আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃষ্টিধারাই আম আর আমড়া গোটা...

মেঘলা আকাশের নিচে, বৃষ্টি হয়ে পরি শেষে...
কাজে যেখানে আমার ডেস্ক এবং চেয়ার তার পেছনে আছে ছোট্ট একটা জানালা। মাঝে মধ্যে চেষ্টা চলতে থাকে জানালাটা খুলে ফেলার। যেহেতু অফিস এর জানালা, বলা চলে যে এক্কেবারে যব্দ করে লাগানো যেন কেউ খুলতে না পারে। আমার "এয়ার কন্ডিসন" মোটেও ভালো লাগেনা। দম আটকে আসে।

যেমনি জলে লাইট তেমনি কৃত্রিম বাতাস। সেইজন্য অজুহাত দিয়ে বার বার বাইরে চলে যাই মুক্ত বাতাস খাওয়ার জন্য। নইলে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারিনা। কোনদিকে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা পার হয়ে যায় বোঝার কুল নেই, যদি না একটু করে পিছনে ফিরে তাকাই। চারপাশে অনেক গুলো জানালা কিন্তু ব্লাইন্ডস দিয়ে অন্ধকার করে রাখা হয়ছে, বিরক্তিকর।

হঠাৎ করে দুপুরের শুরুতেই মেঘ গর্জন শুনতে পেলাম। আমি পিছনে ফিরে জানালার দিকে মুখ করতেই দেখতে পেলাম, মেঘ ভারী মন খারাপ করেছে, সেই জন্য মুখ ভারী করে আছে, আর ইচ্ছে মত চারপাশে অন্ধকার ছড়িয়ে দিচ্ছে। ঠিক আমার মত। আমার সাথে মেঘের কত্য মিল। তবে মেঘ তার অন্ধকার ঘুচাতে বৃষ্টি নামিয়ে এনে দেই কারো মনে আনন্দ তো কারো মনে দুঃখ।

আমারটা? :-) শুরু হয় ঝুমঝুম বৃষ্টি, এবং আমার ভোজনের সময়। আজ ভোজনে তেমন কিছু খাওয়ার পরিকল্পনা যদিও ছিলনা। তারপর ও অনেক কিছু খেয়ে ফেলি। আমি নিত্যদিনের মত আমার থলে, বই, পানি, ছোট্ট একটা তুর্কি স্যান্ডউইচ, আম, আমড়া গোটা, আপেল, ছুরি এবং লবণ নিয়ে বের হয়ে পরলাম ছাদের উদ্দেশ্যে। প্রতিদিন খাওয়া হয় বিভিন্ন রকমের খাবার আজকে ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিনের সংখ্যা বেশি।

বৃষ্টির কারনে ছাদে আর উঠা হলোনা। তবে পারকিং লটে সরঞ্জাম নিয়ে বসে পরলাম। বাতাসে বৃষ্টির ফোঁটা ছুয়ে যাচ্ছিল আমাকে। তুর্কি স্যান্ডউইচ খেয়ে আপেল বের করতে করতে দেখলাম বৃষ্টি আরো বেড়ে গেল। আমি বসে বৃষ্টির আনন্দ দেখছিলাম, একটার পর একটা খাবার মুখে দিচ্ছিলাম।

পাশাপাশি দূর আলাপনে মেতে ছিলাম কিছুক্ষণের জন্য কানাডার বাসিন্দার সাথে। সহজেই মন ভালো হয়ে যায় বৃষ্টির কারনে। সেই জন্য সহজ ভাবে কথা বলতে পারছিলাম। কিছুক্ষন পর ফোন রাখতে হয় কানাডার মানুষের। আমি আমার মত করে আমড়া গোটা আর আম ছিলে ছিলে লবণ দিয়ে খেতে থাকি।

আর পাশাপাশি বই পড়ি রবি ঠাকুরের মনিহার খানা। হঠাৎ করে...অনেক দূর থেকে কানে ভেসে আসছে এম্বুলেন্সের সাইরেন। এই সাইরেন আমাকে নিস্তব্ধ করে দেয়। আহা বৃষ্টি হলেই এখানে অনেকে এক্সিডেন্ট করে। যতবার বৃষ্টি হয় ততবার মনে হয় এই বুঝি এম্বুলেন্সের সাইরেনের আওয়াজ শুরু হবে।

কিছুক্ষন যেতে না যেতেই শুরু হয়ে যায়। মন কেমন যেন করতে থাকে। আর সঙ্গে সঙ্গে আমার ফোন বেজে উঠে। আমি জানি কে করেছে। আমার মা।

আম্মু বলে "মা তুই কোথায়? বাইরে অনেক সাইরেন এর আওয়াজ হচ্ছে আমার মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না তাই তোরা কে কোথায় আছিস সুস্থ আছিস কিনা ফোন করে দেখছি। " আমি হেসে উত্তর দিলাম মাকে, আমি ভালো আছি, আনন্দে আছি। মা হেসে আল্লাহর হাওলা বলে ফোন রেখে দেয়। আমি মাঝে মাঝে মনে করতাম মানুষ কিভাবে বৃষ্টিতে এক্সিডেন্ট করে? বৃষ্টি শুরু হলে চলমান গাড়ির স্পিড কমিয়ে দেয়া উচিৎ। আমি আর বলিনা এই কথা কারন, আমিও বৃষ্টির শীকার হয়েছি।

সেই দিনটা কখনো ভুলতে পারবনা। বৃষ্টি বার বার স্মরণ করিয়ে দেয় সেই মর্মান্তিক দিনটির প্রতিটা মুহুর্ত। আমার আনন্দ মিশে যায় বৃষ্টি থামার সাথে সাথে, কাজে ফিরে যাবার সময় এখন...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.