আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুটিপোকার গুটি কথা



আমর এই ভাগ্নেটা যখন জন্ম নেয় তখন আামার খুশিতে চোখে পানি এসে যবার মত ব্যপার হয়েছিলো। কারন তার মাকে আমি সবচাইতে বেশি ভালবাসতাম আমার বোনদের ভেতর। আরো বেশি খুশি হবার কারন হলো আমার বোনটি তখনো ইউনিতে তাই যখন সে চলে যাবে হলে তখন বাচ্চা পালনের দায়িত্ব পরবে তার মা আর আমার উপর সো আমার পুরো দখল থাকবে মাংসের মিষ্ট দলাটির উপর এই ভেবে। অসাধারন অনুভুতি যে মুহুর্তে আমি প্রথম গোলাপি রং এর মাংসের দলাটা আমার নিজের চোখে দেখলাম হসপিটালের দোলনায়। আমি ছোট বলে আমার কোলে দেয়া হচ্ছিল না।

কিছুতেই বাড়ি ফিরতে মন চাইছিল না হাদা ভেল্টুটাকে ফেলে সেদিন। যাই হোক মাস তিনেক পরে হাদাটাকে আমার পূর্ণ আওতায় পেলাম কারন ওর মা ওকে রেখে হলে চলে গেল পড়া শেষ করতে। আমার ফুফু আর আমি দুজন মিলে হাদাটাকে বড় করা শুরু করলাম। আমার বড়টা মেডিকেলে ভর্তির পড়া নিয়ে তখন মহা ব্যস্ত তাই গুটিপোকা টা ১০০% ভাগ আমার আন্ডারে। হা হা হা, স্কুল থেকে ফিরেই ছুটে যেতাম দোলনাটার পাশে ।

ওটা যখন ঘুমিয়ে থাকত তখন ওকে নেল পলিশ দিয়ে দিতাম, চিরনি দিয়ে ছোট ছোট চুল আচড়ে ঝুটি করে দিতাম, ঘুম পাড়াতাম, আরো কতো খেলা ওকে নিয়ে আমার!! এই ফাকে যে কখন ১২/১৩ বছর বয়সে মা বনে গেলাম বুঝতেই পারিনি। বছর খনেক পর আমার আরেক বোন এলো আমাদের সাথে যোগদিতে। ও আসাতে ভাগ্নেটা কিছুটা ভাগা ভাগি হলো। তাতে একটু শুবিধাই হলো আমার কারন গাধাটা যখন কাদতে শুরু করত ভ্যা ভ্যা করে ঘন্টা তিনেক চলত সেই ভ্যা। সো মাঝে মাঝে আমার ওকে তুলে আছার মারতে ইচ্ছে করত।

তাই ছোটটা আসায় আমার বোঝা একটু কমল। এই হাদাটা আমার জীবনের প্রতি মুহুর্ত জুড়ে থাকত সেই সময়। এমন কি বন্ধুদের বাড়ি বা স্কুলের ফাংশানেও তার আমার সাথে যাওয়া চাই!! জিগার আঠা আরকি!!!! আমার বাবা/মা দেশের বাইরে থাকতেন তাই আমি আমার ফুফুর কাছে থাকতাম। গুটিপোকাটা আমার ফুফুর নাতি। গুটি পোকাটার বয়স যখন ৩ আমার বাবা তখন হুট করে দেশে চলে এলেন আর আমাকে তার নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখবেন বলে ঠিক করলেন।

বাবার সাথে দেখা আমার তখন দির্ঘ ৫ বছর পর। ৫ বছর কম সময় নয়। বাবা আমাকে শেষ দেখেছেন বালিকা হিসেবে যখন আমি তাকে ছেরে আসি, উনি ফিরে এসে আমাকে পেলেন কিশোরি হিসেবে। অনেক পরিবর্তন এর মাঝে!! মনে খারাপ করতে লাগলো বাবার কাছে চলে যেতে হবে জেনে পরিচিত সবাইকে ছেড়ে। তবুও যেতে হবে কারন উনি আমার বাবা।

আমার গুটি পোকার মহা মন খারাপ। যখন সে ঘুমিয়ে আমি চুপি চুপি ওকে না বলে চলে গেলাম ওর কান্না না দেখার জন্য। কিন্তু বাবার কাছে গিয়ে লাভ হলো না। বছরের ঐ সময় কোন স্কুল ভর্তি নেয় না। বাবা আমার অনেক চেষ্টা চালালেন বিভিন্ন স্কুলের প্রিন্সপলের কাছে গিয়ে, কিন্তু কোন লাভ হলো না।

অচেনা জায়গায় অপরিচিত মানুষের ভেতর হঠাৎ করে এসে আমার দম বন্ধ হবার দশা তখন। আর আসবার পর গুটিপোকা বা ছোটর কোন খবর পাইনি। আমার ফুফু ও কোন খবর দেননি ওরা কেমন আছে জানিয়ে। তখন ত এত মোবাইল ছিল না। আর আমার বাবার বাড়িতে তখন টেলিফোনও ছিল না।

আমাকে স্কুলে ভর্তি করতে না পেরে বাবার আর কোন উপায় ছিল না আমাকে ফুফুর বাড়িতে ফেরৎ দিয়ে আসা ছাড়া। খুশিতে পাগল হবার মত অবস্থা তখন আমার ফিরে যেতে পেরে। যখন ফুফুর বাড়িতে গিয়ে পৌছলাম তখন বিকেল ৫ টা। গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখলাম আমর ফুফু হাদাটাকে কোলে নিয়ে বসে বারান্দায়। আমকে দেখতেই ফুফু হাউ মাউ করে কেদে উঠল " এত দেরি করে এলি" আমার গা মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকল আশংকায় কি হয়ে গেছে এই ভেবে।

তখনো আমার চোখ পরে নি হাদাটার উপর। ফুফুর কান্না দেখেই আমি ভয়ে সাড়া। প্রথম কথা মনে এল আমার ফুফা কি মারা গেছেন নাকি? বারন্দার দিকে এগোতেই দেখি ফুফা নিমের ডাল দিয়ে দাত মাজতে মাজতে বেড়িয়ে এলেন। তখন মনে হলো তাহলে কি হয়েছে ফুফাত জ্যন্ত! ফুফু গুটি পোকাটাকে আমার চোখের আড়াল করে কোলে নিয়ে আছেন। আমি ওকে কোলে নিতে এগোতেই ফুফু ওকে আরো আড়াল করলেন আর কাদতে থাকলেন এই বলে "তুই এই দৃশ্য সহ্য করতে পারবি না।

কেমন করে তুই ওকে দেখবি, এত দেরি করে এলি কেন" আমি ত কিছুই বুঝিনা। আমার শক্ত মনের ফুফুকে আমি কোন দিন কাদতে দেখিন। ভাবলাম ফুফুর হলোকি মাথা খারাপ ত হয়ে যায়নি? জোড় করেই গুটি পোকাটাকে কোলে নিলাম ফুফুর কোল থেকে। আহ আমার হাত পা বড়ফ হয়ে গেল। একি অবস্থা আমার গোলাপি মাংসের টুকরাটার!!! আমি চলে যাবার পর আমার ছোট্ট ছেলেটা সবখানে আমাকে খোজা শুরু করেছিলো।

কোথাও না পেয়ে মনে মনে কষ্ট চেপেছিল। তাই যা পেত তাই বলত এটা দিয়া মনির জন্য রাখ। ও আমাকে দিয়া মনি ডাকত। ভাত খেতে গেলে দিয়ামনির ভাগেরটা দাও, গোছল করতে গেল দিয়ামনির গোসলটা দাও, চা খেতে গেলে দিয়া মনির টা দাও ....সবটাতে তার দিয়ামনির টা চাই। সেদিন ফুফু উঠানে বসে রান্না করছিলেন আর গুটিপোকাটা উঠানে সাইকেল চালাচ্ছিল।

সব সময় ফুফু আমাকে লবন চাখতে বলতেন। সেদিন গুটিপোকা বললো নানু দাও তোমার লবন চেখে দেই, কারন সে জানে দিয়ামনি নেই তো এটা এখন তার দায়িত্ব। সাইকেল চালিয়ে সে নানুর কাছে চলে এলো। সাইকেলে বসেই সে হাত বাড়িয়ে দিল হাতের তালুতে ঝোল নেবার জন্য। লবন সে চেখে দিল।

তারপর কি মনে করে সে বললো দাও দিয়ামনিরটাও চেখে দেই। বলে ঘার কাত করে হাত বাড়াতেই সাইকেল নিয়ে তাল সামলাতে না পেরে গরম তরকারির কড়াই এর ভেতর পড়ে গেল!! আহ নিমিষেই ঝলসে গেল তার মুখের একটা পাশ ঘার সহ!!! আমি যখন ওকে কোলে নিলাম দেখি থকথকে ঘা আর ফোসকায় আমার গোলাপি মাংসের দলাটাকে চেনা যায়না। আমি কেদে ফেললাম। বার বার নিজেকে দোষ দিতে থাকলাম ... আমি চলে না গেলে আজ এই অবস্থা হতোনা আমার বাচ্চাটার। কেন আমি গেলাম ওটাকে ফেলে!! ওটা আমার সবচাইতে আদরের মানুষ ছিল (এখনও আছে।

খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। এর পর সবসময় নিজেকে অপরাধি মনে হতো ওর মুখরে দাগটার জন্য। ঐ ঘটনার পর সে আমার আরো আদরের হয়ে গেছে। এর পর ভাল চিকিৎসা আর আমার ফুফুর যত্নে হাদাটা সেরে উঠেছে। ইউ কে থেকে আনা এক ক্রম লাগান হতে রোজ রাতে।

এখন সে অনেক বড়। ওর মুখে এখন আর কোন পোড়ার দাগ নেই। সব মিলিয়ে গেছে। এখন সে সু-পুরুষ, রিতিমত সুদর্শন!! আর এখনও হাদা ভেল্টুটা আমার সেই ভালবাসা দখল করে বসে আছে। ভাবতে অবাক লাগে আমার ওড়নার কোনা ধরে ঘুর ঘুর করা পড়ুয়া ছেলেটা এখন এত বড় হয়ে বিদেশ পাড়ি দেয় একা একা যে এক সময় দাবায় আমার সাথে জিতলে খুশিতে লাফাত আর হেড়ে গেলে কেদে ভাসাত!!!! আর আমি ওকে ডাকতাম "বোকা ভেল্টু"!!! সব সময় ভাল থাকিস !!!!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.