( চলছে)
দিন যেতে থাকে...রাত যেতে থাকে। আমি বসে বসে নিজের কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছেলেটার কথা ভাবি। প্রতি রাতে ১২টার পর একবার আমি ওকে মিসকল দেই, আরেকবার ও আমাকে মিসকল দেয়। মিসকল মিসকল খেলায় আমাদের যোগাযোগ হয়। নিরব যোগাযোগ।
একদিন রাতে ও-ই প্রথম মিসকল দেয়। প্রতিদিনের রুটিন ভঙ্গ হয়!...আমি মিসকল দেই তার উত্তরে। ছেলেটা মেসেজ পাঠায়-
- আজকে আমি প্রথম মিসকল দিয়েছি। সো, টুডে আই অ্যাম উইনার, ইউ আর লুজার....................আই লাভ ইউ.................................র ইমোশন্স......হা হা...বাই...
আমি বেশ বোকা মনে যাই......মেসেজের প্রথম অংশটা পড়ে অপার্থিব আনন্দ অনুভব করতে শুরু করেছিলাম...ছেলেটা আমাকে ‘আই লাভ ইউ’ বলেছে!!!.....কিন্তু তার পরের মুহুর্তেই কি প্রেস করে নিচে নামতেই মেসেজের পুরোটা দেখে দমে যাই!...হতাশ হই!...ছেলেটা আমার আবেগ নিয়ে এখন মজা করছে!...আমি কষ্ট পাই...তাও কষ্টটা চেপে রাখি!...তাকে উত্তর দেই,
- আমি দেখতে চাচ্ছিলাম আমি মিসকল না দিলে তুমি দাও কি না, তাই......কাউকে ‘আই লাভ ইউ’ বলাটা খূব আবেগতাড়িত ব্যাপার, কিন্তু যদি বলি ‘আমি তোমার ভালোবাসা চাই’, সেখানে মনে হয় কিছু যুক্তি থাকে, কি বলো?...
সেই রাতে আর কথা হয় না আমাদের। পরদিন আমি ওকে মিসকল দিতে যাই, কিন্তু কল রিসিভড্ হয়ে যায়।
ছেলেটা ফোন ধরেই বলে ওঠে...
- সরি ! সরি ! এরকম আর হবে না!
সাধারণত এভাবে কল ধরে ফেলাটা আমি পছন্দ করি না। কিন্তু লিপনকে কিছু বলতে পারলাম না! ওর সাথে রাগ দেখাবো!...উত্তর দিলাম,
- অ্যাই, আমি কিছু বলসি? এইটা ঠিক যে আমি এভাবে কল ধরাটা পছন্দ করি না, আর কোরো না, ঠিক আছে!...মিসকলের মজাই আলাদা। ফোন সাইলেন্ট থাকলে তো কথাই নাই। মিসকল আসুক যত খুশি, কেউ জানবে না!...
- আহা! বিরক্ত কইরো না! গ্রেট জোশে আছি! বাসায় কেউ নাই। শুধু আমি আর নানু ।
নানু ঘুমায়। অ্যাকশন এক্স এ মুভি দেখছি। রোমান্টিক, হরর, ফান মুভি। তুমি যখন মিসকল দিসো তখন এই মেসেজটা লিখতেসিলাম তাই কল রিসিভ হয়ে গেছে। তুমি আবার টিভি’র সামনে বইসো না।
যাও মেয়ে পড়তে যাও। রেজাল্ট ভালো না হইলে বিয়ে করবো না। হা হা...
- সাউথ আফ্রিকা- ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর খেলা দেখতেসি। এক কাজ করো, মোবাইল থেকে ফোন করে আমাকে সুইট সুইট কথা বলো, আমি শুনি! মনে করো তোমার পাশেই আছি। আর কথা শুনতেসি!!
- বলো কি বলবো! কথা বলতে চাইলে তো সারা রাতই কথা বলা যায়, মাত্র ৬০০ টাকা রিফিল করসি।
কিন্তু বলার মত তো কিছু নাই। আর মেয়েদের সাথে কথা বলতে কেমন জানি লাগে আমার!
- বৌ এর সাথে কথা বলতে কেমন কেমন লাগবে!...হা কপাল! তোমার যা খুশি তাই বলো, আমি তো কেবল শুনবো। কারণ পাশের ঘরে মা জেগে আছে!
ছেলেটা ফোন দেয়। কিন্তু কোনো কথা বলে না। আবার হঠাৎ কেটেও দেয়।
পেছনে গান বাজতে শুনি। কিন্তু ছেলেটা চুপ করে থাকে । আমি তাকে জিজ্ঞেস করি কেন কথা বললো না!
- আজকে তোমার কন্ঠ কেমন যেন অন্যরকম লাগলো! সুইট লাগে নাই। মনে করসি তোমার না। আমি কোনো পাথর এর সাথে কথা বলি না।
- আমি অন্যরকম কন্ঠে কথা বলসি! কি জানি! ভয়ে ভয়ে বলতেসিলাম। যদি মা শুনে ফেলে। তুমি কিন্তু আমার মন খারাপ করায় দিলা! আমার আজ তোমার সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছা করতেসে!
ছেলেটা আবার কল দেয়। কথা হয় এটা-সেটা নিয়ে। ওর সাথে এই প্রথম অনেকটা সময় কথা হলো।
ইনফ্যাক্ট, কথাই হলো প্রথম, সেটাই বলা যায়। এর আগে একদিন ফোন করে শুধু ‘মফিজ আছে?’ বলেই রেখে দিয়েছিলো, সেটাকে কথা বলা যায় না বোধহয়...। কথা শেষ হয়েও যেন হয় না। আমি তাকে আবার মেসেজ পাঠাই, না বলা কথা নিয়ে...
- তুমি জিজ্ঞেস করলে না, নিজের চিন্তা, আনন্দ, দুঃখগুলো শেয়ার করার জন্য আমার কোনো বন্ধু আছে কি না!...উত্তরটা হবে- না। আমি বন্ধু হিসেবে একমাত্র সালমানের নামই বলতে পারি।
না হলে, আমি বন্ধুহীন। যাদেরই আমি বন্ধু ভেবেছি, তারাই আমাকে আর্তনাদের নরকে ছুড়ে ফেলে চলে গেছে। আমাকে কেউ ভালোবাসে না, আমাকে কেউ কেয়ারও করে না!...আমার খুব কান্না পাচ্ছে এই মুহুর্তে, জানি না কেন!
- কি আমার কথা ভালো লেগেছে? আমাকে পছন্দ হয়েছে? কাম’অন ইয়ার, কেন কাঁদতেসো? আমি জানি না, তুমি মেন্টাল পেশেন্ট কি না, কিন্তু তুমি সেরকমই আচরণ করতেসো! আমি জানি না, কি তোমার লিথার্জি! কিন্তু আমি তোমাকে নিশ্চিত করতে পারি যে আমি হয়তো তোমার কেয়ার নেবো, কিন্তু তোমাকে ভালোবাসবো এমন কথা দিতে পারছি না! মনকে খুশি করো আর হাসো...ইইইইই...
- না, আমি মানসিক রোগী না, কিন্তু মাঝে মাঝে আমি দুঃখের ভার সইতে পারি না! তখন হয়তো আমি খুব আবেগী আচরণ করি। তবে এখন কিন্তু আমি আবেগপ্রবণ হয়ে নয়, সিরিয়াসলি তোমাকে প্রশ্ন করছি, ‘আমি যদি আমার এই নিঃসঙ্গ হৃদয়ে তোমাকে জায়গা নিতে বলি, তুমি কি আসবে?’ আমি খুব ডেসপেরেটলি এই একাকিত্ব থেকে মুক্তি চাই, নাহলে...তুমি কি আমাকে মুক্ত করতে পারো না এই অবস্থা থেকে, আমাকে বের করে নিয়ে আসতে পারো না স্বাভাবিক জীবনে?...আমি যে আর নিতে পারছি না!!
- আমি তো বললাম, এখন এসব নিয়ে চিন্তার সময় না! সামনে পরীক্ষা। জীবনে অনেক সময় আছে, তখন দেখা যাবে।
আগে তো দুইজন এসটাবলিশড্ হই। আর তা ছাড়া আমরা কেউ কাউকে এখনো দেখি নাই...... আচ্ছা, বললা না তো আমার কথা ফোনে পছন্দ হইসে কি না!
- এসটাবলিশমেন্ট? ততদিন পর্যন্ত যদি আমি বেঁচে থাকতে পারি! আমি তেমন সম্ভাবনা দেখি না! ... তুমি তো রানিং ট্রেইন এর মতো কথা বলো! যেন সবসময়ই উত্তেজিত!...আচ্ছা, আগের দিনে তো বিয়ের আগে কেউ কাউকে চিনতো না। কিন্তু তারা কি একে অপরকে ভালোবাসতো না? ...এটা পুরোটাই মানিয়ে নেয়ার ব্যাপার, তাই না? আর ভালোবাসা কোনো সময় মানে না। এটা যে কোনো সময়ই আসতে পারে। এটা আমার যুক্তি।
ছেলেটা কোনো উত্তর দেয় না। আমি চিন্তিত হই। আমার কথায় কি বিরক্ত হলো? আমি বুঝে উঠতে পারি না, কীভাবে বুঝবো!
- তুমি কি আমার শেষ মেসেজটা পেয়েছ?...আমি ডেলিভারি রিপোর্ট পাইনি তাই নিশ্চিত হতে পারছি না। যদি রিপ্লাই না পাও তাহলে একটা মিসকল দাও...আজ আমার ঘুম আসছে না।
তারপরও রিপ্লাই আসে না।
আমি আরো চিন্তিত হই। আসলেই বোধহয় অনেক বেশি বিরক্ত হয়েছে। আমার ঘুম হয় না রাতে। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবি। কাঁদি।
নিজের অবস্থানের দোদুল্যমানতার কথা ভেবে। সবকিছু কত দ্রুত পালটে যাচ্ছে, তাই ভাবি। আমি কত দ্রুত পালটে যাচ্ছি!...কী ছিলাম, আর এখন এক মাস না যেতেই কী হয়ে গেছি! চিন্তাগুলো নিজের কাছ থেকে কেমন দূরে সরে যাচ্ছে!...সম্পর্ক নিয়ে, ভালোবাসা নিয়ে কত সিরিয়াস হয়ে গেছি! ছেলেটার কথা ভাবি। আমি কি বেশি অসঙ্গত আচরণ করে ফেলছি? ধৈর্য ধরে থাকলেই কি ওর মনে আমার জন্য কোনো জায়গা হবে? কিংবা ও কি আমার মনে জায়গা নেবে?...অনেক কিছু ভাবি। তারপর মনে হয়, ব্যাপারগুলো আপাতত দূরেই রাখি।
আমার ভালোর জন্য...ছেলেটার সাথে ভালো থাকার জন্য...তাকেও মেসেজ পাঠিয়ে জানাই...এবার হয়তো ছেলেটা একটা জবাব দেবেই, ভাবি!
- ঠিক আছে, পরীক্ষার পর আমরা বিষয়গুলো নিয়ে ভাববো, কথা বলবো। সে পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো। শুভ সকাল!...কাল সারারাত ঘুমাইনি, এসব নিয়ে ভাবলাম। সুইটু, আবার রাতে কথা হবে......
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।