বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত দেশে প্রায় ৪৩ লাখ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই অ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ফোন। স্মার্টর্ফোনের অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যানড্রয়েডের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে বেড়ে গেছে এর ম্যালওয়্যার। ম্যালওয়্যার হলো 'ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যার'-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। প্রোগ্রামটি মূলত ব্যবহৃত হয় স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য।
অ্যান্টিভাইরাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিটডিফেন্ডারের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে ২০১২ সালের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় শেষ ছয় মাসে প্রায় ৯২ শতাংশ অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে পড়েছে। এ তথ্য যেকোনো অ্যানড্রয়েডচালিত স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর জন্য মাথাব্যথার কারণ হবে।
ম্যালওয়্যারের উপস্থিতি
স্মার্টফোনের নিরাপত্তার জন্য যাঁরা অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করেন না, তাঁদের পক্ষে অ্যানড্রয়েড ম্যালওয়্যার চিহ্নিত করা কঠিন। তবে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার না করেও কিছু লক্ষণ দেখে ফোনে ম্যালওয়্যারের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।
চার্জ বেশিক্ষণ না থাকলে : আপনি শুধু কল গ্রহণ করছেন বা দিচ্ছেন, কিন্তু আপনার ব্যাটারির চার্জ বেশিক্ষণ থাকছে না।
এর সম্ভাব্য কারণ, আপনার স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার আছে। কারণ ম্যালওয়্যার আপনার ফোনে অযথা অনেক প্রোগ্রাম চালু রাখে আপনার অজান্তেই।
কল আদান-প্রদানে সমস্যা হলে : ঠিকমতো বুঝতে পারছেন না বা লাইন বারবার কেটে যাচ্ছে। এ সমস্যা এটাই প্রমাণ করে যে আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার আছে।
অতিরিক্ত ফোন বিল : অ্যানড্রয়েড ম্যালওয়্যার আপনার ফোন থেকে এমন কিছু নম্বরে এসএমএস করতে থাকবে, যেসব নম্বরে এসএমএসের চার্জ বেশি।
আর এ কাজ হবে আপনার অজান্তে। আপনি বুঝতে পারবেন ফোন বিল দেখে। তবে কিছু ম্যালওয়্যার মাসে বা সপ্তাহে একটি এসএমএস পাঠিয়ে থাকে। যদি আপনি আনলিমিটেড কোনো প্যাকেজ ব্যবহার করেন, তাহলে নিয়মিত ব্যালান্স চেক করুন আপনার ফোনে কোনো ম্যালওয়্যার আছে কি না বোঝার জন্য।
তথ্য চুরি : ম্যালওয়্যার আপনার ফোন থেকে ডাটা স্থানান্তর করে অন্য এক পক্ষকে, যা বুঝতে পারবেন আপনার ডাটা প্ল্যান বিল থেকে।
আপনার ডাউনলোড বা আপলোড লিস্ট দেখেও বুঝতে পারবেন ফোনটা কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে কি না। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করতে পারেন ডাটা মিটার।
বিপজ্জনক যত ম্যালওয়্যার
স্মার্টফোনের লাখ লাখ ম্যালওয়্যার তৈরি করছে সাইবার অপরাধীরা। তবে এর মধ্যে কিছু ম্যালওয়্যার খুবই বিপজ্জনক। এসব ম্যালওয়্যারের নাম ও কাজ জানা থাকলে সতর্ক থাকা সহজ হবে।
ট্রোজান জিনজার মাস্টার : অ্যানড্রয়েড ২.৩ সংস্করণে এই ম্যালওয়্যার কাজ করে। 'gbfm.png’ ‘game_service_package.db, ‘19225910801.apk' প্রভৃতি নামে যেসব ফাইল থাকে, সেসব ম্যালওয়্যার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এই ভাইরাসগুলো আপনার ফোনের নম্বর, ডিভাইস আইডি এবং আরো অনেক কিছু নিজেদের সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়।
ট্রোজান ফেইকইন্সট : এটি বিভিন্ন অ্যাপ ইনস্টল করানোর মাধ্যমে আপনাকে বিশ্বাস করাবে যে অ্যাপগুলো খুব প্রয়োজনীয়। ম্যালওয়্যারটি ক্রমাগত এর ফাইল সাইজ ও আইকন পরিবর্তন করে থাকে।
বিভিন্ন জনপ্রিয় গেমস অ্যাসফল্ট ৬, বিকিওয়েলডেড, ডুডল জাম্পসহ আরো অন্যান্য গেমসের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়।
ট্রোজান এসএমএস স্যান্ড : প্রায় ৩.৩৪ শতাংশ ডিভাইস এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। প্রিমিয়াম রেটেড নম্বরে বা একই নম্বরে এসএমএস পাঠাতে থাকে এবং আপনার মোবাইল বিল ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
ট্রোজান ফেইকডক : এ ভাইরাসটি অ্যাডওয়্যার, স্পাইওয়্যার বা অন্যান্য ম্যালওয়্যার সার্ভার থেকে ডাউনলোড হয়ে আপনার ফোনের সিস্টেমকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। আর এ থেকে দূরে থাকতে হলে একটি ভালো মানের অ্যান্টিস্পাইওয়্যার ব্যবহার করতে হবে।
ট্রোজান ফেইকলুকআউট : এটি আপনার অ্যানড্রয়েড ডিভাইস থেকে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নিকটতম এফটিপি সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়। এই ট্রোজানটি গুডবাইটস ল্যাব, যা মোবাইল সিকিউরিটি অ্যাপ্লিকেশনের 'Updates' নামে আসে। ট্রাস্টগো ল্যাব একে com.updateszxt নামে গুগল অনলাইন অ্যাপস মার্কেটপ্লেসে পেয়েছে।
মার্কেটপে.এ : এ ম্যালওয়্যারটি আপনার অজান্তেই চালু থাকে এবং একটি চায়নিজ অ্যাপস্টোর থেকে অ্যাপস ডাউনলোড করতে থাকে।
নিরাপদ থাকার উপায়
অ্যানড্রয়েড জিঞ্জারব্রেড ২.৩, আইসক্রিম স্যান্ডউইচ ৪.০ এবং জেলি বিন ৪.১ সংস্করণের স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার আক্রান্তের আশঙ্কা ৮৮ শতাংশ বেশি।
ম্যালওয়্যার থেকে বাঁচার উপায়ও আছে। ম্যালওয়্যার দূর করার জন্য গুগল প্লের অ্যানড্রয়েড অ্যাপস্টোরে অনেক অ্যাপস পাবেন। তবে বুদ্ধিমানের কাজ হবে, কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার আগে প্রতিটির অনুমতি আছে কি না তা আগে ভালো করে চেক করা। যে অ্যাপগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই, সেগুলো ইনস্টল করার আগে অনুমতি চায়। কারণ তারা খুব সাধারণভাবে কিন্তু অতি দক্ষতার সঙ্গে আপনার ডাটা সংগ্রহ করে।
তাই ইনস্টল করার আগে অ্যাপগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোনের ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো দেখে প্রতিরোধ করাটাই সর্বোত্তম হবে। যেমন-
* ম্যালওয়্যার থেকে সুরক্ষার জন্য একটি মোবাইল অ্যান্টিভাইরাস; যেমন- নরটন, ক্যাসপারস্কি বা বিটডিফেন্ডার ইনস্টল করতে হবে। আর অ্যান্টিভাইরাসটি সব সময় আপ-টু-ডেট রাখতে হবে।
* খুব প্রয়োজন ছাড়া ডিভাইস রিস্টার্ট দেবেন না।
আর দিতে হলেও রম প্রস্তুতকারী কম্পানির সক্ষমতা যাচাই করে নিতে হবে।
* অপরিচিত সাইট থেকে অ্যাপ ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন।
* ফাইল ট্রান্সফার বা অ্যাটাচমেন্টের সময় সতর্ক থাকুন।
* ইন্টারনেটে কোথাও বা কোনো লিংকে ক্লিক করার সময়ও সতর্ক থাকুন।
* পাইরেটেড সফটওয়্যার ডাউনলোড করবেন না।
* ফোনে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখুন।
* পাবলিক প্লেসে বা ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদান করবেন না।
* কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে ভালোমতো নির্দেশনাগুলো পড়ে নিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।