আমি যেন এক মেঘ হরকরা
(মেজর হুমায়ূন হায়দার ২৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় শহীদ হন। তাঁর স্মৃতি নিযে লেখা)
প্রায় ত্রিশ বছর পর সকালবেলা তোর বাসায় গিয়ে পেলাম না তোকে। তোর ছেলেটা জ্বরের ঘোরে 'বাবা বাবা' বলে প্রলাপ বকছে, ৫ মাস বয়সী ছোট মেয়েটা কোলে কোলে ঘুরছে, তোর জীবনসঙ্গী সাথীকে টিভিতে দেখছি - একটা খবরের জন্য উদভ্রান্তের মতো ঘুরছে বি ডি আর গেটে, আর তোকে বন্ধুরা মিলে আবিস্কার করলাম তোর ঘরে একটা ফটো-ফ্রেমে, সাথীর সাথে কোথায় যেন সবুজ একটা জায়গায় বেড়াতে গেছিস ... এখন থেকে তুই ফ্রেম-বন্দী হয়ে গেলি দোস্ত।
***
ক্লাশ ফাইভ থেকে পাবলো আমার বন্ধু ; এক বছরের সিনিয়র বলে একটু দূরত্ব ছিল প্রথম প্রথম, কিত্তু ওর স্বভাবসুলভ আপন করে নেয়ার গুণে সেটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি - সেভেন-এ একসাথে ক্যাডেটে ঢুকলাম '৭৯ এ, সেই থেকে আজীবনের বন্ধু ...
আমার জীবনের প্রথম প্রকাশিত লেখা একট লিমেরিক, 'পাবলোর ফড়িং', ছাপা হয়েছিল ক্যাডেট কলেজের সাময়িকী 'ডাহুক'- এর পাতায় ১৯৮১ তে । কয়েকমাস আগে ওকে সেকথা মনে করিয়ে দেয়াতে উত্তর দিয়েছিল, "তোর মেয়ে তো এখন তোর চেয়ে ভালো লিখে " ; তার মানে আমার মেয়ের লেখার খবরও রাখতো ও।
পাবলো খুব ভাল ছবি আঁকতো, ওর নেশা ছিলো ছবি আঁকা । ওর বাবা সুজা হায়দার স্যারের কাছে আমাদের সবারই ছবি আঁকার হাতে খড়ি। মনে পড়ছে, আমরা সবাই মিলে একটা গাছের গুঁড়ির চারপাশ ঘিরে বসে আঁকছি, যথারীতি পাবলোর আঁকাটা সবার চে' ভালো হচ্ছে, আর সুয়োগসন্ধানী একজন ওর পিছনে বসে কপি করছে; বুঝতে পারলেও কিছু মনে করতো না হায়দার।
পাবলোকে নিয়ে অনেক মজার আর কৌতুকের স্মৃতি, একটাই মাত্র কষ্টের স্মৃতি, সেটার জন্ম কালো বুধবারে, ২৫ফেব্রুয়ারি, ২০০৯।
বিএমএ লং কোর্সে গেল পাবলো।
আমি আর শরীফ গেলাম চিটাগাং মেডিকেলে। ভাটিয়ারি থেকে পাবলোসহ অন্য বন্ধুরা প্রায়ই আমাদের মেডিকাল কলেজের হোষ্টেলে বেড়াতে আসতো।
পাসিং আউট হয়ে গেলে অনেকদিন দেখা হয়নি পাবলোর সাথে, মেডিকালের শেষ দিকে আবার দেখা হত। একদিন সকালে ডক্টরস হোষ্টেলে এসে ঘুম ভাঙিয়ে সোজা আক্রমন করলো ," কিরে রেজাল্ট খারাপ করছিস ক্যান ? "
অনেক বছর পর ২০০৫ এ ওর সেল নাম্বার পেয়ে, গ্রুপ মেইল এর সাথে যুক্ত হয়ে আবার যোগাযোগ হলো, কথা হলো ; প্রায়ই কথা না হলেও গ্রুপ মেইল - এর সুবাদে সব খবর পেতাম - কোথায় পোস্টিং, মেযে রূপন্তী'র জন্ম - এইসব। শেষ দেখা হয়েছিল বন্ধুদের একটা গেট-টুগেদার-এ, ২০০৬ এর শুরুতে।
সেদিনও সময়ের দূরত্বকে কোন দূরত্ব মনে হয়নি।
গত নভেম্বরে শেষ কথা হয়। আমার লেখা পড়ে ফোন করেছিল সীমান্ত এলাকা থেকে, দীর্ঘসময় কথা হয় সেদিন। ওখানে থাকার সময় নি:সঙ্গ বলে অনলাইনে কাউকে পেলেও সহজে সঙ্গ ছাড়তে চাইতো না। খুব বন্ধুপ্রিয়তা ছিল, জয় করে নিতে পারতো সবাইকে।
শুক্রবার দুপুর নাগাদই পাবলোর খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। আমার পক্ষে সেসব কথা বর্ননা করা সম্ভব না।
***
লেখাটা ভালো হলোনা দোস্ত, তোর ইনবক্সেও লেখাটা যাবে, পাস ওয়ার্ড হারাসনি তো ? লেখা খারাপ হলে মাইন্ড করবি না জানি। কারণ তুইতো মাইন্ড করতেই জানিস না .... যেখানে থাকিস ভালো থাকিস ,শান্তিতে থাকিস...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।