কিশোর অপরাধ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অন্যতম মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কিশোর জগৎ আজ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। কিশোর স›এাসের সাথে জড়িয়ে পড়ছে আমাদের সমাজের সম্ভাবনাময় কিশোর-তরুণরা। যে বয়সে তাদের লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা, সেই বয়সে তারা হারিয়ে যেতে বসেছে স›এাসের অ্ন্ধকার পথে।
সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে সমাজ ও পরিবারের নৈতিক অব্ক্ষয় কিশোর তরুণদের ভয়ানক পথে টেনে আনছে।
বয়সের কারণে অজ্ঞতা আর জীবন সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা না থাকায় তারা অপরাধ কর্মকা্েন্ড জড়িয়ে পড়ছে।
কিশোর অপরাধী নিয়ে আলোচনা করতে যে প্রসঙ্গটি সামনে চলে আসে তা হলো –’কিশোর’ বা ’শিশু’ বলতে কাদের বোঝায়? আমাদের দেশের বিভিন্ন আইনে এই শব্দযুগলকে বিভ্ন্নিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সাবালকত্ব আইন,১৮৭৫ এর তৃতীয় (৩) ধারা অনুযায়ী ১৮ বছর পূর্ণ হলে নাবালকত্বের অবসান ঘটে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন,১৯৩৯ অনুসারে ২১ বছরের কম পুরুষকে এবং ১৮ বছরের নীচের নারীকে অপ্রাপ্তবয়্স্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। লেবার কোড,২০০৬ এর ধারা মতে যার বয়স ১৬ বছর পূর্ণ হয় নাই তাকে শিশু বা কিশোর হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
দ্ন্ডবিধির ৮২ ধারা অনুসারে নয় (৯) বছরের কম বয়স্ক শিশু কর্তৃক কোন কিছুই অপরাধ নয়। তবে চিলড্রেন অ্য্ক্টা, ১৯৭৪ এর দ্বিতীয় ধারা অনুসারে অনূর্ধ ১৬ বছরের ব্য্িক্তকে কিশোর হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
রাজধানী ঢাকার অপরাধ জগত এখন নিয়›এণ করছে কিশোর অপরাধীরা। পলাতক স›এাসীদের হাল ধরেছে তারা। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এর পরিধি; পরিবর্তিত হ্েচ্ছ আকার অবয়ব।
এসব কিছুর নেপথ্যে যে কারণসমূহ কাজ করছে তাতে শুধুমাএ কিশোর-তরুণরাই দায়ী নয়। বরং, তার জন্য দায়ী :
১) পারিবারিক অনুশাসনের অভাব;
২) শ্ক্ষিা ব্যব্স্থায় নৈতিক প্রশ্ক্ষিণের অভাব;
৩) অতিমাএায় দারিদ্র;
৪) মিডিয়া-স্স্কংৃতির নেতিবাচক প্রভাব;
৫) সামাজিক পরিবেশে স্স্থুতার অভাব; এবং
৬) ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলার প্রভাব।
এছাড়াও, তথ্য-প্রযু্িক্তর বিভ্ন্নি উপকরণ বিশেষ করে ইন্টারনেট-মোবাইলের সহজলভ্যতা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ্ক্ষতিগ্র্স্ত করছে।
বাংলাদেশে তিনটি কিশোর অপরাধী সংশোধন কেন্দ্র রয়েছে, যা ’কিশোর উ্ন্নয়ন কেন্দ্র’ নামে পরিচিত। এর মধ্যে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে নির্মিত কেন্দ্রটি মেয়েদের জন্য; বাকি দু’টি কেন্দ্র যশোর ও গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত।
এছাড়াও গাজীপুরের কাশিমপুরে আরেকটি কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। দেশের বিভ্ন্নি জেল ও সংশোধন কেন্দ্রে আটককৃত কিশোর অপরাধীদের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। ্এবছরের এপ্রিলে ৫৭টি কারাগার ও ৩টি সংশোধন কেন্দ্রে প্রায় ৬৬২ জন কিশোর অপরাধী অন্তরীণ রয়েছে; জানুয়ারী মাসে আটকের সংখ্যা ছিল ৫৫৮। তবে, সংশোধন কেন্দ্রগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে। কেন্দ্রে আটককৃতদের বয়স সীমা ১৮ বছর বলা থাকলেও সেখানে বয়স নিরূপণের কোন ব্যবস্থা নেই।
ফলে মধ্য-বয়সী অনেক কয়েদীকে এখানে রেখে অন্যায়ভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার সুযোগ করে দেওয়া হ্েচ্ছ। উ্েল্লখ্য, সংশোধন কেন্দ্রে কারা থাকবে তা নির্ধারণ করে দেয় থানা বা কোর্ট; এখানে কেন্দ্রের তও¡াবধায়ক ও মেডিকেল অফিসারের কোন ভূমিকা থাকে না। ফলে দুর্নীতি বা অনিয়মের পথে বাধা দেওয়ার কোন উপায় নেই। এসব কিশোর উ্ন্নয়ন কেন্দ্রে অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী আবাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে কিশোর অপরাধীদের অপরের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার আশংকা থেকে যায়।
এছাড়াও কেন্দ্রগুলোতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের প্রকট সংকট রয়েছে।
সমাজ ও পরিবারের নৈতিক অবক্ষয়, অভিভাবকদের সঠিক পরিচর্যার অভাব কোমলমতি কিশোরদের আজ ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করছে। কোমলমতি এই কিশোরদের রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে এখনই আর তার জন্য প্রয়োজন ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও সমাজের সমন্বিত পদক্ষেপ। সন্তানের প্রতি মা-বাবার নিবিড় তও¡াবধান প্রয়োজন। এজন্য পারিবারিক সম্পৃক্ততা, সুশিক্ষা ও আদর্শিক মূল্যবোধ চর্চার ওপর বেশী গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
পারিবারিক সম্পৃক্ততা বলতে শুধু অভিভাবকের মমত্ববোধ নয় বরং সন্তানের কাছাকাছি থাকাকেই বোঝায়। বয়:সন্ধিকালে পরিবারের সাথে ছেলেমেয়েদের সম্পৃক্ততা তাদের ঝুকিপূর্ণ ব্যবহার, আক্রমনাত্বক মনোভাব ও আতœহত্যার প্রবণতা থেকে বিরত রাখে। তাই পিতামাতা ও পরিবারের সদস্যদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ তাদের অপরাধ থেকে বিরত রাখে। কারণ, নিজেদের মাঝে সদ্চ্ছিা জন্ম না নিলে বাধ্য করে মানুষকে কিছু করানো যায় না। রাষ্ট্রীয়ভাবেও আমাদের নানা কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন জানার ও মেনে চলার পরিবেশ রাষ্ট্রকেই করে দিতে হবে। শিক্ষাব্যব¯থা আর শিক্ষাঙ্গনে নৈতিক, মানবিক আর আদর্শিক মূল্যবোধের চর্চার কার্যকরী ব্যবস্থা করে দিতে হবে রাষ্ট্রকেই; কেননা রাষ্ট্র তরুণ সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যেতে পারে না। আমাদের বাংলাদেশকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে চাইলে তার প্রধান নিয়ামক শক্তি এই তরুণ সমাজকে রক্ষার প্রয়োজনীয়তা আমাদেরকেই উপলব্ধি করতে হবে। আমরা যদি সচেতন হয়ে কিশোর অপরাধ বন্ধ করার কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করি তবে আমাদের তরুণ সমাজের অন্ধকারে হারিয়ে যেতে খুব বেশী দেরী নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।