড়লো। আমি মনে মনে ভাবলাম এবার ছবি শেষ না করে আর যায় না! কিন্তু দেখা গেলো বোমা সোভিয়েত ইউনিয়ন ফেলেনি, ফেলেছে এ্যামেরিকার নিজের শক্তি ড. ম্যানহাটন! তাও আবার সে নিজেই জানে না কি করে হলো সেটা। চিত্রনাট্য লেখক সম্ভবত তখন ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন। তাই কিছু একটা দিয়ে শেষ করা দরকার। অতএব পরবর্তিতে দেখানো হলো যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ান মিলে গিয়ে এক হয়ে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার শপথ নিচ্ছে (আই উইশ...!)।

তারপর ছবির মূল বাক্য প্রকাশিত হলো - কিলিং অব মিলিয়ন টু সেইভ বিলিয়ন!!! পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ হত্যার প্রয়োজন ছিল। সেটাই কি শেষ পর্যন্ত বোঝানো হলো? অ্যামেরিকা পারেও!!! ছবি যখন শেষ হলো তখন ঘড়িতে প্রায় তিন ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার সংকেত। আদিত্য চোপড়া বা কারান জোহরের হিন্দী মুভিগুলোকেও হার মানালো জ্যাকের ওয়াচমেন। এখন আপনিই ঠিক করুন এই দিশেহারা চিত্রনাট্য লেখকের ছবি আপনি দেখবেন কি দেখবেন না! রোটেন টমাটো ৬৪% পক্ষে ভোট দিয়েছে, তবে সময় যেতে থাকলে এবং আরো ক্রিটিক্স পড়লে হয়তো মুভিটা শেষ পর্যন্ত পঁচেই যাবে। সেই অপেক্ষায় রইলাম।

ধুর, আমার সাড়ে তিন ঘন্টাই মাটি। ভাবছেন বাকি আধ ঘন্টা কোথা থেকে আসলো? ব্লগ লিখতে সময় লাগে না নাকি? ওয়াচমেন নিয়ে রিভিউ লিখে বাকি ৩০ মিনিট নষ্ট হলো!!! ৮ মার্চ ২০০৯ ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.